সিলেটটুডে ডেস্ক

১৮ নভেম্বর, ২০১৫ ১৫:৪৬

দণ্ড কার্যকর এখন সময়ের ব্যাপার : অ্যাটর্নি জেনারেল

মৃত্যুদণ্ড কার্যকর এখন সময়ের ব্যাপার এবং সরকার ইচ্ছে করলে যে কোন সময় দণ্ড কার্যকর করতে পারবে। এর জন্যে রিভিউ খারিজের আদেশের কপি দরকার হবে না বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

মুক্তিযুদ্ধের সময় বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও চট্টগ্রামে নারকীয় হত্যাকাণ্ড চালানো বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আপিল মামলার রায়ে মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকায় সন্তোষ প্রকাশ করে বুধবার (১৮ নভেম্বর) রায় পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

মাহবুবে আলম বলেন, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাওয়া যে ডুপলিকেট সার্টিফিকেট আদালতে দাখিল করেছেন সেটা ২০১২ সালে ইস্যু করা। আদালত তা গ্রহণযোগ্য মনে করেননি। ২০১৩ সালে তিনি যখন সাক্ষ্য দেন তখন এটা উল্লেখ করেননি

তিনি বলেন, পাকিস্তানে আমাদের যিনি হাইকমিশনার আছেন তিনি সেখানে কোনো সত্যায়িতও করেননি। কাউন্টার সাইন করতে হয়, সেটা করা হয়নি। আইনের কাছে এটা গ্রহণযোগ্য নয়।

১৯৬৭ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ছিলেন। ১৯৭১ সালে তিনি কীভাবে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে পরীক্ষা দিলেন সেটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। জানান মাহবুবে আলম।

"সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী তার পাকিস্তানে অবস্থানের বিষয়ে ২০১৩ সালের জুলাইতে নিজেই আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি এসব কিছু উল্লেখ করেননি। সুতরাং এই সার্টিফিকেট শেষ মুহূর্তে বিবেচনায় আনার প্রয়োজন আছে বলে আদালত মনে করেনি। আমরাও একই রকম বক্তব্য দিয়েছি।

“তারচেয়ে বড় কথা হচ্ছে কোনো বিদেশি কাগজ সেই দেশের নোটারি পাবলিকেশন্সের সামনে অথেনটিকেট করতে হয়। ওটা সাইন করেন সেখানে আমাদের দেশের অ্যাম্বাসেডর, হাইকমিশনার অথবা অন্য কোনো দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি।

"পাকিস্তানে আমাদের হাইকমিশনার সেখানে স্বাক্ষর করেননি। সুতরাং এটাকে কাউন্টার সাইন করার প্রশ্ন আসে না। আইনি প্রক্রিয়ায় এটা গ্রহণযোগ্য নয়।

"আজকের কথিত সার্টিফিকেটে লেখা ছিল সেশন- ১৯৭১, এর আগে একজন কথিত অধ্যাপকের একটি সার্টিফিকেইট দেওয়া হয়েছিল। তাতে লেখা ছিল সেশন ১৯৭০-৭১। সেশন কখনও এক বছর হয় না। হয়তো ৭০-৭১ হবে, অথবা ৬৯-৭০ এরকম হবে।

"যেহেতু সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ভর্তি দেখানো হয়েছে ১৯৬৮ সনে, তারা মৌখিকভাবে বলেছেন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ক্রেডিট টান্সফার করা হয়েছে।

"ওই সময় আমি নিজে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একই বিভাগে পড়তাম। সেই সময় আমাদের কোনো সেমিস্টার সিস্টেম ছিলনা। সুতরাং ক্রেডিট ট্রান্সফারের কোনো বিধানও তখন ছিল না। সেমিস্টার সিস্টেম চালুর পর আমাদের দেশে ক্রেডিট ট্রান্সফারের বিষয়টি চালু হয়।

"সুতরাং ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এতো শর্ট টাইমে পাস করার বিষয়টিও নিয়ম বহির্ভূত।"

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‍"আজকে রিভিউ পিটিশন খারিজ হওয়ার মাধ্যমে আইনি পক্রিয়ার পরিসমাপ্তি ঘটল। ফাঁসি কার্যকর করার ব্যাপারে আর কোনো আইনি বাধা নেই। এখন সরকারি সিদ্ধান্তে এবং তারা যদি কোনো ক্ষমা ভিক্ষা চান সেই কথা আলাদা।"

শর্ট অর্ডার লাগবে কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, "আমি আদালতে শর্ট অর্ডার চেয়েছিলাম। তারা বলেছেন, যেহেতু মামলা খারিজ হয়ে গেছে তাই শর্ট অর্ডারের কোনো প্রয়োজন নেই। কোনো রকম স্থগিতাদেশ নেই। কাজেই কোনো রকম শর্ট অর্ডারেরও প্রয়োজন নেই।"

কতদিনের মধ্যে কার্যকর করতে হবে- জানতে চাইলে সরকারের প্রধান আইন কর্মকর্তা বলেন, "এই আইনে নির্দিষ্ট করে কোনো সময় দেওয়া নেই। তাদেরকে হয়তো জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এই প্রক্রিয়াটির কোনো সময়সীমা নেই।"

মুজাহিদের রায়ের বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করছি এজন্য যে তাকে শাস্তি দেওয়া হলো বুদ্ধিজীবী হত্যা মামলায়। ১৯৭১ সালের ১৩-১৪-১৫ ডিসেম্বর যত সংখ্যক বুদ্ধিজীবী হত্যা করা হয়েছে সেটা পৃথিবীর আর কোথাও করা হয়নি। এই বিচার যদি আমরা না পেতাম তাহলে অতৃপ্তি থেকে যেতো। এ রায় আমাদের শক্তি, সান্ত্বনা।

তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রামে সাকা চৌধুরী যা করেছেন তা অভাবনীয় । তাকে চারটি চার্জের জন্য মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে, যা আর কাউকে দেওয়া হয়নি। এটা মুক্তিযুদ্ধের আরেকটি বিজয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত