সিলেটটুডে ডেস্ক:

৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৮:১৫

লুঙ্গি পরে অনলাইনে পরীক্ষা দেওয়ায় বহিষ্কার ৩ শিক্ষার্থী

দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের তিন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অনলাইনে পরীক্ষা চলাকালীন লুঙ্গি পরায় তাদের বহিষ্কার করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, করোনা মহামারির ফলে সৃষ্ট সেশনজট নিরসনের লক্ষ্যে একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্তমতে ৪ আগস্ট থেকে অনলাইনে পরীক্ষা গ্রহণ শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অনলাইন পরীক্ষার সময়সূচী অনুযায়ী গত সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে ফুড অ্যান্ড প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের জেনারেল ক্যামিস্ট্রি কোর্সের পরীক্ষা শুরু হয়। ওই পরীক্ষায় পাঁচ শিক্ষার্থীকে জুম থেকে রিমুভ করে বহিষ্কার করা হয়।

অভিযোগ ওঠে, ওই পাঁচজনের মধ্যে তিনজনকে লুঙ্গি পরার অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়েছে। আর দুইজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে পরীক্ষায় অসুদাপায় অবলম্বনের জন্য।

বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখালেখি করলে বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়। প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, পরীক্ষা চলাকালীন ক্যামেরার অ্যাঙ্গেল ঠিক করার সময় শিক্ষক এক ছাত্রকে লুঙ্গি পরা অবস্থায় দেখতে পান। এ সময় তিনি বিষয়টি অনলাইন পরীক্ষার ড্রেসকোড বহির্ভূত বলে ছাত্রকে অবহিত করেন এবং জুম থেকে রিমুভ করে দেন।

এর কিছুক্ষণ পরে আরেক ছাত্রকে জানালা দিয়ে অধিক আলো প্রবেশ করায় জানালার পর্দা টেনে দেওয়ার নির্দেশ দেন। এ সময় ওই ছাত্র জানালার পর্দা টানার জন্য উঠলে শিক্ষক তাকেও লুঙ্গি পরিহিত অবস্থায় দেখতে পান। পরে তাকেও জুম থেকে রিমুভ করে দেওয়া হয়।

বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী বনি আমীন বলেন, পরীক্ষায় শালীনতা বজায় রেখে পোশাক পরার কথা বলা হয়েছিল। আমি লুঙ্গি পড়ে ছিলাম। এ সময় স্যাররা আমাকে লুঙ্গি পবির্তন করে প্যান্ট পড়তে বলেন। তবে আমি শিক্ষকদের সাথে তর্ক করিনি, আমাদের এক বড়ভাই তর্ক করেছিল।

তবে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা জানান, লুঙ্গি পরার কারণে নয়। যারা লুঙ্গি পরিহিত ছিল ওই ছাত্রদের লুঙ্গি পরা যাবে না বিষয়টি অবগত করলেও তারা কর্ণপাত করেননি এবং বারবার বলার পরও তারা বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন। এক পর্যায়ে তারা অনলাইনেই শিক্ষকদের সঙ্গে তর্কে জড়ান। যার কারণে তাদের জুম থেকে রিমুভ করা হয় ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়।

কথা হলে ওই বিভাগের ডিন প্রফেসর ড. সাজ্জাত হোসেন সরকার বলেন, অনলাইনে বেশ কিছু নীতিমালা রয়েছে যার মধ্যে রয়েছে ড্রেসকোড। ওই পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা চলাকালীন লুঙ্গি পরিহিত ছিল। এ সময় তাদের লুঙ্গির পরিবর্তে ড্রেসকোড অনুযায়ী পোশাক পরতে বললে তারা সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের সঙ্গে তর্কে জড়ান। অনলাইন পরীক্ষার নীতিমালা অনুসরণ না করায় এবং খারাপ ব্যবহারের কারণে তাদের জুম থেকে বের করে দেওয়া হয় এবং বহিষ্কার করা হয়। তবে ছাত্ররা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সাংবাদিকদের ওই বিষয়টি ভুল তথ্য দিচ্ছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রফেসর ড. সাইফুর রহমান বলেন, বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীদের সংশ্লিষ্ট ডিনের সঙ্গে কথা বলতে বলা হয়েছে। পরীক্ষার হলে সুপারভাইজার কিংবা ডিনরা যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সেটিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। আমরা শুধু তাদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করি। এরপরও আমি বিষয়টি জানার চেষ্টা করবো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইনে পরীক্ষা গ্রহণ সংক্রান্ত নীতিমালা প্রনয়ণ কমিটির সদস্য ও কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের ডিন প্রফেসর ড. মাহবুব হোসাইন বলেন, আমরা আশা করি যে অনলাইনে পরীক্ষা হলেও এমন পরিবেশ বজায় থাকতে যাতে করে মনে হয় যে তারা ক্যাম্পাসেই সশরীরে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছেন। শিক্ষার্থীরা যদি শিক্ষকদের সঙ্গে তর্কে জড়ান তাহলে শিক্ষকরা তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন।

খবর সমকালের।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত