সিলেটটুডে ডেস্ক:

২৬ মে, ২০২২ ২০:০৬

ঠিকানা পরিবর্তন করে ভোটার হন হুজি নেতা আব্দুল

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় বোমা পুঁতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা এবং রমনার বটমূলে বোমা হামলা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মুফতি আব্দুল হাইকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। গত বুধবার রাতে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় তাকে। তিনি জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি) প্রতিষ্ঠাতা আমির।

গ্রেপ্তার এড়াতে কুমিল্লার গৌরিপুরে শ্বশুরের দোকানের কর্মচারীর কাজ নেন তিনি। গৌরিপুর বাজারে তার শ্বশুরের কেরোসিন ও সয়াবিন তেলের ডিলারশিপের ব্যবসা ছিল। তিন বছর কাজ করেন সেই দোকানে।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিকালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, বিভিন্ন জঙ্গিবাদী ঘটনার সঙ্গে হুজির জড়িত থাকার বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে ২০০৬ সালের পর আব্দুল হাই আত্মগোপনে চলে যান। তার পরিবার তখনও নারায়ণগঞ্জেই বসবাস করত। কিন্তু তিনি কুমিল্লার গৌরিপুরে তার শ্বশুর বাড়িতে আত্মগোপন করেন। দোকানেই রাত কাটাতেন। এভাবে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ছিলেন সেখানে।

মাঝেমধ্যে নারায়ণগঞ্জে যাতায়াত ছিল। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার দাউদকান্দির নয়ানগরে। পরবর্তীকালে কৌশলে নিজের এবং পরিবারের সব সদস্যের ঠিকানা পরিবর্তন করে নারায়ণগঞ্জে ভোটার হয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। এলাকাবাসী যেন তার পরিচয় জানতে না পারে সেজন্য ঘর থেকে খুব কম বের হতেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়াতে তার বর্তমান ঠিকানার বাসাটি লোকজনের কাছে তার বড় ছেলের বাসা হিসেবেই পরিচিত করান। বুধবার রাতে র‌্যাবের-২ ওই বাসা থেকেই গ্রেপ্তার করে তাকে।

র‌্যাবের জানিয়েছে, আব্দুল হাইয়ের বিরুদ্ধে সাতটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। এরমধ্যে দুটি মৃত্যুদণ্ড এবং দুটি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। তিনি ১৩টি মামলার আসমি।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০০০ সালের ২০ জুলাই গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশের পাশে ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রাখা হয়। শেখ লুৎফর রহমান মহাবিদ্যালয়ের উত্তর পাশের একটি চায়ের দোকানের পেছনে এ বোমা বিস্ফোরণের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। ওই মামলায় আব্দুল হাইসহ ১০ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং চারজনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। এছাড়া ২০০১ সালে রাজধানীর রমনার বটমূলে ছায়ানটের বৈশাখ বরণের অনুষ্ঠানে বোমা হামলা চালিয়েছিল জঙ্গিরা। ওই হামলায় ১০ জন নিহত হন। ওই ঘটনায় রমনা থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। রমনার বটমূলে বোমা হামলায় নিহত হওয়ার ঘটনার মামলায় ২০১৪ সালের ২৩ জুন আব্দুল হাইসহ আটজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহত এবং তিন শতাধিক গুরুতর আহত হন। এ মামলায় ২০১৮ সালে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইবুন্যাল ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং আব্দুল হাইসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।

র‌্যাবের আরও জানিয়েছে, আব্দুল হাই নারায়ণগঞ্জের দেওভোগ মাদ্রাসায় ১৯৭২ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। ১৯৮১ সালে অবৈধভাবে পার্শ্ববর্তী দেশে গিয়ে দেওবন্দ দারুল উলুম মাদ্রাসায় ভর্তি হন। ১৯৮৫ সালের শেষে ওই দেশের নাগরিক হিসেবে একটি পাসপোর্ট তৈরি করে সেদেশের নাগরিক হিসাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন এবং ১৯৮৬ সালে ফিরে যান। পরবর্তীকালে ওই দেশ থেকে ভিসা নিয়ে পাকিস্তানে যান। ১৯৮৯ সালে সেখান থেকে আফগানিস্তানে মুজাহিদ হিসাবে যান। সেখানে বাংলাদেশের কয়েকজন জঙ্গি সদস্য ও ৩০-৩৫ জন পাকিস্তানি নাগরিক একত্রিত হয়ে একটি ক্যাম্পে অবস্থান নিয়ে পাকিস্তানি এক হুজি নেতা এবং বাংলাদেশি এক জঙ্গির নেতৃত্বে অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ নেন তিনি। আফগানিস্তানের পক্ষে যুদ্ধে অংশ নেন। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশে ফিরে আসেন। আফগানিস্তানে থাকতেই ‘হুজি-বি’ অর্থাৎ ‘হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামি বাংলাদেশ’ নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন এবং নিজেই আমীর হন। ১৯৯১ সালে ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে হরকাতুল জিহাদ নামে প্রচারণা শুরু করেন। ১৯৯২ সালে কক্সবাজারের উখিয়ার একটি মাদ্রাসায় প্রশিক্ষণ ক্যাম্প চালু করেছিলেন এই জঙ্গি নেতা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত