১১ মে, ২০১৬ ০৯:৩৫
চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভারতের একটি হাসপাতালে মৃতুবরণ করেছেন সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট প্রমোদ মানকিন।
৭৭ বছর বয়স্ক প্রমোদ ভারতের মুম্বাইয়ের হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। বুধবার (১১ মে) সকালে প্রতিমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী আবদুর রহমান জানান, ভোর ৪টার দিকে মৃত্যু হয় প্রমোদ মানকিনের।
ফুসফুসের সংক্রমণে আক্রান্ত হয়ে মাসখানেক ধরে ভারতের হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন প্রতিমন্ত্রী। ক’দিন আগে তার ফুসফুসে অস্ত্রোপচারও হয়। মৃত্যুকালে স্ত্রী, পাঁচ কন্যা ও এক পুত্রসহ অসংখ্য স্বজন, শুভানুধ্যায়ী ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন তিনি।
তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি একইসঙ্গে প্রয়াত মানকিনের শোকাহত স্বজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেছেন।
প্রতিমন্ত্রীর মরদেহ ভারত থেকে বাংলাদেশে নিয়ে আসার প্রক্রিয়া চলছে।
ময়মনিসংহ-১ (হালুয়াঘাট-ধোবাউড়া) আসনের ৪ বারের এ সংসদ সদস্য হালুয়াঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পদে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি ময়নসিংহ জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্যও ছিলেন।
মানকিন ১৯৩৯ সালের ১৮ এপ্রিল নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর উপজেলার বাকালজোড়া ইউনিয়নের রামনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মেঘা তজু এবং মায়ের নাম হৃদয় শিসিলিয়া মানকিন। আট ভাই-বোনের মধ্যে পঞ্চম ছিলেন তিনি।
১৯৬৩ সালে নটরডেম কলেজ থেকে ব্যাচেলর অব আর্টস (বিএ) ডিগ্রি অর্জনকারী প্রমোদ মানকিন ১৯৬৮ সালে ময়মনসিংহ টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে ব্যাচেলর অব এডুকেশন (বি.এড) এবং ময়মনসিংহ ‘ল’ কলেজ থেকে ১৯৮২ সালে এলএলবি ডিগ্রি লাভ করেন।
ছাত্র ও কর্মজীবনের শুরু থেকেই রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলেন প্রমোদ তিনি। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগদানের মাধ্যমে তার সরাসরি সক্রিয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ।
গারো এবং খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি হিসেবে মানকিন জাতীয় সামাজিক সংস্থা- ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক ছিলেন। তিনি প্রতিষ্ঠানটির কেন্দ্রীয় সভাপতি দায়িত্বও পালন করেছেন।
স্কুল শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন প্রমোদ মানকিন। পরে তিনি আইন পেশা এবং এনজিও কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট হন। ১৯৮৭ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত কারিতাস- বাংলাদেশ’র ময়মনসিংহ অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রমোদ মানকিন বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সোসাইটির অন্যতম ভাইস প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি, খ্রিস্টান ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া মানবাধিকার কমিশনের সদস্য এবং একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সদস্যও ছিলেন।
এছাড়াও প্রমোদ মানকিন ছিলেন হালুয়াঘাট পাবলিক লাইব্রেরি’র আজীবন সদস্য ও হালুয়াঘাট প্রেসক্লাবের প্রধান উপদেষ্টা। তিনি ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বার স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয় এবং হালুয়াঘাট কারিগরি ও বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
সংগঠক হিসেবে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধেও তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। মুক্তিযুদ্ধে তিনি ভারতের মেঘালয়-শিববাড়ি উদ্বাস্তু শিবিরে পরম আন্তরিকতার সঙ্গে ৫০ হাজার ০০০ শরণার্থীর দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি ১৯৬৪ সালের ২৯ জানুয়ারি নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর উপজেলার জোয়াকিম আশাক্রার জ্যেষ্ঠ কন্যা মমতা আরেং এর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
১৯৯১, ২০০১, ২০০৮, এবং ২০১৩ সালের নির্বাচনে সংসদ সদস্য পদে নির্বাচিত হওয়া প্রমোদ মানকিন ২০০৮ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব নেন। এরপর ২০০৯ সালের ১৫ জুলাই থেকে ২০১২ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তারপর ২০১২ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এ দায়িত্বেই ছিলেন প্রমোদ মানকিন।
আপনার মন্তব্য