সিলেটটুডে ডেস্ক

২৯ এপ্রিল, ২০১৬ ০৯:১৬

জুলহাজ-তনয় হত্যা : ঘাতকরা এবিটির স্লিপার সেলের সদস্য

কলাবাগানে জোড়া খুনের ঘটনায় শনাক্ত সাত ঘাতক আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) সদস্য বলে জানিয়েছে পুলিশের ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা ও অপরাধ তদন্ত বিভাগ (ডিবি)।

ঘাতকদের গ্রেফতারে রাজধানীসহ সারা দেশে অভিযান চালানো হচ্ছে। যে কোনো সময় তাদের গ্রেফতারের আশা করছেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এছাড়া ঘাতকরা যেন দেশত্যাগ করতে না পারে সেজন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে দেশের সব ইমিগ্রেশন পয়েন্টে কিলিং মিশনের সম্ভাব্য নেতৃত্বে থাকা দু’জনের নাম-ঠিকানাসহ সাতজনের ছবি দেয়া হয়েছে।

২৫ এপ্রিল বিকালে কলাবাগানের বাসায় ঢুকে ইউএস এইডের কর্মকর্তা ও সমকামী আন্দোলনের নেতা জুলহাজ মান্নান এবং তার বন্ধু মাহবুব রাব্বী তনয়কে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। জুলহাজ সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সাবেক প্রটোকল সহকারী ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনির খালাতো ভাই।

এ ঘটনায় কলাবাগান থানায় পুলিশের এসআই মোহাম্মদ শামীম আহমেদ ও নিহতের ভাই মিনহাজ মান্নান ইমন বাদী হয়ে পৃথক দুটি মামলা করেন। মামলা দুটির তদন্ত করছে ডিবি। ইতিমধ্যে মামলার তদন্তে সহযোগিতার আগ্রহ প্রকাশ করেছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই।

আগামী সপ্তাহে তারা ডিবির সঙ্গে বৈঠক করতে পারে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে ডিবি পুলিশের যুগ্ম কমিশনার আবদুল বাতেন বৃহস্পতিবার বলেন, সন্দেহভাজন ঘাতকরা এবিটির স্লিপার সেলের সদস্য বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে। তারা বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসার ছাত্র। তাদের গ্রেফতারে প্রযুক্তিগত তদন্তের পাশাপাশি বিশ্বস্ত গুপ্তচরের সহায়তা নেয়া হচ্ছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট অপর একটি সূত্র জানায়, কিলিং মিশনের নেতৃত্বে থাকা দুই তরুণের নাম, ঠিকানা ও পরিবারের অবস্থান জানা গেছে। তাদের পরিবারকেও এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। অপর ৫ ঘাতকের সম্ভাব্য নাম জানা গেছে। এক্ষেত্রে ইতিপূর্বে গ্রেফতার হওয়া এবিটির স্লিপার সেলের সদস্যদের সহায়তা নেয়া হচ্ছে।

এদিকে ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া বিভিন্ন আলামত, ফুটেজ, নিহতদের মোবাইল ফোনের কললিস্ট, ফেসবুক আইডি, ব্যক্তিগত ও পারিবারিক শত্রুতা, আর্থিক লেনদেন, অতীত কর্মকাণ্ড চুলচেরা বিশ্লেষণ করছে তদন্ত সংস্থা। সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে প্রত্যক্ষদর্শী ও এলাকার প্রায় অর্ধশত ব্যক্তির।

এছাড়া পরীক্ষার জন্য উদ্ধারকৃত অস্ত্র, চাপাতি, হাতের ছাপসহ অন্যান্য আলামত সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। এদিকে জোড়া খুন মামলার আসামিদের দ্রুত শনাক্ত ও গ্রেফতারের তাগিদ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মামলার তদন্ত সংস্থাকে কাজের সুবিধার্থে ছায়া তদন্তকারী র‌্যাব, পিবিআই, সিআইডি ও অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করতে বলা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সংশ্লিষ্ট উইং প্রধান বা প্রতিনিধিদের ডেকে নিয়ে এসব নির্দেশনা দেয়া হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পুলিশ সদর দফতরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ছায়া তদন্তকারী কোনো সংস্থা গুরুত্বপূর্ণ কোনো তথ্য পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সমন্বয় সেলকে অবহিত করতে বলা হয়েছে।

ইতিমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক শাখার অতিরিক্ত সচিবকে প্রধান করে একটি বিশেষ সেল গঠন করা হয়েছে। এই সেল আইন প্রয়োগকারী ও তদন্ত সংস্থার সব উইংয়ের কাজ সমন্বয় করছে। সেলটি চব্বিশ ঘণ্টা খোলা থাকবে।

সূত্র জানায়, এ ঘটনায় ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ২০ ধরনের আলামত সংগ্রহ করেছে সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট, থানা পুলিশ ও ডিবি। যার মধ্যে ৯ ধরনের আলামত পাওয়া গেছে খুনিদের একজনের কাছ থেকে এএসআই মমতাজের কেড়ে নেয়া ব্যাগ থেকে।

আলামতের মধ্যে রয়েছে একটি ৭ পয়েন্ট ৬৫ বোরের আমেরিকার তৈরি অটোমেটিক পিস্তল, তিন রাউন্ড গুলিভর্তি ম্যাগাজিন, দুই রাউন্ড গুলিভর্তি একটি দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র, তেরো ইঞ্চি লম্বা একটি চাপাতি, দুটি মোবাইল সেট, ৫ ফুট লম্বা একটি পুরনো লাল চেক গামছা, একটি সাদা ও পুরনো ছাই রংয়ের লুঙ্গি, একটি পিক্যাপ, ছাই রঙের একটি প্রেসিডেন্ট লেখা ব্যাগ, আরবি ও বাংলা লেখা কিছু কাগজ, ঘটনাস্থলে হামলাকারীদের হাত ও পায়ের ছাপ, ভিক্টিমদের রক্ত, চুল, নখ, মাথার ঘিলু ইত্যাদি।

সূত্র: যুগান্তর।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত