নিজস্ব প্রতিবেদক

২৭ আগস্ট, ২০১৬ ১৯:২০

বেশি কথা বললে বিদ্যুৎ পাবেন না, হারিকেন জ্বালিয়ে চলবেন

বেশি কথা বললে কিন্তু বিদ্যুৎ পাবেন না। আমার কোন কিছু আসে যায় না। বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করে দেই তাহলে কিন্তু বিদ্যুৎ আর পাবেন না। আর ভবিষ্যতে কেউ করেও দিবে সেই আশাও করতে পারবেন না। কাজেই সবাইকে অন্ধকারে থাকতে হবে। আরো যদি বলেন, তাহলে যেগুলো পাওয়ার প্লান্ট আছে সবগুলো বন্ধ করে দেই। তাহলে আর কোন অসুবিধা ও দূষণ হবে না। আপনারা হারিকেন বা কুপি বাতি জ্বালিয়ে চলবেন।

শনিবার বিকেলে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরোধীতাকারীদের উদ্দেশ্যে অনেকটা ঠাট্টার ছলে এমন কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই ইস্যুতে নিজের অবস্থান তুলে ধরতেই শনিবারের সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষ তো বিদ্যুৎ চায়। ঐ এলাকার মানুষ অন্ধকারে থাকতে চায় না। তাদের জীবন জীবিকার পথ কি আছে? তাঁরা হয় সুন্দরবনে চুরি করে গাছ কাটবে অথবা গাছ কাটতে যেয়ে বাঘের পেটে যাওয়া। বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে ঐ এলাকার মানুষ চুরি করে গাছ কাটবে না। তাদের কর্মপ্সংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। মানুষ আরো সুন্দরভাবে বাঁচার চেষ্টা করবে। তখন আর কেউ গাছ কাটবে না। ফলে গাছ রক্ষা পেলে সুন্দরবন উপকৃত রক্ষা হবে।

আরও পড়ুন : তাদের উদ্দেশ্য কি, টাকা পায় কোথায়?

আল্ট্রা সুপার ক্রিটিকাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র পৃথিবীর সবচেয়ে আধুনিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাধারণত বিদ্যুতকেন্দ্রে কয়লা পোড়ানোর দক্ষতা যেখানে ২৮ ভাগ সেখানে আল্ট্রা সুপার বিদ্যুতকেন্দ্রে তা ৪২-৪৩ ভাগ। একই পরিমাণ কয়লা পুরিয়ে দ্বিগুন বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। উন্নতমানের কয়লা আমদানি হবে অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে।

বিদ্যুৎকেন্দ্রে চিমনির উচ্চতা থাকবে উচ্চতা ২৭৫ মিটার। আর এর থেকে যে কার্বন-ডাই অক্সাইড বের হবে তা ১ দশমিক ৬ কিলোমিটারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। চিমনি থেকে নির্গত ধোয়াও আধুনিক প্রযুক্তিতে ব্যবহার করা যায়। কার্বন তৈরী করা যায়। বহুল ব্যবহৃত কার্বন মাস্ক ফেসিয়াল কার্বন থেকেই তৈরী হয়।

বিএনপি নেত্রী বলেছেন, এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নাকি লাখ লাখ মানুষের জীবন জীবিকা ধ্বংস করবে। বিদ্যুৎ কেন্দ্র মানুষের জীবন জীবাকা ধ্বংস কয়রে আর বিদ্যুৎ পেলে মানুষের জীবন থেমে যায় তা আমরা শুনিনি। সেটা আপনারা বিচার করবেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বড়পুকুরিয়া কিন্তু আধুনিক বিদ্যুতকেন্দ্র না তারপরও এর বিরোধিতা করা হয় নি। ২০০০ সালে বড়পুকুরিয়ার বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করি আমি। এটা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক নয় বিধায় খালেদা জিয়া ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে কিন্তু বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বন্ধ কয়রে দেন নি। তখন পরিবেশের জন্য কোন মায়াকান্না ছিলো না। ২০০১ এর পর থেকে যখন বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হয়েছে কেউ তো কিছুই বলেন নি যে ওখানে ক্ষতি হচ্ছে।

দিনাজপুরের ফসলের কোন ক্ষতি হয়নি। ঐ খানে তিন ফসলি জমিতে ধান হচ্ছে। আম গাছের ছবি দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেখেন কত ভালো আম হচ্ছে। ফুলবাড়িতে পীট কয়লায় আন্দোলনরত শ্রমিকদের উপর কিন্তু খালেদা জিয়াই গুলি চালিয়েছেন।

ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, জাপান, চীন প্রভৃতি দেশের উদাহরণ দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বেশিরভাগই কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র শহরে ও শহরের পাশেই ও বন সমৃদ্ধ জায়গায়। সেখানে পরিবেশের কোন ক্ষতি হচ্ছে না।

রামপাল বিদ‌্যুৎকেন্দ্র যে সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি করবে না- সংবাদ সম্মেলনে তা জোরালোভাবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এই প্রকল্প সরানোর দাবি প্রত‌্যাখ‌্যান করেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত