সিলেটটুডে ডেস্ক

১২ মে, ২০২৩ ১০:৩৯

মোখা মোকাবেলায় উপকূলে ব্যাপক প্রস্তুতি

ছবি: সংগৃহীত

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ ১০ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে এক বিজ্ঞপ্তিতে এমন তথ্য জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দক্ষিণ–পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও এর কাছাকাছি মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা উত্তর দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে মধ্য বঙ্গোপসাগর ও এর কাছাকাছি দক্ষিণ–পূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে।

‘মোখা’ আগামীকাল শনিবার সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী হবে এবং পরে কিছুটা শক্তি কমে যাবে। রোববার ভোরে কক্সবাজার ও মিয়ানমারের উপকূলে আঘাত হানতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান।

এদিকে, ঘূর্ণিঝড় মোখা রোববার দুপুরে ঘণ্টায় ১৪০ থেকে ১৫০ কিলোমিটার বেগে দমকা হাওয়াসহ ১৬৫ কিলোমিটার বেগে কক্সবাজার জেলা অতিক্রম করতে পারে বলে জানিয়েছে ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর। বৃহস্পতিবার (১১ মে) এ তথ্য জানায় প্রতিষ্ঠানটি।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. আব্দুর রহমান খান বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানার আরও অনেক সময় বাকি। সেজন্য আমরা এখনই আঘাত হানার সময়ের গতিবেগ নিয়ে কিছু বলতে চাচ্ছি না। কেননা এর গতিবেগ বাড়ছে-কমছে। দুদিন আগে বলা যাবে আঘাতের সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ কত হবে।

এক সংবাদ সম্মেলনে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক আজিজুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখা আজ উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম থেকে উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হবে। এখন পর্যন্ত দেশের কক্সবাজারের দিকে ঘূর্ণিঝড়টি অগ্রসর হয়নি। বর্তমানে যেভাবে মুখ করে আছে, তাতে খুলনা ও ভারতের ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। আজ সকালে এটি উত্তর থেকে উত্তর-পূর্ব দিকে ঘুরে যাবে। তখন কক্সবাজার ও মিয়ানমারের উত্তর উপকূলের দিকে যাবে। বর্তমানে ঘূর্ণিঝড়টির গতি ঘণ্টায় ১৫, ১৬, ১৭ বা ১৮ কিলোমিটার।

আরেক সংবাদ সম্মেলনে মো. আব্দুর রহমান খান বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় সবচেয়ে কাছাকাছি এসেছে কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরের। এ বন্দরটি থেকে মাত্র ১ হাজার ১৮০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ২৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ২৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ১৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। দেশের সব সমুদ্রবন্দরকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

মোখা আঘাত হানার আশঙ্কায় জানমালের ঝুঁকি হ্রাসে উপকূলের জেলাগুলোতে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। উপকূলীয় জেলাগুলোতে আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা, কন্ট্রোল রুম খোলা, শুকনো খাবার ও স্বেচ্ছাসেবীদের প্রস্তুত রাখাসহ নানা প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

এখন পর্যন্ত উপকূলীয় অঞ্চলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। মোখার প্রভাবে সাগর কিছুটা উত্তাল হলেও স্বচ্ছ আকাশ আর তীব্র দাবদাহ বিরাজ করছে। তবে সৈকতগুলোতে টানানো হয়েছে লাল পতাকা।

ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলার প্রস্তুতি হিসেবে চট্টগ্রাম নগরী ও ১৫টি উপজেলায় ৫৩০টি স্থায়ী ও ৫০০টি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। কক্সবাজারে ইতোমধ্যে সাগর উত্তাল হয়ে উঠছে। আর পর্যটকদের সতর্ক করতে লাল পতাকা টানানো হয়েছে। পর্যটকদের হাঁটুপানির নিচে নামতে দেওয়া হচ্ছে না। ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় সব উপজেলায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। উপকূলীয় এলাকার সব সাইক্লোন শেল্টার ও বিদ্যালয়সহ ৫৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে, প্রস্তুত রয়েছে মেডিকেল টিম। কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে ৩৩টি শরণার্থী ক্যাম্পেও প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে। একইধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর, খুলনা, বাগেরহাট, মোংলা বন্দর, সাতক্ষীরায়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত