সিলেটটুডে ডেস্ক

১০ জানুয়ারি, ২০২২ ১৯:৩৭

দেশের দুঃখী মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করে দিয়ে যাব: প্রধানমন্ত্রী

দেশের যে অগ্রগতিটা এসেছে সেটা ধরে রেখে ‘জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা’ গড়ার লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে দেশবাসীর সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে নিজের সবটুকু দিয়ে কাজ করে যাওয়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন সরকারপ্রধান।

রাজধানীর রামপুরায় সোমবার বিকেলে বাংলাদেশ টেলিভিশনের শহীদ মনিরুল আলম মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে ‘মুক্ত স্বদেশে জাতির পিতা’ নামে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের এটাই আজকের লক্ষ্য যে স্বপ্ন নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিলেন, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা, দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো, বাংলাদেশকে ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়ে তোলা- আজকের দিনে সেই প্রত্যয় ব্যক্ত করছি।

‘ইনশাল্লাহ, যতটুকু পারি জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশের দুঃখী মানুষ, তাদের ভাগ্যটা পরিবর্তন করে দিয়ে যাব। দেশবাসীকে আমি সেই আহ্বানই জানাই, আজকে যে অগ্রগতিটা হয়েছে সেটা ধরে রেখেই যেন আমরা এগিয়ে যেতে পারি, সোনার বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে।’

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা-পরবর্তী যারা এ দেশে ক্ষমতায় এসেছিল, তারা কেউ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কোনো চেষ্টা করেনি বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য একটাই, যে আদর্শের জন্য তিনি দেশ স্বাধীন করেছেন, যে লক্ষ্য নিয়ে তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন, জেল-জুলুম-অত্যাচার বারবার সহ্য করেছেন, নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন যে মানুষগুলোর জন্য, সেই মানুষগুলোর ভাগ্য গড়া এটাই আমাদের লক্ষ্য।’

সেই লক্ষ্য পূরণের পথে দেশের মানুষের সমর্থন পেয়েছেন বলে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে ভোলেননি বঙ্গবন্ধুকন্যা। তিনি বলেন, ‘আমি কৃতজ্ঞতা জানাই বাংলাদেশের জনগণের প্রতি। তারা আমার ওপর আস্থা রেখেছেন। বারবার আমাকে ক্ষমতায় আনায় দেশের মানুষের উন্নয়নের কাজ করার সুযোগ পেয়েছি।’

১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি জাতির পিতার স্বদেশে ফেরার সময়টি স্মরণ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘১০ তারিখ যখন তিনি ফিরে এলেন, তিনি কিন্তু এসে প্রিয় জনতার কাছেই গেলেন। আমাদের কথা না, আমার মায়ের কথাও চিন্তা করেননি, আমাদের কাছেও আসেননি।

‘দাদা-দাদিও তখন এখানে। টুঙ্গিপাড়ায় আমাদের বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়। আমার দাদা-দাদি কোনোমতে ঢাকায় এসে আমার ফুফুর বাড়িতে আশ্রয় নেয়।…কারও কথা না ভেবে তিনি সোজা চলে গেলেন, তার প্রিয় জনতার কাছে। যে জনগণের জন্য তিনি তার জীবন উৎসর্গ করেছেন।’

স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের দিন জাতির পিতার দেয়া ভাষণটিকে ‘একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা’ হিসেবে অভিহিত করেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ ভাষণটি ছিল স্বাধীন রাষ্ট্র কাঠামো কী রকম হবে, স্বাধীন রাষ্ট্র কীভাবে চলবে, স্বাধীন রাষ্ট্র কোন আদর্শে চলবে- সেই আদর্শই তিনি এই ভাষণে দিয়েছিলেন। একটি পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা তার এই ভাষণে আমরা পেয়েছি। স্বাধীন বাংলাদেশ কী আদর্শ নিয়ে গড়ে উঠবে- অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ, ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ, উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে সোনার বাংলা গড়ে তোলার প্রত্যয় তিনি ব্যক্ত করেছিলেন।’

‘বঙ্গবন্ধু মৃত্যুকে ভয় করেননি, বরং জয় করেছিলেন’ বলেও মন্তব্য তার।

স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিন বঙ্গবন্ধুর দেয়া ভাষণের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তার ভাষণে তিনি এটাও বলেছিলেন, যখন তাকে ফাঁসি দেয়ার নির্দেশ হয়, একটি দাবিই তিনি করেছিলেন যে আমাকে তোমরা মেরে ফেলতে পার, কিন্তু আমার লাশটা আমার বাঙালির কাছে পৌঁছে দিও, আমার বাংলার মাটিতে পৌঁছে দিও।’

পাকিস্তানি কারাগারে জাতির পিতার ওপর কী ধরনের অত্যাচার, নির্যাতন হয়েছে তা কখনও বলেননি জাতির পিতা। কিন্তু না বললেও আঁচ করতে পেরেছিলেন বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘হয়তো আমাদের কাছে বলতে পারেননি। রেহানা সবার চেয়ে ছোট ছিল বলে, রেহানা বারবার জিজ্ঞেস করেছে। উত্তরে শুধু একটা কথাই বলেছেন, ওটা আমি বলতে চাই না। তোরা সহ্য করতে পারবি না। এই একটি কথা থেকে বুঝতে পারি পাকিস্তানি কারাগারে কী দুঃসহ যন্ত্রণার মধ্যে তাকে থাকতে হয়েছিল।’

বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন বাঙালি জাতির জন্য খুবই প্রয়োজনীয় ছিল বলেও মনে করেন তার বড় কন্যা। শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ তিনি স্বাধীন করেছিলেন। তার যে স্বপ্ন বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলবেন। মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন। বাংলাদেশকে তিনি স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন। ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ করে তৃণমূলের মানুষগুলি যারা, একেবারে গ্রামের মানুষগুলি, তাদেরই গণতান্ত্রিক অধিকার, ভোটের অধিকার, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন, তাদের ক্ষমতায়ন করতে চেয়েছিলেন।’

এমন পদক্ষেপ যখন নিয়েছেন, তখনই ১৫ আগস্টের আঘাত এলো বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এ আঘাত শুধু একজন রাষ্ট্রপতিকে হত্যা করা না, এ আঘাতটা ছিল একটা স্বাধীন দেশের আদর্শকে হত্যা করা, চেতনাকে হত্যা করা। সেটা আপনারা দেখতে পাবেন, ১৫ আগস্টের পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল, তারা এভাবে রাষ্ট্রটা চালিয়েছিল।’

বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের সুবর্ণজয়ন্তীর আয়োজন টুঙ্গিপাড়ায় করার কথা থাকলেও করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের কারণে সেটা সম্ভব হয়নি বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে বাবা ও মাকে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানার লেখা দুটি কবিতা আবৃত্তি করেন আসাদুজ্জামান নূর।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত