সিলেটটুডে ডেস্ক

০৩ জুন, ২০২৩ ১৩:৩৭

কয়লা সংকটে পুরোপুরি বন্ধ হচ্ছে পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র

কয়লা সংকটের কারণে উৎপাদন অব্যাহত রাখতে পারছে না পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র। এটি দেশের সবচেয়ে বড় তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র। পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজ শনিবার অথবা আগামীকাল রোববার থেকেকেন্দ্রটি এক মাসের জন্য পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নতুন করে কয়লা আসতে কমপক্ষে ২৫ থেকে ৩০ দিনের মতো সময় লাগবে। ফলে এই জুন মাসে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রটির উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ থাকবে।

এর আগে, গত ২৫ মে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের আরেক ইউনিট বন্ধ করে দেওয়া হয়। ইতিমধ্যে যার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে শুরু হয়েছে তীব্র লোডশেডিং।

দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার নিশানবাড়িয়ায় এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণে ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরের সময় বাংলাদেশের নর্থওয়েস্ট পাওয়ার কোম্পানি ও চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনের (সিএমসি) মধ্যে যৌথ উদ্যোগের চুক্তি হয়।

এরপর বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড গঠিত হয়। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধানখালীতে ১৩২০ মেগাওয়াট পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভিত্তি প্রস্তর উদ্বোধন করেন। ২০২০ সালে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র বানিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে।

গত এক বছরে কয়লা সংকটের প্রভাব তেমন বিদ্যুৎকেন্দ্রটির ওপরে না পড়লেও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বিশ্ববাজারে ডলার সংকট হওয়ায় চরম প্রভাব পড়েছে। প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, পূর্ণ সক্ষমতায় উৎপাদনে গেলে মোট ১৩২০ মেগাওয়াটের দুইটি ইউনিট চালাতে দরকার হয় প্রতিদিন প্রায় ১৩ হাজার মেট্রিকটন কয়লা। আর এই কয়লার যোগান দেয় প্রকল্প পার্টনার সিএমসি। প্রতিষ্ঠানটি প্রয়োজনীয় কয়লা কেনার জন্য ঋণ দেয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সিএমসি প্রতি ছয় মাস পর পর টাকা আদায় করে থাকে। গত এপ্রিল মাস পর্যন্ত প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা বকেয়া পড়েছে। বকেয়া টাকা না দেওয়া পর্যন্ত সিএমসি নতুন করে কয়লা দেবেনা বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ-চীন পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিপিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এম খোরশেদুল আলম।

তিনি বলেন, ‘সকল বকেয়া এখনি মেটানো সম্ভব নয়। তবে কিছু টাকা তাদের দেওয়া হয়েছে। এখন নতুন করে কয়লা আসতে আসতে ২০/২৫ দিন লেগে যাবে। ফলে এই কয়েকদিন কেন্দ্র বন্ধ রাখতে হচ্ছে।’

বড় সক্ষমতার এ কেন্দ্র পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেলে এবং চলমান তাপপ্রবাহে বিদ্যুৎ চাহিদা বাড়তে থাকলে ৩ থেকে ৪ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত লোডশেডিং হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিদ্যুৎসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। কয়েকদিন আগে বলা হয়েছিল, তখন যে পরিমাণ কয়লা মজুদ ছিল তা দিয়ে দ্বিতীয় ইউনিট ৩ জুন পর্যন্ত চালু রাখা যাবে। মূলত ডলার সংকটে কয়লার ৩৯ কোটি ডলার পরিশোধ করতে না পারায় সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এ বিদ্যুৎকেন্দ্র।

জানা গেছে, সরকার কয়লার জন্য ১০ কোটি ডলার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। কিন্তু তাতেও আপাতত সংকট কাটছে না। কারণ নতুন করে কয়লা আমদানি শুরু হলেও কয়লা আসতে সময় লাগবে আরও ২৫ দিন। এদিকে তীব্র হয়ে উঠেছে লোডশেডিং।

এ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ বিতরণ প্রতিষ্ঠান বিপিডিপি’র এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘পায়রার কারণে আমাদের ঘাটতি বেড়েছে। তারপরে গরম এর অন্যতম কারণ। আমরা চেষ্টা করছি মানুষের দুর্ভোগ কি করে কমানো যায়।’

উল্লেখ্য, কয়লার অভাবে বাগেরহাটের রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রথম ইউনিট পূর্ণ সক্ষমতায় চালানো যাচ্ছে না। চলতি মাসে দ্বিতীয় ইউনিট চালুর কথা। তা নিয়েও সংশয় রয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত