সিলেটটুডে ডেস্ক

০৩ আগস্ট, ২০২৫ ১৩:০২

৫ আগস্টের পর যেভাবে বদলে যায় ‘সমন্বয়ক’ অপুর জীবনযাপন

রাজধানীর গুলশানে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসায় চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেপ্তার গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের বহিষ্কৃত যুগ্ম আহ্বায়ক জানে আলম অপুর বাড়ি জয়পুরহাটের আক্কেলপুরের পুনঘরদীঘি গ্রামে।

স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, অপু নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। গণ-অভ্যুত্থানের কিছুদিন পর হঠাৎ করেই বদলে যায় তার জীবনযাপন। দামি পোশাক, প্রাইভেট কারে চলাফেরা, প্রভাবশালী রাজনীতিক ও পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ছবি—এসব তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেখা যায়।

জয়পুরহাটের পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা অপুকে সমীহ করতেন। গণ-অভ্যুত্থানের পর প্রথম তিনি ১১ আগস্ট জয়পুরহাট আসেন। সে সময়কার জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নুরে আলম তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। বর্তমান পুলিশ সুপার মুহম্মদ আবদুল ওয়াহাবও তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন। এসব ছবি এখনো ফেসবুকে আছে। অপু এলাকায় এসে নিজেকে বিরাট ক্ষমতাধর ব্যক্তি বলে পরিচয় দিতেন। গুলশানে চাঁদাবাজিতে তার জড়িত থাকার ঘটনায় তার গ্রামের বাসিন্দারা তাই ‘বিস্মিত’ হননি।

পুনঘরদীঘি গ্রামের বাসিন্দা ও জানে আলমের প্রতিবেশী শফিউল আলম বলেন, ‘অপু বয়সের তুলনায় অনেক পাকা ছিল। তার গ্রামের বাড়িতে কেউ থাকে না। এনসিপির জয়পুরহাটের প্রোগ্রামের সময় কিছু সময়ের জন্য গ্রামের বাড়িতে এসেছিল। কয়েক দিন পর আমরা জানতে পারি, গুলশানে তার চাঁদাবাজির ঘটনার ভিডিও বের হয়েছে। অপুর এমন ঘটনায় আমরা বিস্মিত হইনি।’

স্থানীয় লোকজন বলেছেন, অপু এলাকায় ছাত্রদল করতেন। বর্তমানে তিনি রাজধানীর গ্রিন ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের শিক্ষার্থী। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারীদের মধ্যে সামনের সারির একজন সমন্বয়ক হিসেবে তাকে দেখা যেত।

এ বিষয়ে আক্কেলপুর উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক দেওয়ান তানভীন নেওয়াজ বলেন, ২০২২ সালের দিকে অপু ছাত্রদল করতেন। নারী কেলেঙ্কারির দায়ে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর তিনি একেক সময় একেক দলে যোগ দেন। ফেসবুকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাসহ বিভিন্ন ক্ষমতাবান ব্যক্তির সঙ্গে ছবি দিতেন। এই ছবি দিয়ে নিজেকে বিশাল ক্ষমতাধর নেতা হিসেবে উপস্থাপন করতেন। এগুলো তার চাঁদাবাজিতে সহায়ক হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘অপু চাঁদাবাজি করতেন, আবার অন্যদের ফেসবুকে ভালো সাজার উপদেশ দিতেন। তিনি জয়পুরহাটবাসীর সম্মান ক্ষুণ্ন করেছেন। আমরা তাঁর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

পুনঘরদীঘি গ্রামে গিয়ে জানা গেল, অপুর বাবা আনোয়ার হোসেন (দুলাল) ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। প্রায় ৮ বছর আগে তিনি মারা যান। তাঁদের বাড়িতে একটি মাটির দোতলা ঘর আর ছোট পাকা ঘর আছে। অপুর মা অন্যত্র বিয়ে করেছেন। ছোট বোন মায়ের সঙ্গে থাকেন। ফলে বাড়িটি বেশির ভাগ সময় তালাবদ্ধ থাকে।

ছাত্রদলের আরেক নেতা ও অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট আরমান হোসেন বলেন, ‘অভ্যুত্থানের পর হঠাৎ অপুর লাইফস্টাইল পাল্টে যায়। চাঁদাবাজি ও তদবির–বাণিজ্য তার আয়ের মূল উৎস ছিল। তিনি এলাকায় তেমন কিছু করেননি। তবে ঢাকায় সম্পদ ও ব্যাংক ব্যালেন্স করেছেন বলে শোনা যায়। গণ-অভ্যুত্থানের কয়েক দিন পর তিনি এলাকায় দামি প্রাইভেট কার নিয়ে এসেছিলেন। তখন জেলা পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা তাকে সমীহ করেছিলেন।’

বাবার মৃত্যুর পর অপু একই উপজেলার কাঁঠালবাড়ি গ্রামে নানাবাড়িতে ছিলেন। এলাকায় এসে তিনি খুব কম সময় কাটাতেন। তার বাবার দুই-তিন বিঘা জমিও বন্ধক রাখা আছে বহু আগে থেকে। অপুর নানা মারা গেছেন। নাতির চাঁদাবাজির কথা শুনেছেন নানি আখলাকুন্নেসা বকুল।

তিনি বলেন, ‘মায়ের বিয়ের পর থেকে সে এখানে আর তেমন আসে না। অনেক আগে এখানে দুই-তিন বছর ছিল সে।’ আর মামি জেসমিন বলেন, ‘অপু ঢাকায় অনেক বড় নেতা হয়েছে বলে জানতাম। সে অভিভাবকহীন ছিল। আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করত না।’

গত শুক্রবার সকালে রাজধানীর ওয়ারী এলাকা থেকে জানে আলমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে গুলশানে চাঁদাবাজির ঘটনায় জানে আলম জড়িত।

এ ঘটনায় জানে আলমসহ দুজনকে স্থায়ী বহিষ্কার করে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ৷

সূত্র: প্রথম আলো

আপনার মন্তব্য

আলোচিত