সিলেটটুডে ডেস্ক

২১ মে, ২০২১ ১৪:৫৯

সন্তানের সামনে বাবাকে কুপিয়ে হত্যা মামলার আসামি ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত

রাজধানীর পল্লবী এলাকায় সন্তানের সামনে বাবাকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার আসামি মানিক র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ানের (র‍্যাব) সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে। শুক্রবার (২১ মে) ভোরে ইস্টার্ন হাউজিং এলাকায় র‌্যাব-৪ গ্রেপ্তারে অভিযানে গেলে 'বন্দুকযুদ্ধে' নিহত হয় মানিক। সে এ মামলার ৫ নম্বর আসামি।

র‌্যাব-৪ এর উপ-অধিনায়ক মেজর রবিউল হক জানান, পল্লবী থানাধীন ইস্টার্ন হাউসিং এলাকায় সন্ত্রাসীরা অবস্থান করছে- এমন খবর পেয়ে র‌্যাবের একটি দল রাত ৩টার দিকে সেখানে অভিযানে যায়। এ সময় সন্ত্রাসীরা র‌্যাব সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে। আত্মরক্ষার্থে র‌্যাব পাল্টা গুলি ছুঁড়লে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। এ সময় সেখানে একজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। তাকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পরে জানা যায় যে, সে সাহিনুদ্দিন হত্যা মামলার আসামি মানিক। ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় র‌্যাবের দুই সদস্য আহত হয়েছে।

পল্লবী থানার ওসি কাজী ওয়াজেদ আলী বলেন, লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে। মানিকের বিরুদ্ধে পল্লাবী থানায় চাঁদাবাজি, ডাকাতি, মাদকসহ অন্তত ১০টি মামলা রয়েছে। তিন মাস আগে ডাকাতি প্রস্তুতি মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিল মানিক। কিছু দিন আগে সে জামিনে ছাড়া পায়।

গত ১৬ মে বিকেলে মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে পল্লবী ডি ব্লকে একটি গ্যারেজের ভেতর সন্তানের সামনে সাহিনুদ্দিনকে হত্যা করা হয়। জমিজমা নিয়ে বিরোধের জেরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। এ ঘটনায় নিহতের মা আকলিমা বেগম বাদী হয়ে ২০ জনকে আসামি করে পল্লবী থানায় মামলা করেন। মামলার প্রধান আসামি লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এম এ আউয়াল। কুপিয়ে হত্যার দৃশ্য মোবাইল ফোনে ভিডিও করা হয়। সেটি ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

মামলাটি বুধবার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের মিরপুর বিভাগে স্থানান্তর করা হয়েছে। এই মামলায় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে মোট সাতজনকে। এর মধ্যে ঘটনার পরপরই মুরাদ ও দীপককে গ্রেপ্তার করা হয়।

বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের পরিচালক কমান্ডার আল মঈন জানান, সাহিনুদ্দিনকে হত্যার পরই আউয়ালকে ফোনে হত্যার বিষয়টি সুমন নিশ্চিত করে। তাদের মধ্যে কথা হয় ৩০ সেকেন্ড। ঘটনার ৪-৫ দিন আগে আউয়ালের কলাবাগানের অফিসে বসে সন্ত্রাসী তাহের ও সুমনসহ আরও কয়েকজন মিলে সাহিনুদ্দিনকে হত্যার পরিকল্পনা করে। এটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় সুমনকে। ১৬ মে বিকেলে সুমনের নেতৃত্বে ১২-১৪ জন হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেয়। এর বাইরেও আরও কয়েকজন যুক্ত ছিল। এর আগের দিন ১৫ মে সুমন ও বাবুসহ কয়েককজন হত্যার ছক করে। হত্যাকাণ্ডের দুই মাস আগেও সাহিনুদ্দিন ও সুমন গ্রুপের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে পল্লবী থানায়।

র‌্যাব জানায়, পল্লবীর আলীনগর বুড়িরটেকে আউয়ালের একটি আবাসন প্রজেক্ট রয়েছে। সেখানে সাহিনুদ্দিনদের জমি আছে। ওই জমি আউয়াল দখল করতে চেয়েছিলেন। এ নিয়ে দ্বন্দ্ব। আবাসন প্রকল্প দেখভালের জন্য সন্ত্রাসী ব্যবহার করতেন তিনি। জমি দেখে রাখার জন্য সুমনকে প্রতিমাসে তিনি ১০-১২ হাজার টাকা দিতেন। হত্যাকাণ্ডের জন্য মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেন হয়েছে আউয়ালের সঙ্গে।

সাহিনুদ্দিন হত্যা মামলায় বুধবার রাতে কিশোরগঞ্জের ভৈরবের একটি মাজার থেকে এমপি আউয়ালকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-৪। র‌্যাবের পৃথক দল চাঁদপুর থেকে হাসান ও পটুয়াখালী থেকে জহিরুল ইসলাম বাবুকে গ্রেপ্তার করে। এ ছাড়া এই মামলায় বৃহস্পতিবার ভোরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগ ও পল্লবী থেকে সুমন ও রকি তালুকদারকে গ্রেপ্তার করে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত