সিলেটটুডে ডেস্ক

৩১ আগস্ট, ২০১৬ ২১:৩৩

বিচার করে যাব, যতই বাধা আসুক : প্রধানমন্ত্রী

দেশে যুদ্ধাপরাধীদের চলমান বিচার অব্যাহত থাকবে বলে দৃঢ় সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশ এবং দেশের মানুষের জন্য যেকোন ত্যাগ স্বীকারে তিনি সবসময় প্রস্তুত রয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্বজন হারাদের ব্যথা আমি বুঝি। একাত্তরে যারা আপনজন হারিয়েছে তাদের দুঃখ, বেদনা আমি মর্মে উপলদ্ধি করি। তাই যেমন আমার পিতা-মাতা, ভাইয়ের হত্যাকারীদের বিচার করেছি তেমনি যারা আপনজন হারিয়েছেন তাদের হত্যাকাণ্ডের বিচারও আমি করে যাচ্ছি এবং করে যাব। যতই বাধা, বিপত্তি প্রতিকূলতা আসুক।’

একে একে যে অন্যায়গুলা হয়েছে সেই অন্যায়গুলোর বিচার তার সরকার করতে পেরেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে যাচ্ছি। যে বিচার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শুরু করে গিয়েছিলেন। কয়েকজনের ইতোমধ্যে রায়ও কার্যকর হয়েছে, এটা অব্যাহত থাকবে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার বিকেলে ফার্মগেটস্থ বাংলাদেশ কৃষিবিদ ইনষ্টিটিউশন মিলনায়তনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের উদ্যোগে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একে একে যে অন্যায়গুলা হয়েছে সেই অন্যায়গুলোর বিচার আমরা করতে পেরেছি। বঙ্গবন্ধু হতাকাণ্ডের বিচার করেছি । খুনীদের ফাঁসি হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে যাচ্ছি। যে বিচার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শুরু করে গিয়েছিলেন। কয়েক জনের ইতোমধ্যে রায়ও কার্যকর হয়েছে, এটা অব্যাহত থাকবে।’

তিনি এজন্য দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, আমি কৃতজ্ঞতা জানাই বাংলাদেশের জনগণের প্রতি। কারণ বাবা-মা-ভাই সব হারিয়ে একা, নিঃশ্ব, রিক্ত, নিঃসঙ্গ হয়ে এদেশের মাটিতে ফিরে এসেছিলাম। কিন্তু লাখো কোটি মানুষের যে ভালবাসা, যে স্নেহ, যে সাহায্য, আওয়ামী লীগসহ আমাদের প্রতিটি সহযোগী সংগঠন এবং দেশের মানুষ তাদেরই সহযোগিতায় এটা আমরা করতে পেরেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যদি সংকল্প দৃঢ় থাকে, যেকোন অর্জন সম্ভব। আর বঙ্গবন্ধুই বলেছেন মহৎ অর্জনের জন্য মহান ত্যাগের দরকার। যে কোন ত্যাগ স্বীকারে আমি সব সময় প্রস্তুত, এদেশের জন্য। এদেশের মানুষের জন্য।’

শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘আমি কখনও ভুলতে পারি না এদেশের মানুষের জন্যই তো আমার, বাবা-মা, ভাইয়েরা জীবন দিয়েছেন। কাজেই্ এদেশের মানুষের কল্যাণের জন্য, তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য, এই মানুষকে একটু সুন্দর জীবন দেয়ার জন্য যেকোন ত্যাগ স্বীকারে সবসময়ই আমি প্রস্তুত।’

ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তৃতা করেন সাংবাদিক-গবেষক সৈয়দ বদরুল আহসান। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসেন অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন।

অনুষ্ঠনের শুরুতেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবসহ ১৫ আগষ্টের শহীদদের স্মরণে একমিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বলেন, ১৫ই আগস্ট কারা ঘটিয়েছিল, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা চায়নি। বাংলাশের বিজয়কে মেনে নিতে পারেনি। বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা হোক-তারা চায়নি। তাদেরই কিছু দোসর এবং এদেশীয় দালাল এই জঘন্য ঘটনা ঘটায়।

তিনি বলেন, ১৫ আগষ্টের পর থেকে আমরা কি দেখেছি-বাংলাদেশে ইতিহাস বিকৃতি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সব বিজয় ইতিহাসকে সম্পূর্ণ মুছে ফেলার চেষ্টা। একটা প্রজন্মকে দেশের সঠিক ইতিহাসই জানতে দেয়া হয়নি। ‘৭৫ থেকে ’৯৬ পর্যন্ত ২১ বছর এদেশে জাতির পিতার নাম নিষিদ্ধ ছিল, তার ৭ মার্চের ঐতিহাসিক পর্যন্ত বাজানো যেত না। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ বাজাতে গিয়ে ছাত্রলীগের নেতা চুন্নু জীবন দেয়। এভাবে আওয়ামী লীগের বহুনেতা কর্মী জীবন দিয়ে হলেও প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে বঙ্গবন্ধুর চেতনাকে ধরে রাখার চেষ্টা করেছে।

বিকৃত ইতিহাস সৃষ্টির অপচেষ্টা থেকেই দেশে সামাজিক ব্যাধি জঙ্গিবাদের সৃষ্টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা জাতি যদি বিকৃত ইতিহাস শুনতে থাকে তাহলে কিন্তু তাদের চরিত্রও বিকৃত হয়ে যায়। সেই বিকৃতি কিন্তু এখন আমরা সমাজে দেখি । যেখান থেকে জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসের উত্থান ঘটে। যা আজকে সমাজকে কুরে খাচ্ছে।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত