সিলেটটুডে ডেস্ক:

০৪ জানুয়ারি, ২০২২ ২০:৫৮

অপারেশনের ২০ বছর পর পেটে মিললো কাঁচি

বাচেনা খাতুন। ছবি: যুগান্তর

পিত্তথলির পাথর অপারেশন করানোর সময় পেটের মধ্যে কাঁচি রেখেই সেলাই করে দিয়েছিলেন চিকিৎসক। পেটের ব্যথা নিয়ে অসহ্য যন্ত্রণায় সুস্থ হতে পারেননি বাচেনা খাতুন। বছরের পর বছর ছুটেছেন ডাক্তারের কাছে। অবশেষে ২০ বছর পর বাচেনা খাতুনের পেটে মিললো অপারেশনকালে ডাক্তারের রেখে দেওয়া কাঁচি। বাচেনা খাতুনের পিত্তথলির পাথর অপারেশন হয়েছিল মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার রাজা ক্লিনিকে।

বাচেনা চুয়াডাঙ্গার জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার হাপানিয়া গ্রামের আবদুল হামিদের স্ত্রী।

এদিকে ক্ষতিগ্রস্থ বাচেনা খাতুনকে চিকিৎসা প্রদানসহ ক্ষতিপূরণের দাবি করেছেন স্থানীয়রা।

পরিবারের সদস্যরা জানায়, ২০০২ সালের ২৫ মার্চ পাশ্ববর্তী মেহেরপুরের গাংনীর রাজা ক্লিনিকে পিত্তথলির পাথরের অপারেশন করান বাচেনা খাতুন। অপারেশনের এক সপ্তাহ পর বাচেনা খাতুনকে ছাড়পত্র দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

তারপর থেকেই পেটের তীব্র যন্ত্রণায় বাচেনা খাতুন অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাচেনার পেটের যন্ত্রণা বাড়তেই থাকে। পরে ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করেও কোনও লাভ হয়নি।

পরিবারের সদস্যরা উন্নত চিকিৎসার জন্য বাচেনা খাতুনকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালের নিউরো মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রেজা নাসিম বাচেনা খাতুনকে এক্স-রে করান। রিপোর্টে বাচেনা খাতুনের পেটের মধ্যে ৫ ইঞ্চি লম্বা একটি কাঁচির সন্ধান মেলে।

এমন খবর গ্রামে ছড়িয়ে পড়লে সকাল থেকেই বাচেনা খাতুনকে দেখতে তার বাড়িতে ভিড় জমায় গ্রামবাসী।

বাচেনা খাতুন বলেন, আমি ২০ বছর আগে গাংনীর রাজা ক্লিনিকে পিত্তথলির পাথর অপারেশন করি। কিন্তু আমার পেটের যন্ত্রণা দিন দিন বাড়তেই থাকে। পরে রাজশাহী চিকিৎসা করতে গিয়ে জানতে পারি আমার পেটে কাঁচি আটকে আছে।

চিকিৎসার জন্য আমি ১০ কাঠা জমি বিক্রি করে দিয়েছি। পরে একমাত্র সম্বল দুটি গরুও বিক্রি করেছি। যে ডাক্তাররা আমার অপারেশনের সময় ভুল করেছে আমি ক্ষতিপূরণসহ তাদের বিচার চাই।

বাচেনার স্বামী আব্দুল হামিদ বলেন, আমি একজন প্রতিবন্ধী মানুষ। আমার স্ত্রীকে নিয়ে আমি এখন কী করব জানি না। রাজশাহীতে স্ত্রীর পেটের মধ্যে কাঁচি মিলেছে। যারা আমার স্ত্রীর সঙ্গে এমন করেছে আমি তাদের বিচার চাই।

স্থানীয় ইউপি সদস্য সুজন আলী বলেন, বাচেনার চিকিৎসার জন্য গ্রামের অনেক মানুষ তাকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেছে। ডাক্তারের এমন ভুলে বাচেনার জীবন বিপন্ন হতে চলেছে।

রাজা ক্লিনিকের পরিচালক ডা. পারভিয়াস হোসেন রাজা বলেন, আমি ওই অপারেশনের সময় সহকারী হিসেবে ছিলাম। ভুল হতে পারে এটি অনাকাঙ্খিত ভুল। ওই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার সব দায়িত্ব আমি নিব।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত