সিলেটটুডে ডেস্ক

১৬ মার্চ, ২০১৫ ১৪:৫৯

অভিজিৎ রায় হত্যা: তদন্তে দৃশ্যমান অগ্রগতি নাই

লেখক, গবেষক, ব্লগার, প্রকৌশলী ড. অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের ১৯ দিনে মামলায় দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি নেই। অনলাইন সন্ত্রাসবাদের উস্কানিদাতা ফারাবী শফিউর রহমান ছাড়া সন্দেহভাজন আর কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ, নেই কার্যকর কোন অভিযানও।

গ্রেফতারকৃত জঙ্গি ফারাবীকে গ্রেফতারের পর তার সিলেটের বাসায় অভিযান পরিচালনা করা হলেও এর বাইরে আর কোন পুলিশী অভিযান নেই। শীর্ষ জঙ্গি রানাকে গ্রেফতারের জন্যে ডিএমপি’র পক্ষ থেকে পুরষ্কারের ঘোষণা করা হয়েছে কিন্তু অদ্যাবধি তার টিকিটিও উদ্ধার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কোন বাহিনীই।

এর বাইরে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম যারা অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের পর পরই টুইটার বার্তায় হত্যার দায় স্বীকার করে উল্লাস প্রকাশ করেছিল তাদের কেউই গ্রেফতার হয়নি।

অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের পর তিনটি দল তদন্ত করছে। এর দুটি গোয়েন্দা বিভাগের করা তদন্ত কমিটি। অন্যটি এফবিআই। কিন্তু অদ্যাবধি কোন ধরণের অগ্রগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে না।
আদালতের অনুমতি নিয়ে হতাকাণ্ডের আলামত মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিশন (এফবিআই)-এর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা আশা করছেন এর মাধ্যমে তদন্তে দৃশ্যমান অগ্রগতি হবে।

এদিকে তদন্ত সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, ‘অভিজিৎ হত্যায় জড়িতদের ধরতে এরই মধ্যে বেশ কিছু জায়গায় অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। ফারাবীর সঙ্গে যাদের যোগাযোগ ছিল কিংবা যাদের সঙ্গে ফেসবুকে বন্ধুত্ব ছিল তাদের ব্যাপারে মিশ্র তথ্য থাকায় অভিযান সফল হচ্ছে না। তবে যেভাবে অভিযান চালানো হচ্ছে এটা অব্যাহত থাকলে হত্যাকারীরা খুব শিগগির ধরা পড়ার সম্ভবনা রয়েছে।

অভিজিৎ হত্যার সময় পুলিশের কোনো গাফিলতি ছিল কি-না তা খতিয়ে দেখতে যুগ্ম কমিশনার রেজাউল করিমকে প্রধান করে একটি তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘ঘটনার সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে কোন কোন পুলিশ সদস্য এবং পুলিশ কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করছিলেন তাদের নামের তালিকা সংগ্রহ করা হয়েছে। তারা কখন কোথায় কার সঙ্গে কথা বলেছিলেন, তাও জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।’ এ বিষয়ে খুব দ্রুত প্রতিবেদন জমা দেওয়া যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন যুগ্ম কমিশনার রেজাউল করিম।

অভিজিৎ হত্যা তদন্ত করতে গোয়েন্দা পুলিশের মুখপাত্র মনিরুল ইসলামকে প্রধান করে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। সেটিও এখনো খুব বেশি আলোর মুখ দেখেছে, এমনটি বলার যৌক্তিকতা নেই। তবে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনাস্থলের আলামত সংগ্রহ থেকে শুরু করে সব ধরণের তদন্তকাজ এগিয়ে চলছে। ফারাবীর দেওয়া তথ্যানুযায়ী সন্দেহভাজন হত্যাকারীদের তালিকা প্রস্তুত করে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালানো হয়েছে। এরই মধ্যে আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে হত্যার আলামত যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়েছে। আলামতগুলি পরীক্ষা করলে আশানুরূপ ফল পাওয়া যেতে পারে। তা ছাড়া তদন্তকাজ গভীরভাবে এগিয়ে যাচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশী গোয়েন্দাদের তদন্তকাজে সহযোগিতার জন্য এফবিআই এরই মধ্যে অনেক কাজ করেছে। তার মধ্যে প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা শুনে খুনিদের ছবি আঁকা, কিছু নমুনা পরীক্ষা করা, যুক্তরাষ্ট্রে এফবিআই ল্যাবে আলামত পাঠানো হয়েছে।’

অভিজিৎ হত্যায় সন্দেহভাজন প্রধান আসামি ফারাবিকে ১০ দিনের রিমান্ড শেষে নতুন করে আইসিটি আইনে করা মামলায় পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। এখন তিনি গোয়েন্দা হেফাজতে রয়েছেন।

এ ব্যাপারে অভিজিৎ রায়ের বাবা শিক্ষাবিদ অজয় রায় সংবাদমাধ্যমকে জানান- ‘অভিজিৎ হত্যার তদন্তের জন্য গোয়েন্দাদের পক্ষ থেকে দুটি কমিটি করা হলো। এরপরেও তো তদন্তের কোনো অগ্রগতি নেই। এফবিআই এসে তদন্ত করছে, কেউ তো ধরা পড়ছে না। ছেলে হত্যার বিচার কি বাংলার মাটিতে হবে, নাকি অধরাই থেকে যাবে জঙ্গিবাদী মৌলবাদ শক্তি? খুনী যেই হোক তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা দেশের জন্য দায়িত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

উল্লেখ্য, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সামনে জঙ্গি মৌলবাদীদের চাপাতির আঘাতে বিজ্ঞানমনস্ক লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় নিহত হন। ঘটনার পরদিন বাদী হয়ে অভিজিতের বাবা অজয় রায় শাহবাগ থানায় একটি মামলা করেন। পরে মামলাটি গোয়েন্দা বিভাগে হস্তান্তর করা হয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত