সিলেটটুডে ডেস্ক

০৬ অক্টোবর, ২০২২ ১৮:৪৫

বিশ্বে দুর্ভিক্ষের শঙ্কা, তবে দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী: প্রধানমন্ত্রী

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার কারণে আগামী বছর সারা বিশ্বের জন্য ‘অত্যন্ত দুর্যোগময়’ হতে পারে বলে শঙ্কা করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে দেশের অর্থনীতি ‘যথেষ্ট শক্তিশালী’ আছে জানিয়ে তিনি বলেছেন, দুশ্চিন্তার কিছু নেই।

গত ছয় মাসে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অনেকটা কমে গেলেও এখনও যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ আছে বলে মনে করেন সরকার প্রধান।

গণভবনে বৃহস্পতিবার বিকেলে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি জানান, এই সফরে বিশ্ব নেতাদের মধ্যে যাদের সঙ্গেই দেখা হয়েছে, সবাই অর্থনীতি নিয়ে শঙ্কার কথা বলেছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রত্যেকের মাঝে কিন্তু এই ধরনের একটা আশঙ্কা। সবাই এ কথা বলেছে যে ২০২৩ সাল বিশ্বের জন্য অত্যন্ত একটা দুর্যোগময় সময় এগিয়ে আসছে, এমনকি বিশ্বব্যাপী দুর্ভিক্ষও দেখা দেবে, এমন শঙ্কা সকলের মনে আছে। এ নিয়ে সবাই চিন্তিত ও আতঙ্কিত।’

দেশের অর্থনীতি যথেষ্ট শক্তিশালী জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘একদিকে করোনাকালীন সংকট, আরেকদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, এবং স্যাংশন, পাল্টা স্যাংশন। এর মাঝেও আমাদের অর্থনীতি এখনও যথেষ্ট সচল রাখতে পেরেছি। এটা আমার কথা না, আন্তর্জাতিক নানা সংস্থাও সে কথা বলছে।

‘শুধু এটুকু বলব, আমরা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে লং টার্ম, মিডিয়াম টার্ম, বা ইমিডিয়েট, যেকোনো ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের কোনো রিস্ক নেই। আমি কথা দিতে পারি। এটুকু ব্যবস্থা আমরা নিতে পারি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সামষ্টিক অর্থনীতির যে টার্গেট আমরা নির্দিষ্ট করেছি, সেটা আমরা অর্জন করতে সক্ষম হব, এ ব্যাপারে সবাইকে আমি আশ্বস্ত করতে চাই। এরপর যদি মহাদুর্যোগ দেখা দেয়, এমনিতেই সারা বিশ্ব তো কষ্ট পাচ্ছে। তাতে বেশি কিছু বলার নেই। আমাদের অর্থনীতি যথেষ্ট শক্তিশালী আছে, এটুকু আশ্বাস আমি দিতে পারি।’

উৎপাদন করুন, অপচয় করা যাবে না
দুচিন্তা না করে সর্বোচ্চ চেষ্টা ও সাশ্রয়ী হওয়ার তাগিদও দেন সরকার প্রধান। তিনি বলেন, ‘দুশ্চিন্তা তো মানসিক ব্যাপার, কার কী মানসিকতা তার ওপরও নির্ভর করে। তবে সকলে মিলে যদি এই চিন্তা করে যে, না, দেশটা আমাদের, এই দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, সেইক্ষেত্রে আমাদের অপচয় করলে হবে না।

‘তারপরও দেশবাসীর কাছে আমি বারবার আহ্বান করেছি, আপনারা যার যেখানে যতটুকু জমি আছে, বা জলাধার আছে, সেখানে যেন কিছু না কিছু উৎপাদন করে। কারণ, খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টা বেশি বিবেচনা করা দরকার।’

প্রতিটি ক্ষেত্রে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বানও জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘বিদ্যুৎ ব্যবহার, পানি ব্যবহার, খাদ্য ব্যবহার, প্রতিটি ব্যবহারে সবাই যেন একটু সাশ্রয়ী হয়। কারণ আগামী সংকটটা যেন আমাদের সেভাবে না দেখা দেয়।’

রিজার্ভ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ
যে রিজার্ভ ৫০ বিলিয়ন ডলারের দিকে ছুটছিল আট মাসের মধ্যে তা ৩৬ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে এবং তা ক্রমহ্রাসমান।

তবে রিজার্ভের বর্তমান অবস্থা নিয়েও সন্তুষ্ট শেখ হাসিনা। বলেন, ‘আমাদের রিজার্ভ এখনও যথেষ্ট। আমাদের যে রিজার্ভ আছে, যদি কোনো সংকট দেখা দেয়, পাঁচ মাসের খাদ্য কেনার মতো রিজার্ভ আমাদের আছে। রিজার্ভ হিসাব করা হয় এ কারণে যে, কোনো দুর্যোগ দেখা দিলে আপনার তিনমাসের খাদ্য কেনার সংগতি আছে কি না। আমাদের সেখানে পাঁচ মাসের আছে।’

বাংলাদেশের ঋণ পরিশোধে ভবিষ্যতেও কোনো সমস্যা হবে না বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেন, ‘আমরা যত ঋণ নেই, বাংলাদেশ আজ পর্যন্ত কখনও কোনোদিন খেলাপি হয়নি। যত সমস্যা থাক আমরা কিন্তু সময়মতো ঋণ পরিশোধ করি। যখন ঋণ পরিশোধ করি আমাদের রিজার্ভ তখন কিছুটা কমে যায়। করোনাভাইরাসের সময় যখন অনেক কার্যক্রম বন্ধ ছিল, আমরা যথেষ্ট রিজার্ভ বাড়াতে পেরেছিলাম।’

বাজেটের সমস্যা হবে না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যে সমস্ত প্রকল্পগুলো একান্তভাবে আমাদের জরুরি সে প্রকল্পগুলো এবং অধিক টাকা দিয়ে দ্রুত শেষ করে সেখান থেকে রিটার্ন পাওয়া যায়, সেই ধরনের প্রকল্পগুলো আমরা দ্রুত শেষ করে দিচ্ছি।

‘আমরা দেখি ওই প্রকল্পটা আমাদের দেশের জন্য কতটা প্রযোজ্য, কত টাকা খরচ করতে হবে, কত টাকা ঋণ নিতে হবে, কত টাকা পরিশোধ করতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নের পর আমার কত টাকা রিটার্ন আসবে। রিটার্ন ভালো পাব, সেটা গ্রহণ করি, বাকিগুলো করি না।’

গণমাধ্যম নিয়ে মাথাব্যথা নেই
গণমাধ্যমের সমালোচনা নিয়ে এক প্রশ্নে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের কিছু কিছু পত্রিকা আছে, তাদের বোধ হয় সারা জীবনই বাংলাদেশের খারাপ কথাটা বলতে পারলে তারা স্বস্তি পায়। এটা আমি যুগ যুগ ধরে দেখছি। এরকম ধরনের মানুষ থাকে। সবসময় নেতিবাচক চিন্তা অথবা বলতে হবে যে পরশ্রীকাতরতায় ভোগে।

‘বাংলাদেশ যত ভালো করুক, তাদের চোখে ভালো হওয়া যাবে না। তবে সেটা নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই। আমি সেটা নিয়ে চিন্তাও করি না। আমার লক্ষ্য থাকে যে, জনগণের ওপর আমার আস্থা আছে, বিশ্বাস আছে, আমি যে কাজটা করছি জনগণ কতটা লাভবান হলো, জনগণের কষ্ট যাতে না হয়, সেদিকেই আমরা বিশেষভাবে দৃষ্টি দিই।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত