সিলেটটুডে ডেস্ক

০৩ জুলাই, ২০২১ ১৯:৩২

বিএনপির ‘পি’তে পাকিস্তান: শেখ হাসিনা

দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের নানা কর্মকাণ্ড তুলে ধরে বিএনপিকে তুলাধোনা করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার মতে বিএনপির যে পি, সেটি দিয়ে পাকিস্তান বোঝায়।

শনিবার জাতীয় সংসদে বাজেট অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্য রাখতে গিয়ে ‘গণতন্ত্র’ নিয়ে বিএনপির সংসদ সদস্যদের সমালোচনা জবাব দিয়ে দলটির শাসনামলের কথা স্মরণ করান সংসদ নেতা।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় বিএনপিকে পাকিস্তানপন্থি রাজনৈতিক দল হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, ‘বি..এন..পি, বাংলাদেশ না, পাকিস্তান হ্যাঁ… এই তো বিএনপি? এই হলো তাদের রাজনীতি, এই হলো তাদের গণতন্ত্র।’

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর নানা ঘটনাপ্রবাহে সে সময়ের উপসেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নেন।

তার শাসনামলে ১৯৭৭ সালে ‘হ্যাঁ’-‘না’ ভোট, ১৯৭৮ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, ১৯৭৯ সালের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘জিয়াউর রহমান দিয়েছিলেন কারফিউ গণতন্ত্র। অনেকগুলো দল করার সুযোগ তিনি দিয়েছিলেন এটা ঠিক। কিন্তু সেখানে গণতান্ত্রিক চর্চা ছিল না। নির্বাচনের যে রেজাল্ট তা আগেই নির্দিষ্ট।’

জিয়াউর রহমানের পথেই সেনাপ্রধান থাকা অবস্থায় ক্ষমতা দখল করেন জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তার আমলে ৮৬ সালের জাতীয় নির্বাচনের কথাও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। বলেন, ‘নির্বাচনে ৪৮ ঘণ্টা ভোট আটকে রেখে আওয়ামী লীগকে হারাল।

‘জিয়া, খালেদা জিয়া, এরশাদ সবই একই বৃন্তের কয়েকটি ফুল। তারাও একই কাজ করেছে’-বলেন আওয়ামী লীগ প্রধান।

এই হলো বিএনপি

বঙ্গবন্ধু হত্যা, জিয়াউর রহমানের ক্ষমতার কেন্দ্রে আসা, জিয়ার শাসনামলের নানা ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘১৫ আগস্ট জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যায় যে পরিকল্পনা করা হয়, তার মূল শক্তি ছিল জিয়াউর রহমান। এটা কর্নেল রশিদ এবং ফারুক তাদের বিবিসি ইন্টারভিউতে স্পষ্ট আছে। তিনি ছিলেন মোশতাকের (খোন্দকার মুশতাক আহমেদ) প্রিয় বান্দা।’

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর প্রেসিডেন্ট হন মুশতাক। তিনি জিয়াউর রহমানকে পদোন্নতি দিয়ে সেনাপ্রধান করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘জিয়াউর রহমান উপসেনাপ্রধান। তাকে কেন উপসেনাপ্রধান করা হয়েছিল তার ইতিহাস আমি জানি। বিএনপির অনেকেই হয়ত এখন যারা, তারা জানেন না।’

তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর জিয়াউর রহমান যখন বাংলাদেশে আসেন, তিনি তো বেগম জিয়াকে ঘরে নিতে চাননি। তার আরেকটা ঘটনা ছিল সেটা আমি জানি।

‘জিয়াউর রহমান ছিল কুমিল্লায়। তাকে উপসেনাপ্রধান করে ঢাকায় নিয়ে আসা হয় এবং তার সংসারটা টিকিয়ে দেয়া হয়। সেটা করেছিলেন জাতির পিতা শেখ মুজিব।

‘জিয়া ছিলেন মেজর, তাকে প্রমোশন দিয়ে মেজর জেনারেল করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। সেই জিয়াই ষড়যন্ত্র করে মুশতাককে নিয়ে।’

‘খোন্দকার মুশতাক অবৈধভাবে নিজেকে যখন রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিলো জিয়াউর রহমানকে বানালেন প্রধান সেনাপতি। জিয়া যখন নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দেয়, মাঝে অবশ্য আরেকজন কিছু দিনের জন্য ছিলেন, সায়েম সাহেব। তাকে জিয়া সোজা গিয়ে বলেছিল, প্রথমে চিফ মার্শাল ল অ্যাডমিনিস্ট্রেটর আমাকে ঘোষণা দেন।

‘অস্ত্রের ভয়ে তিনি (বিচারপতি সায়েম) সেটা সই করলেন। এরপর রাষ্ট্রপতি হিসেবে বিদায় দিয়ে জিয়াউর রহমান হলেন রাষ্ট্রপতি। একদিকে সেনাপ্রধান আরেক দিকে রাষ্ট্রপতি। এই দৃষ্টান্ত কে দেখিয়েছিল জানেন? আইয়ুব খান।’

জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সেনাবাহিনীর ভেতরে হত্যাযজ্ঞের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘ক্ষমতায় এসেই আওয়ামী লীগের সব নেতা-কর্মীদের জেলে পুরে। আজকে গুম-খুনের কথা বলেন, বিমানবাহিনীর ৬৬৫ জন অফিসার-কর্মচারী হত্যা হয়েছে জিয়ার হাতে।

‘সেনাবাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা অফিসার, একে একে তাদের হত্যা করেছে। পরিবার-পরিজন লাশও পায়নি। রাতের পর রাত এ হত্যাযজ্ঞ চলেছে। একেক দিন ১০টা করে ফাঁসি, জিয়াউর রহমান সই করে যাচ্ছেন।

‘উর্দি পড়ে ক্ষমতায় এসে আবার রাজনীতিতে নামলেন। সেখানে এসে দল গঠন। আর সেই দলই হলো বিএনপি।’

বিএনপি-জাতীয় পার্টির সদস্যদের বক্তব্যের জবাব

বাজেট অধিবেশনে বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সদস্যরা সরকারের সমালোচনা করে যেসব বক্তব্য রাখেন তারও জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘বক্তৃতায় আমাদের বিএনপির একজন নেতা অনেক সময় অনেক কথাই বলেন। আমি তার কয়েকটি কথার জবাব না দিয়ে পারছি না। হারুন (চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর আসনের সংসদ সদস্য হারুন অর রশীদ) সাহেব বিচারপতি নিয়োগ নিয়ে কথা বলেছিলেন।

‘আমি আগেই বলেছি, জাল সার্টিফিকেট, ছাত্রদল গায়ে নিয়ে আলোচনা করা, ভোট চুরির পরিকল্পনা, এরপরেও নাকি খুব ভালো অবস্থা ছিল।

‘ভোট চুরির সুযোগ সৃষ্টির জন্য প্রধান বিচারপতি কে হবেন তার বয়স বাড়িয়ে দিয়ে সে যাতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হতে পারে সে ব্যবস্থাও নিয়েও নজির সৃষ্টি হয়েছিল।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন ‘তিনি (হারুন) বলেছেন, গণতন্ত্র কী আছে? কার মুখ থেকে শুনব মাননীয় স্পিকার? এমন একটি দল, যে দল সৃষ্টি করেছে একজন সামরিক জান্তা, যে ছিল সেনাপ্রধান।’

বিচার ব্যবস্থা নিয়ে বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদেরের সমালোচনারও জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘বিচার ব্যবস্থা নিয়ে এখানে বেশ কিছু কথা হয়েছে। …বিচারের ব্যাপারে, বিচারপতি নিয়োগের ব্যপারে আমাদের মাননীয় উপনেতা কিছু কথা বলেছেন। এখানে একটু স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। এই বাংলাদেশে বিচারপতি নিয়োগের যে নমুনা ছিল সেটা যদি আপনারা একটু স্মরণ করেন।’

এরশাদ শাসনের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাস্টিস কামাল উদ্দিন হোসেন, তিনি এজলাসে বসে আছেন। চিফ জাস্টিস বসে আছেন। কিন্তু তিনি জানেন না যে তিনি আর নাই। তখন মাননীয় উপনেতা, আপনার বড় ভাই জেনারেল এরশাদ সাহেব ক্ষমতায়। তিনি রাষ্ট্রপতি।

‘রাষ্ট্রপতির এক কলমের খোঁচায় বিচারপতি নাই। প্রধান বিচারপতি এজলাসে বসে আসেন, তিনি কোর্ট চালাবেন ওনাকে বলা হলো আপনি তো নাই। রাতে বেলা আপনাকে বিদায় দেয়া হয়েছে কলমের খোঁচায়। তারপরে একজনকে দিলেন, জাস্টিস মুহিম সাহেব, তিনি আর বসতেও পারেননি।’

বিএনপি শাসনামলের একটি ঘটনা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘একজন বিচারপতি একটি মামলার রায় দেবেন, ছাত্রদলের সেক্রেটারি গলায় হাত দিয়ে বসে সে রায় নিয়ে আলোচনা করছেন। কাজেই বিচার ব্যবস্থার যে কী অবস্থা ছিলো!

‘যদি আমি জিয়া ও এরশাদ আমলের কাহিনী বলতে যাই তাহলে অনেক সময় লেগে যাবে। এটুকু বলে রাখলাম নমুনা হিসেবে’- এই বিষয়ে এখানেই কথা শেষ করেন তিনি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত