সিলেটটুডে ডেস্ক

২০ মে, ২০২১ ২২:১১

যত্রতত্র মাদ্রাসা স্থাপন বন্ধ করার জন্য আইন তৈরি হচ্ছে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আন্তর্জাতিক ওয়েবিনার

যত্রতত্র মাদ্রাসা স্থাপন বন্ধ করার জন্য আইন তৈরি করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

বৃহস্পতিবার (২০ মে) বিকেল ৩ টায় একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারের তিনি এই মন্তব্য করেন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সভাপতিত্ব করেন ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’র সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির।

‘জামায়াত-হেফাজতের সন্ত্রাসের রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ ঃ সরকার ও নাগরিক সমাজের করণীয়’ বিষয়ে ওয়েবিনারের আলোচনা করা হয়।

এতে সম্মানিত আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ‘জামায়াত-হেফাজতের মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে গণকমিশন’-এর সভাপতি বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, জাতীয় সংসদের ‘আদিবাসী ও সংখ্যালঘু বিষয়ক ককাস’-এর সদস্য জনাব উবায়দুল মুকতাদির চৌধুরী এমপি, ‘জামায়াত-হেফাজতের মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে গণকমিশন’-এর সদস্য মানবাধিকার নেত্রী আরমা দত্ত এমপি, রিজিওনাল এন্টি টেররিস্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউট-এর নির্বাহী পরিচালক মেজর জেনারেল (অবঃ) মোহাম্মদ আলী শিকদার, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ-এর নির্বাহী পরিচালক মুক্তিযোদ্ধা রোকেয়া কবীর, সুইডেন প্রবাসী নির্মূল কমিটির সর্ব ইউরোপীয় শাখার সভাপতি মানবাধিকার নেতা তরুণ কান্তি চৌধুরী, সুইজারল্যান্ড প্রবাসী গণজাগরণ মঞ্চ-এর সংগঠক অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট অমি রহমান পিয়াল, নির্মূল কমিটির বহুভাষিক সাময়িকী ‘জাগরণ’-এর যুগ্ম সম্পাদক অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট লেখক মারুফ রসুল, নির্মূল কমিটির অস্ট্রেলিয়া শাখার সভাপতি ডাঃ একরাম চৌধুরী ও নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক মানবাধিকার নেতা কাজী মুকুল।

প্রধান অতিথির ভাষণে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘দুর্বল চার্জশিটের কারণে অনেক সময় জঙ্গিরা জামিন পেয়ে যাচ্ছে। এবার আমাদের ধারণা ছিল না যে, হেফাজত এরকম নৃশংস ঘটনা ঘটাবে। শুধু ব্রাহ্মণবাড়িয়া নয়, সারাদেশের বিভিন্ন জেলায় তারা এই তাÐব করেছে। বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর বাড়ি ভাঙচুর, নির্যাতন ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। ‘ভিডিও ফুটেজ দেখে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুরকারীদের অধিকাংশকে গ্রেপ্তার করেছি। হাটহাজারীতেও একই রকম ব্যবস্থা নিয়েছি। হেফাজতের নেতাদের বিরুদ্ধে সংসদ সদস্য উবায়দুল মুকতাদির চৌধুরীর মামলাটি অবশ্যই আমরা আমলে নেব। আমি দেখব কেন মামলাটি এখনও আমলে নেওয়া হয়নি।

তিনি বলেন, হেফাজত সম্পর্কে বলতে হয়Ñ এমন কোনও গ্রাম/পাড়া নেই যেখানে মাদ্রাসা নেই। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় স্কুলের চেয়ে মাদ্রাসার সংখ্যা বেশি। এখানে সাতশ’র অধিক মাদ্রাসা আছে। কোনও ভবনে দুই তিনটি মাদ্রাসাও আছে। যত্রতত্র মাদ্রাসা স্থাপন বন্ধ করার জন্য আমরা আইন তৈরি করতে যাচ্ছি।

মন্ত্রী বলেন, হেফাজত দাবি করে তারা কোনও রাজনৈতিক সংগঠন নয়। কিন্তু তারা রাজনৈতিক সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। হেফাজতের কার্যক্রম সবগুলো বেআইনি। যেসব মামলা হয়েছে সেসবের সব আসামীকে গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া আমরা সম্পন্ন করেছি। জামায়াত-শিবিরকে কোণঠাসা করার পর তারা হেফাজতের ব্যানারে চলে এসেছে। সব জায়গায় তাদের কর্মকাণ্ড জামায়াত-শিবিরের কর্মকাণ্ডকে মনে করিয়ে দেয়।

সবশেষে তিনি বলেন, ‘আমরা যেকোনও জঙ্গি কর্মকাÐ, দেশবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে অবশ্যই যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

সূচনা বক্তব্যে নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার বাংলাদেশে জঙ্গীদমনের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য প্রদর্শন করেছে যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও স্বীকৃতি পেয়েছে। কিন্তু জঙ্গিদের রাজনৈতিক দর্শনÑ ধর্মের নামে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূলের ক্ষেত্রে কোনও সমন্বিত উদ্যোগ এখনও দৃশ্যমান নয়। জঙ্গিদের গ্রেপ্তারের পরও অতীতে আমরা লক্ষ্য করেছি চার্জশিটের দুর্বলতার কারণে অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা জামিন পেয়ে জেল থেকে বেরিয়ে আবারও জঙ্গি কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে। সরকারের নীতিনির্ধারকদের মনে রাখতে হবে ধর্মের নামে জঙ্গি মৌলবাদী সন্ত্রাসের একটি রাজনীতি ও দর্শন রয়েছে, বাংলাদেশে যার প্রধান ধারক হচ্ছে জামায়াতে ইসলামী ও হেফাজতে ইসলামী, যাদের পৃষ্ঠপোষক হচ্ছে বিএনপি এবং সমচরিত্রের দলগুলো। দলের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ না করে শুধু কয়েকজন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে সন্ত্রাস নির্মূলন সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, আমাদের দাবি হচ্ছেÑ সংগঠন হিসেবে জামায়াতে ইসলামী ও হেফাজতে ইসলামের বিচার করতে হবে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী বানচাল এবং খেলাফত কায়েম করে বাংলাদেশকে মোল্লা উমরের আফগানিস্তান বানাবার হুমকি প্রদানের জন্য সন্ত্রাসবিরোধী আইনের প্রতিটি ধারা প্রয়োগ করে জামায়াত-হেফাজতের সন্ত্রাসী রাজনীতি নিষিদ্ধ করা যায়। এ বিষয়ে সরকারকে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। একই সঙ্গে মাদ্রাসায় সব রকম রাজনৈতিক কার্যকলাপ নিষিদ্ধ করে তাদের মূলধারা শিক্ষাকাঠামোর সঙ্গে যুক্ত করতে হবে।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত