জাকির আজিজ

১৪ মে, ২০১৬ ১৬:০৭

১৫৩ ব্যক্তিকে হুমকি : আবদুল হকের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র

দেশের ১৫৩ ব্যক্তিকে হত্যার হুমকিদাতা সিলেটের আবদুল হকের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ। অর্থমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, ও কৃষিমন্ত্রী অধ্যাপক আনিসুজ্জামানসহ দেড় শতাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে হত্যার হুমকি দিয়ে পরে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন সিলেটের একটি মাদ্রাসার এ শিক্ষক।

জানা যায়, অভিযোগপত্র গত ৩১ মার্চ দেওয়া হলেও এতদিন এ বিষয়টি প্রকাশ হয় নি। অভিযোগপত্রভুক্ত দুই আসামি হলেন হাফেজ আবদুল হক ও তাঁর বন্ধু আমিনুর রহমান। বিভিন্ন সময়ে ফেসবুক, ইমেইল হ্যাক করার কারণে আবদুল হক এলাকা এবং বন্ধুদের কাছে ‘আবদুল হ্যাক’ নামেই পরিচিত।

আদালতে দেওয়া অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, আবদুল হক তাঁর দুই বন্ধুকে ফাঁসানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নম্বর সংগ্রহ করে প্রযুক্তি ব্যবহার করে মোবাইলে তাদের হত্যার হুমকি দিতেন। এই দুই বন্ধু হলেন সিলেটের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফয়জুর রহমান ও সালেহ আহম্মেদ ওরফে ফুয়াদ।

আরও পড়ুন : হুমকিদাতা এই হক, সেই আবদুল হক!

আবদুল হকের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ফয়জুর রহমান আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেছেন, আবদুল হক ইন্টারনেট ব্যবহার করে অনেক মানুষের ফেসবুক, ইমেইল হ্যাক করে। তাই এলাকার লোকে তাকে ‘আবদুল হ্যাক’ নামে ডাকে। এ নামে তাকে সবাই চেনে। আসামি আবদুল হক, আমিনুর রহমান ও তাদের বন্ধু ফয়জুরের বাড়ি সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার নোয়াকোট গ্রামে। আবদুল হক ও ফয়জুর একই মাদ্রাসা থেকে হাফেজ হন।

মন্ত্রী, এমপি, রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, লেখক-সাংবাদিকসহ দেশের ১৫৩ জন বিশিষ্ট নাগরিককে হত্যার হুমকির অভিযোগে 'সাইবার জঙ্গি' আবদুল হককে গত বছরের ২৪ নভেম্বর রাজধানীর তেজগাঁও এলাকা থেকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।  আর তাঁর বন্ধু আমিনুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয় ২৭ নভেম্বর।

ডিবির পুলিশ পরিদর্শক শাহ মো. আক্তারুজ্জামান ইলিয়াস বাদী হয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে আবদুল হকের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এই মামলায় দুই দফায় পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে ২ ডিসেম্বর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন আবদুল হক ও তার সহযোগী আমিনুর রহমান। সেই জবানবন্দীতে দেশের অন্যান্য বিশিষ্ট নাগরিকদের হুমকির পাশাপাশি আইনমন্ত্রী আনিসুল হককেও হত্যার হুমকির কথা স্বীকার করেন আবদুল হক।

আরও পড়ুন : ১৫৩ বিশিষ্ট জনকে হুমকি প্রদান করে আবদুল হক, রিমান্ডে স্বীকার

আবদুল হক আদালতের কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেছেন, ‘সিলেট শহরে আমি আমার বন্ধু ও প্রতিবেশী ফয়জুর ও নোমান তিনজন মিলে মুক্তস্বর সাংস্কৃতিক ফোরাম নামে একটি সাহিত্য ফোরাম গঠন করি। পরবর্তী সময়ে ফয়জুরের সঙ্গে আমার বিরোধ দেখা দেয় এবং বন্ধুত্বে ফাটল ধরে। আমি তথ্য প্রযুক্তির প্রতি প্রবল আগ্রহী। সেই সুবাদে প্রযুক্তিগত উপায়ে ফয়জুরকে শায়েস্তা করতে উপায় খুঁজতে থাকি। পরে আমি আবিষ্কার করি, অন্যের মোবাইল নম্বর ব্যবহার এসএমএস পাঠানো যায়। এতে আমি সফল হই। পরে ফয়জুর ও তার সহযোগী ফুয়াদের নম্বর ব্যবহার করে আমি অর্থমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, কৃষিমন্ত্রী, অধ্যাপক আনিসুজ্জামানসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে হুমকি মূলক বার্তা পাঠাই।’

অভিযোগপত্রে তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির উপপরিদর্শক সনত দেব উল্লেখ করেন, ‘আবদুল হক জানতে পারে যে, বিনু নামের একটি অ্যাপসসহ অন্যান্য ‘স্ফুফিং’ দ্বারা অন্যের মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে বার্তা পাঠানো সম্ভব। যে মোবাইল সিম নম্বর ব্যবহার করে বার্তা পাঠানো হয় সেই মোবাইল সিম নম্বরে বার্তার একটা পিন নম্বর যায়। সেই পিন নম্বর সংগ্রহ করে বিনু অ্যাপসের মাধ্যমে অন্যের মোবাইল সিম নম্বর ব্যবহার করে বার্তা পাঠানো যায়। পরে আসামি আমিনুর রহমানকে আবদুল হক এ বিষয়টি খুলে বলে। পরে আমিনুর ফয়জুরের মোবাইলের পিন নম্বর সংগ্রহ করে। এরপর আবদুল হক ফয়জুরের পিন নম্বর সংগ্রহ করে বিনু অ্যাপসহ অন্যান্য স্ফুফিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের হত্যার হুমকি দিয়েছেন।’

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিলেট মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পুলিশ পরিদর্শক শিবেন্দ্রচন্দ্র দাশ জানান, আইনমন্ত্রীকে হত্যার হুমকির মামলায় গত ১১ জানুয়ারি আবদুল হক ও আমিনুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে আদালত তাদের এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

আবদুল হক সিলেটের জকিগঞ্জ শাহবাগ জামিয়া কাসিমুল উলুম মাদরাসার কম্পিউটার শিক্ষক ছিলেন। তিনি সুনামগঞ্জের ছাতক থানার ইসলামপুর ইউনিয়নের গাংপাড় নোয়াকোট গ্রামের খলিলুর রহমানের ছেলে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত