নিউজ ডেস্ক

০৬ জানুয়ারি, ২০১৬ ১৫:০৭

শিক্ষকদের সম্মান সবসময়ই সর্বোচ্চ : প্রধানমন্ত্রী

ফাইল ছবি

পদমর্যাদা ও বেতনভাতা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের আন্দোলনের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শিক্ষকদের সম্মান সবসময়ই সবার ওপরে।

বুধবার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে পদক বিতরণ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “সম্মানিত শিক্ষকরা সমাজের বিবেক। শিক্ষকদের সম্মান সবসময়ই সর্বোচ্চ। তাদের তুলনা কিন্তু কারও সাথে চলে না। কারণ শিক্ষকরা শিক্ষকই।”

অষ্টম বেতন কাঠামো ঘোষণার পর থেকেই গ্রেডে মর্যাদার অবনমন এবং টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাতিলের প্রতিবাদে আন্দোলনে রয়েছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।

৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতিগুলোর ফোরাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন গত শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈঠক করে ৭ জানুয়ারি সারা দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই ঘণ্টা কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয়।
দাবি আদায় না হলে ১১ জানুয়ারি থেকে লাগাতার কর্মবিরতি পালনেরও সিদ্ধান্ত রয়েছে এ সংগঠনের।

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে শিক্ষকদের সেই আন্দোলনের প্রসঙ্গ আনেননি। তিনি বলেন, “আমরা যত বড়ই হই না কেন, এখনও যদি আমাদের শিক্ষকদের দেখি, মাথা নুয়ে আসে।”

প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ অনুষ্ঠানে ২০১১ সালের ৭৪ জন এবং ২০১২ সালের ৯২ জন মেধাবী শিক্ষার্থীর হাতে স্বর্ণপদক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।

দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মেধাবী শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ২০০৬ সাল থেকে ‘প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক’ দিয়ে আসছে।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক পর্যায়ে প্রতিটি অনুষদে সর্বোচ্চ নম্বরপ্রাপ্তরা এই পদকের মনোনীত হন।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন আয়োজিত অনুষ্ঠানে জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান এবং নজরুল গবেষক রফিকুল ইসলাম দর্শকসারিতে ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী শিক্ষকদের দিকে তাকিয়ে বলেন, “তাদের কাছ থেকেই তো শিক্ষা পেয়েছি। আমি প্রধানমন্ত্রী হতে পারি। কিন্তু আমার শিক্ষকদের সম্মান অনেক ওপরে- আমি এটুকু বলতে পারি।”

শেখ হাসিনা তুলনামূলকভাবে বেশি নারী শিক্ষার্থী পদক পাওয়ায় এবং মেধাবীদের হাতে নিজে পদক তুলে দিতে পেরে আনন্দ প্রকাশ করেন

শিক্ষার ব্যাপক বিস্তার এবং বহুমুখী করার ওপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “প্রত্যেক জেলায় একটি করে পাবলিক এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে। সেভাবেই তার সরকার কাজ করছে।

“আমাদের সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়ার পর ধারাবাহিক দ্বিতীয় মেয়াদের এসময় পর্যন্ত ১১টি নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। ৩৩টি নতুন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দিয়ে ৫২ থেকে ৮৫-তে উন্নীত করা হয়েছে।”

সরকার ‘উচ্চশিক্ষা মানোন্নয়ন প্রকল্পের’ মাধ্যমে উচ্চশিক্ষাকে যুগোপযোগী এবং বহুমাত্রিক ধারায় বিকাশ ঘটাতে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে বলে জানান সরকারপ্রধান।

“৭৫২ কোটি ৬৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘উচ্চশিক্ষা মানোন্নয়ন’ প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন। এরমধ্যে ৩৭১ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৯৬টি উপ-প্রকল্প বাস্তবায়ন চলছে।”

৩৩২ কোটি ১৪ লাখ টাকা ব্যয়ে উচ্চগতিসম্পন্ন ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশ্ব জ্ঞানভান্ডারের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের কথাও উল্লেখ করে তিনি বলেন, “উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল পুস্তক ও জার্নাল সহজলভ্য করা হয়েছে। ভার্চুয়াল প্রযুক্তির মাধ্যমে বিশ্বখ্যাত শিক্ষাবিদদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা হয়েছে।”

উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গ্রন্থাগার আধুনিকায়ন, শিক্ষকদেরকে গবেষণা প্রণোদনা দিতে প্রকল্প সংখ্যা ৪৯৭ থেকে ১ হাজার ২৮২ এবং গবেষণা সহায়তা প্রাপ্ত মেধাবীদের সংখ্যা ৪৯৭ জন থেকে ১ হাজার ২৪২-এ উন্নীতকরণের কথাও বলেন শেখ হাসিনা।

১৯৭৫ সালের মার্চে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি’ খ্যাত ভাষণের কিছু অংশ উদ্ধৃত করেন জাতির জনকের মেয়ে।

বঙ্গবন্ধু ভাষণে বলেছিলেন, “বাংলার জনগণ গরিব। কিন্তু এরাই ইঞ্জিনিয়ার বানাতে টাকা দেয়, মেডিকেলের টাকা দেয় একটা অংশ। আপনাদের কাছে আমার জিজ্ঞাসা, শিক্ষিত ভাইদের- যে আপনার লেখাপড়ার খরচ দিয়েছে, তা শুধু আপনার সংসার দেখার জন্য নয়- শুধু আপনার ছেলেমেয়েদের দেখার জন্য নয়। দিয়েছে তাদের জন্য আপনি কাজ করবেন, তাদের সেবা করবেন বলে। তাদের আপনি কি দিয়েছেন? কি ফেরত দিয়েছেন? কতটুকু দিচ্ছেন? তার টাকায় ইঞ্জিনিয়ার সাহেব, ডাক্তার সাহেব, তার টাকায় অফিসার সাহেব, তার টাকায় রাজনীতিবিদ সাহেব, তার টাকায় মেম্বার সাহেব, তার টাকায় সব সাহেব। আপনি দিচ্ছেন কি? কি ফেরত দিচ্ছেন? আত্মসমালোচনা করেন।”

শেখ হাসিনা কৃতি শিক্ষর্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, “দরিদ্র কৃষক-শ্রমিকদের ঘামের টাকায় রাষ্ট্র চলে। খেটে খাওয়া মানুষের অর্থের বিনিময়ে দেশ চলছে। তৃণমূলের মানুষকে কতটুকু দিতে পারলাম- সেটাই মূল কথা।”

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বক্তব্য দেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য দিল আফরোজা বেগম।

পদকপ্রাপ্তদের মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্রী অথই নীলিমা এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি ও মাইক্রোবায়োলজির মোহাম্মদ মামুনুর রশিদ মাহী তাদের অনভূতি প্রকাশ করেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত