সিলেটটুডে ডেস্ক

২১ নভেম্বর, ২০১৫ ১০:১৭

যুদ্ধাপরাধী সাকা-মুজাহিদের সঙ্গে দেখা করতে কারাগারে ম্যাজিস্ট্রেট

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই যুদ্ধাপরাধীর সঙ্গে দেখা করতে শনিবার সকালে কারাগারে প্রবেশ করেছেন এক ম্যাজিস্ট্রেট। তিনি দুই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী ও আলী আহসান মুজাহিদের কাছে তারা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবে কিনা তা জানতে চাইবেন।

এদিকে, শুক্রবারও ম্যাজিস্ট্রেট একইভাবে তাদের কাছে জানতে চেয়েছিলেন তারা প্রাণভিক্ষা চাইবে কিনা, কিন্তু এ দুই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী সরাসরি কোন উত্তর না দিয়ে তাদের আইনজীবিদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত জানাবেন বলে জানিয়েছিলন। জবাবে জানানো হয়েছিল, কারাবিধি অনুযায়ী এখন আর আইনজীবীদের সঙ্গে আপনাদের দেখা করার কোনো সুযোগ নেই।

আইনি সব বিষয়ের নিষ্পত্তি হয়ে যাওয়ায় এখন খালেদা জিয়া সরকারের সাবেক মন্ত্রী (মুজাহিদ) ও মন্ত্রীর পদমর্যাদায় উপদেষ্টার (সাকা চৌধুরী) সামনে কেবল রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার সুযোগই বাকি আছে।

তারা আবেদন না করলে বা রাষ্ট্রপতির অনুকম্পা না পেলে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করবে কারা কর্তৃপক্ষ, যার সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিআইজি প্রিজন গোলাম হায়দার।

শুক্রবার সকালে সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, “কাল ট্রাইব্যুনাল থেকে রায়ের অনুলিপি পাওয়ার পর আমরা তাদের পড়ে শুনিয়েছি। ক্ষমা চাইবেন কিনা জানতে চেয়েছি।

বুধবার বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতের দেওয়া ওই রায়ে বৃহস্পতিবার বিচারকদের স্বাক্ষরের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল হয়ে অনুলিপি পাঠানো হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে।

সিনিয়র জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবির রায়ের কপি নেওয়ার পর আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে রায়ের মূল অংশটি ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করা হয়। রাত সাড়ে ১০টার পর জ্যেষ্ঠ কারা কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে কনডেম সেলে দুই ফাঁসির আসামিকে পড়ে শোনানো হয় ওই রায়।

এর আগে যুদ্ধাপরাধী আব্দুল কাদের মোল্লা ও মো. কামারুজ্জামানের রিভিউ আবেদন এক দিনের মধ্যে শুনানি শেষে খারিজ হয়ে গিয়েছিল। তারা রাষ্ট্রপতির ক্ষমা চাননি।

পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে মুজাহিদ ও সাকা চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করেন তাদের পরিবারের সদস্যরা।

সাক্ষাৎ শেষে কারাগার থেকে বেরিয়ে আসার পর সাকা চৌধুরীর ভাই জামালউদ্দিন কাদের চৌধুরীর কাছে সাংবাদিকরা প্রাণভিক্ষার আবেদনের বিষয়ে জানতে চান।

জবাবে তাচ্ছিল্যের সঙ্গে তিনি বলেন, “কী, মার্সি পিটিশন?”

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সাংবাদিক, শিক্ষকসহ বুদ্ধিজীবী হত্যা এবং সাম্প্রদায়িক হত্যা-নির্যাতনের দায়ে ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই মুজাহিদকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তিনি আপিল করলে চলতি বছরের ১৬ জুন চূড়ান্ত রায়েও ওই সাজা বহাল থাকে।

একাত্তরে চট্টগ্রামের ত্রাস সালাউদ্দিন কাদেরের রায় এসেছিল ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর। ট্রাইব্যুনালের দেওয়া ফাঁসির রায় এ বছর ২৯ জুলাই আপিলের রায়েও বহাল থাকে।

তাদের আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয় একই দিনে, ৩০ সেপ্টেম্বর। এরপর নিয়ম অনুযায়ী ট্রাইব্যুনাল দুজনের মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে এবং কারা কর্তৃপক্ষ ১ অক্টোবর তা দুই ফাঁসির আসামিকে পড়ে শোনায়।

এরপর দুই যুদ্ধাপরাধী ওই রায় পুনর্বিবেচনার জন্য আপিল বিভাগে আবেদন করেন। শুনানি শেষে বুধবার আদালত তা খারিজ করে দেয়

প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা ও আপিল বেঞ্চের অন্য তিন বিচারকের দেওয়া দুই রায়েই বলা হয়, আপিল শুনানির পর দেওয়া রায়ে কোনো ত্রুটি বিচারকদের নজরে আসেনি। সুতরাং দণ্ড পুনর্বিবেচনার কোনো কারণও তারা খুঁজে পাননি।

দণ্ড কার্যকরের আগে দুই যুদ্ধাপরাধীর শেষ আইনি সুযোগ ছিল রিভিউ আবেদন। তা খারিজের মধ্য দিয়ে আইনি লড়াইয়ের পরিসমাপ্তি হয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত