সিলেটটুডে ডেস্ক

২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ২১:২৬

মায়ের ‘আত্মগোপন’-এর কথা স্বীকার করলেন মরিয়ম

নানা ঘটনার পর এখন মরিয়ম মান্নান তার মায়ের আত্মগোপনের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। যদিও তার করা মামলায় চারজন কারাগারে রয়েছেন এখনো।

তিনি বলেছেন, ‘মায়ের সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে, মা জীবনের প্রতি বিরক্ত, নিজেই আত্মগোপনে ছিলেন। তিনি চলে গিয়েছিলেন সারা জীবনের জন্য। এটার দায় আমাদেরও। আমরা তো তার সন্তান। মা ভীষণ কান্নাকাটি করছেন। তিনি বলছেন, ‘আমি তো চলেই গেছি, আমাকে কেন নিয়ে আসছ।’ তিনি আরও বলেছেন, আদালতে দেয়া তার মায়ের জবানবন্দি পরিবর্তন করাবেন।

গত ২৭ আগস্ট রাতে খুলনার দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশার বণিকপাড়ার বাড়ি থেকে রহিমা বেগম নিখোঁজ হন বলে অভিযোগ করেন মরিয়মসহ তার সন্তানরা। পরদিন ২৮ আগস্টে দৌলতপুর থানায় মামলা করেন রহিমার মেয়ে আদুরী আক্তার। আসামি করা হয় অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে, মামলায় জড়ানো হয় জমিসংক্রান্ত বিরোধীদের নাম। সেই মামলায় প্রতিবেশী মঈন উদ্দিন, গোলাম কিবরিয়া, রফিকুল ইসলাম পলাশ, মোহাম্মাদ জুয়েল, হেলাল শরীফসহ রহিমা বেগমের দ্বিতীয় স্বামী বেল্লাল হাওলাদার কারাগারে রয়েছেন।

২৪ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ১০টার দিকে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের কুদ্দুস মোল্লার বাড়ি থেকে রহিমা বেগমকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরদিন তাকে আদালতে হাজির করা হলে অপহৃত হয়েছিলেন দাবি করে জবানবন্দি দেন রহিমা। সে সময় মেয়ে আদুরী আক্তারের জিম্মায় দেয়া হয় তাকে।

বৃহস্পতিবার বিকেলে মরিয়ম বলেন, ‘মা আদালতে যা বলেছেন, তা গ্রান্ট করার কিছু নাই। মায়ের এই স্টেটমেন্টটা আমরা নিচ্ছি না। আইন-আদালত কেউ নেবেন না। তার যদি মাথা ঠিক থাকত তাহলে ছেলেমেয়েদের রেখে এসব করতেন না। তিনি একা একা চলে যেতেন না। তার জন্য আমরা হেনস্তার শিকার হয়েছি। এই দায় মাকে দিচ্ছি না, আমরাই নিচ্ছি। মায়ের জবানবন্দি আদালতে অবশ্যই পরিবর্তন করাব। মাকে তো আমরা এখনি আদালতে নিতে পারছি না। পিবিআই তদন্ত করছে, তারা যখন ডাকবে, তখন আদালতে স্টেটমেন্ট পরিবর্তন করাব। তাকে সাপোর্ট দেয়ার এখানে কিছুই নেই। আমরা মামলায় কারো নাম দিইনি। সন্দেহভাজনদের নাম দিয়েছিলাম। তাদের সন্দেহের যথেষ্ট কারণ ছিল। পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করেছে।’

মরিয়ম মান্নান আরও বলেন, ‘এটা যদি কেউ বলে মায়ের আত্মগোপনে আমি সম্পৃক্ত ছিলাম, এটা খুবই ভুল বলবেন। এটা কোনোভাবেই না। এখন যদি ধরেন, মাকে খুঁজতে গিয়ে যদি কোনো দণ্ড হয়, হাসি মুখেই মেনে নিতে হবে। এটা মাথা পেতে নিব। মাকে তো পেলাম। সব স্থানে গিয়ে বলেছি, আমার মা কোথায়। আর কিছুই তো বলেনি। আমি যদি জানতাম আমার মা নিজে থেকে চলে গেছেন, আমি কোনো আইনি আশ্রয় নিতাম না। নিজেই খুঁজে বেড়াতাম।’

যারা গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন, তাদের মুক্তি জন্য কিছু করবেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে মরিয়ম বলেন, ‘আমি ইতিমধ্যে আইনজীবীকে বলে দিয়েছি, মামলাটি তুলে নিতে। তখন তাদের প্রতি সন্দেহ হওয়ার যথেষ্ট কারণ ছিল। এখন তো মনে হচ্ছে মা আত্মগোপনে ছিলেন। তাই মামলাটি তুলে নেব। এ ছাড়া বিষয়টি নিয়ে আদালতের কাছে ক্ষমাও চাইব।’

আপনার মায়ের দ্বিতীয় স্বামী কী আপনাদের কিছু বলেছেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে মরিয়ম বলেন, ‘মা নিখোঁজ হওয়ার পর বেল্লাল ঘটক প্রথমে আমাদের বলেছিলেন, তোমার মা আর নাই। তোমার মাকে মেরে ফেলছে। পরে তিনি আবার বলছিলেন, আমি কিছু জানি না তোমাদের মা কোথায় গেছেন। তার দুই ধরনের কথায় সন্দেহ হওয়ায় পুলিশকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে বলেছিলাম। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে।’

দুই স্থান থেকে মায়ের খোঁজ জানানো হয়েছিল

মরিয়ম মান্নান বলেন, ‘ময়মনসিংহ থেকে আমরা ঢাকাতে আসার পর বান্দরবান থেকে মনি বেগম আমার ভাই মিরাজকে কল করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আপনার মা ভিক্ষা করতে করতে আমাদের কাছে এসেছিলেন। বিষয়টি আমাদের সন্দেহ হয়েছিল। নম্বরটি আমার ভাই র‌্যাবকে দিয়েছিল তদন্ত করতে। এ ছাড়া ফরিদপুর থেকেও আমার ভাইয়ের মোবাইলে জানানো হয়েছিল, আপনার মা আমাদের কাছে আছে। তবে মোবাইলটি আমার ভাইয়ের স্ত্রী রিসিভ করে বিরক্ত প্রকাশ করেছিলেন। সে সময়ে আমাদের মাথা ঠিক ছিল না। একেকজন ফোন করে একেক রকমের কথা বলছিলেন। তাই কোনটা সত্য বুঝতে পারছিলাম না।’

মরিয়ম বলেন, ‘মা এখন আমাদের কাছে থাকতে চাচ্ছেন। যদিও আদালত আমার বোন আদুরীর জিম্মায় মাকে মুক্তি দিয়েছেন। এখন পরবর্তী সময়ে পিবিআই যখন মাকে আদালতে নেবে, তখন বিষয়টা দেখা যাবে। তবে মা চাইলে তো তাকে একা ছেড়ে দেয়া যায় না। তিনি তো মা।’

খুলনা পিবিআইর পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘তদন্তে প্রায় সব তথ্য-প্রমাণ আমাদের হাতে এসেছে। যে সময় রহিমা আত্মগোপনে যান, সেই সময়ে তার স্বামী বেল্লাল হাওলাদার কাছেই ছিলেন। যে কারণে বেল্লাল হাওলাদারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা একান্ত প্রয়োজন। তাকে আমরা রিমান্ডের আবেদন জানিয়েছি। ৪ অক্টোবর শুনানি হবে। তারপর রহিমার আত্মগোপনে কারা জড়িত জানা যাবে।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত