সিলেটটুডে ডেস্ক

২১ মে, ২০২১ ১২:৩৬

যুক্তরাষ্ট্রের মেডিকেল জার্নালে বঙ্গভ্যাক্সের গবেষণাপত্র

দেশে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে গ্লোব বায়োটেকের আবিষ্কৃত এক ডোজের এমআরএনএ ভ্যাকসিন ‘বঙ্গভ্যাক্স’ এর গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রখ্যাত মেডিকেল জার্নাল ‘ভ্যাকসিন' এ।

বুধবার (১৯) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানিয়েছে গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড কর্তৃপক্ষ।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বঙ্গভ্যাক্স হলো এমআরএনএ প্রযুক্তিতে তৈরি বিশ্বের প্রথম এক ডোজের কার্যকরী ভ্যাকসিন, যা সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের বিরুদ্ধে সফলভাবে মানবকোষ এবং প্রাণীদেহে সুদৃঢ় সুরক্ষা দেখিয়েছে। বিশ্বের বিখ্যাত ভ্যাকসিন আবিষ্কারক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশীয় প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড নিজস্ব প্রযুক্তিতে এ ভ্যাকসিন তৈরি করেছে এবং বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশকে এক অনন্য উচ্চতায় উন্নীত করেছে।

এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে কাজ করার সহজাত সীমাবদ্ধতাগুলো যেমন- কাঁচামালের ব্যবস্থাকরণ, নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে অভিযোজন, গবেষণা তহবিলের অভাব ইত্যাদি সত্ত্বেও ড. কাকন নাগ এবং ড. নাজনীন সুলতানার নেতৃত্বে তরুণ বিজ্ঞানীদের একটি চৌকস দল এ ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেছে। এটির অনন্য নকশা, প্রযুক্তি ও ফর্মুলেশন প্রাণীদেহে কার্যকর ফার্মাকোলোজিক্যাল প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়, প্রি-ক্লিনিক্যাল গবেষণায় দেখা গেছে, এ ভ্যাকসিন মানবকোষ এবং প্রাণীদেহে সহনশীল ও নিরাপদ। ভ্যাকসিনদান পরবর্তী ৭ম দিনে নির্দিষ্ট অ্যান্টিবডি তৈরির প্রমাণ মিলেছে, যা ১৪তম দিনে কাঙিক্ষত মাত্রায় পাওয়া গেছে। ভ্যাকসিনদান পরবর্তী ৯১ দিন পর্যন্ত মেমোরি কোষগুলো পর্যাপ্ত সংখ্যায় পাওয়া গেছে, যা নির্দেশ করে, এই ভ্যাকসিনটি ভাইরাসের বিরুদ্ধে দীর্ঘস্থায়ী সুরক্ষা দিতে সক্ষম।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অন্যান্য এমআরএনএ ভ্যাকসিনের তুলনায় এ ভ্যাকসিনটি সুলভ হবে, তাই স্বল্প ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর জন্য সহজেই ক্রয়যোগ্য হবে। এর মাধ্যমে এই দেশগুলোর প্রায় ৫শ কোটি মানুষের এমআরএনএ ভ্যাকসিন (বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ এবং কার্যকর ভ্যাকসিন প্রযুক্তি) পাওয়ার সুযোগ হবে।

যেহেতু এটি এক ডোজের ভ্যাকসিন, তাই অন্যান্য ভ্যাকসিনের তুলনায় এটি কেনার ব্যয় এবং প্রয়োগ সময় সাশ্রয়ী হবে বলেও দাবি করা হয় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।

গ্লোব বায়োটেকের পক্ষ থেকে দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রথমে ভ্যাকসিনের টার্গেটের সম্পূর্ণ কোডিং সিকুয়েন্স গত বছরের ২৯ জুন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এনসিবিআই (NCBI) ডেটাবেসে এবং গবেষণা নিবন্ধটি ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের অনলাইন প্ল্যাটফর্ম বায়ো-আর্কাইভ (bioRxiv) এ প্রকাশিত হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গত বছরের ১৫ অক্টোবর গ্লোব বায়োটেক কর্তৃক আবিষ্কৃত এমআরএনএ ভ্যাকিনকে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে, যা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়। গত ডিসেম্বরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি বিশেষজ্ঞ দল বঙ্গভ্যাক্সের গবেষণাগার পরিদর্শন করে সব তথ্য উপাত্ত ও প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের নথিপত্র পর্যালোচনা করে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অগ্রগতিতে সহযোগিতা করেন।

এরই পরিক্রমায় ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর ওই গবেষণাগার ও উৎপাদন কেন্দ্র পরিদর্শন সাপেক্ষে গত ২৮ ডিসেম্বর ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য ‘বঙ্গভ্যাক্স’ উৎপাদনের অনুমতি দেন বলে উল্লেখ করা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।

এতে বলা হয়, ভ্যাকসিনটি মানবদেহে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের নৈতিক অনুমোদনের জন্য গত ১৭ জানুয়ারি বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলে (বিএমআরসি) আবেদন করা হয়। ইথিক্যাল কমিটি প্রটোকল পর্যালোচনা করে প্রায় শতাধিক বিষয়ে পর্যবেক্ষণ দিয়ে চিঠি দেন এবং এর সব প্রশ্নের যথাযথ উত্তরসহ সংশোধিত প্রটোকল ও প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্তগত ১৭ ফেব্রুয়ারি বিএমআরসিতে জমা দেওয়া হয়। এরপর বিএমআরসি থেকে আর কোনো প্রকার প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

ভ্যাকসিনের বিশেষ বৈশিষ্ট জানিয়ে গ্লোব বায়োটেক তার বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, এটি +৪° সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এক মাস এবং -২০° সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ছয় মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যাবে। এটি সিন্থেটিক্যালি তৈরি হওয়ায় তা ভাইরাসমুক্ত এবং শতভাগ হালাল। বর্তমানে গ্লোব বায়ায়োটেকের উৎপাদন কেন্দ্রে প্রতিমাসে ১ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন তৈরি করার সক্ষমতা রয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত