সিলেটটুডে ডেস্ক

৩১ আগস্ট, ২০১৬ ১৭:৫৪

মীর কাসেমের বিচার ‘ত্রুটিপূর্ণ’, ফাঁসি ‘স্থগিত করতে হবে’, অ্যামনেস্টির আবদার

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদণ্ড স্থগিতের দাবি জানিয়েছে  আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। মঙ্গলবার সংস্থাটির ওয়েবসাইটে এক বিবৃতিতে  বলা হয়েছে, ‘ত্রুটিপূর্ণ বিচারে মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত প্রবীণ রাজনৈতিক নেতার ফাঁসি অবশ্যই বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে  স্থগিত করতে হবে।’

সংস্থাটির দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক পরিচালক চম্পা প্যাটেল বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সংঘটিত অপরাধের ন্যায়বিচার দেশটির জনগণের প্রাপ্য। কিন্তু ক্রমাগত মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার মাধ্যমে এই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে না। বড়জোর এতে দেশের মধ্যে অস্থিরতা ও অসন্তোষ এবং সমাজিক বিভাজন সৃষ্টি হবে।’

সংবাদে বলা হয়, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট মঙ্গলবার জামায়াতে ইসলামীর অন্যতম প্রধান অর্থদাতা মীর কাশেম আলীর রিভিউ আপিল খারিজ করে মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল আপিল বিভাগ।

গত সপ্তাহে জাতিসংঘের কিছু বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ সরকারের প্রতি মীর কাশেম আলীর মামলাটি পুনর্বিবেচনা করার আবেদন জানান। সেই দাবি মতে মামলাটির বিচার প্রক্রিয়া ছিল ‘ভুল’ এবং এতে ‘অনিয়ম’ ঘটেছে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ বেশি কিছু মানবাধিকার সংস্থা আইসিটির কাছে যথাযথ বিচারের দাবি জানায়। এতে আরও বলা হয়, বিবাদী পক্ষের আইনজীবীদের মামলার প্রস্তুতির জন্য যথেষ্ট সময় দেওয়া হয়নি এবং সাক্ষীর সংখ্যাও কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।

চম্পা প্যাটেল আরও বলেন, ‘আইসিটি প্রথম থেকেই অন্যায় বিচার করে আসছে। মৃত্যুদণ্ড একটি নিষ্ঠুর শাস্তি, যা কোনোভাবেই সুবিচার নয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা আত্মত্যাগ করেছেন, তারা সুবিচারের দাবিদার। মৃত্যুদণ্ড বিলোপের উদ্দেশ্যে এ ধরনের সব শাস্তি কার্যকর করা এই মুহূর্তে স্থগিত করা প্রয়োজন।’ তিনি আর বলেন, ‘সংস্থাটি মীর কাসেম আলীর ছেলে মীর আহমেদ বিন কাশেম আলির জন্যও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। গত ৯ আগস্ট মীর কাশেম আলীকে কোনও গ্রেফতারি পরোয়ানা ছাড়াই সাদা পোশাকের পুলিশ গ্রেফতার করে। তাকে নির্জন কারাবাসে রাখা হয়, যদিও তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনও অভিযোগ নেই।’

চম্পা প্যাটেল বলেন, ‘আন্তর্জাতিক গুম দিবসে বাংলাদেশ সরকারের উচিত মীর আহমেদ বিন কাশেমের অন্তর্ধান রহস্যের তদন্ত করা।’

খবরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সম্পর্কে বলা হয়, ‘আইসিটি হচ্ছে বাংলাদেশ সরকারের তৈরি একটি আদালত, যা ২০১০ সালে গঠিত হয়। এই আদালতে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত ও বিচার করা হয়। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ সরকারের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানায়। কিন্তু অভিযুক্তরা যেন সুবিচার পায় এবং তাদের যেন মৃত্যুদণ্ড দেওয়া না হয়, এই দাবি রাখে। এই আদালতে অনুষ্ঠিত পূর্ববর্তী মামলাগুলোতেও অনিয়মের অভিযোগ ছিল। ২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত পাঁচ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ২০১৬ সালে অ্যামনেস্টি মোট আট জনের শাস্তির তথ্য নথিভুক্ত করেছে। শেষ মৃত্যুদণ্ডটি দেওয়া হয়েছে মতিউর রহমান নিজামীকে, এ বছরের ১০ মে। ’

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এই মৃত্যুদণ্ডের নিন্দা জানায়, তাদের দাবি, ‘পরিস্থিতি, অপরাধ ও অন্যান্য বিষয় বিবেচনা না করেই যেভাবে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হচ্ছে তাতে বিচারিক পদ্ধতির অনিয়মি প্রকাশ পায়।’

সংস্থাটি বিশ্বজুড়েই দীর্ঘদিন ধরে মৃত্যুদণ্ড বিলুপ্ত করে দেওয়ার পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত