সিলেটটুডে ডেস্ক

০৮ জানুয়ারি, ২০১৭ ০২:৪৩

‘হরতাল পছন্দ না হলে রামপাল প্রকল্প বাতিল করুন’

সুন্দরবন রক্ষার দাবিতে আগামী ২৬ জানুয়ারি ডাকা হরতালের কর্মসূচি যদি সরকারের পছন্দ না হয়, তাহলে এর আগেই রামপাল প্রকল্প বাতিলের ঘোষণা দিয়ে দেশের মানুষের আশা পূরণ করার আহ্বান জানিয়েছেন তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব আনু মুহাম্মদ।

শনিবার (৭ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিলসহ সুন্দরবন রক্ষার দাবিতে বিশ্ব প্রতিবাদ দিবসের কর্মসূচিতে এ আহ্বান জানান তিনি। কর্মসূচিটি ভারত, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, স্পেন, যুক্তরাষ্ট্র, ফিনল্যান্ড ও কানাডায় প্রবাসী বাংলাদেশি ও পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে বিশ্বের ১০টি দেশে পালিত হয়। সর্বপ্রাণ সাংস্কৃতিক শক্তি নামের একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে রাজধানীর শাহবাগে ঢাকার কর্মসূচিটি পালিত হয়। এতে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির নেতারা বক্তব্য দেন। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ওই কর্মসূচি পালিত হয়েছে।

কর্মসূচিতে দেওয়া বক্তব্যে জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব আনু মুহাম্মদ বলেন, সরকার সুন্দরবন ধ্বংস করতে ভারতকে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র করতে দিচ্ছে। বাঁশখালীতে মানুষ হত্যা করে চীনকে, রূপপুরে ভয়াবহ দূষণকারী পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র রাশিয়াকে ও বঙ্গোপসাগরে যুক্তরাষ্ট্রকে এলএনজি টার্মিনাল করতে দিচ্ছে। দেশের প্রাণ-প্রকৃতি ও জীবন ধ্বংস করে কিছু বিদেশি মুনাফাখোরের হাতে দেশের সম্পদ তুলে দিচ্ছে।

আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, ‘চারদিকে আমরা শুধু উন্নয়ন উন্নয়ন শুনতে পাই, কিন্তু কান পাতলে সুন্দরবনের কান্না শুনতে পাই।’ সুন্দরবনের এই কান্না থামাতে দেশবাসীকে আরও সংগঠিতভাবে আন্দোলনে নামার আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, সুন্দরবন রক্ষার দাবিতে আগামী ২৬ জানুয়ারি যে হরতালের ডাক দেওয়া হয়েছে, তা যদি সরকারের পছন্দ না হয়, তাহলে এর আগেই ওই প্রকল্প বাতিলের ঘোষণা দিয়ে দেশের মানুষের আশা পূরণ করতে পারে।

তিনি বলেন, “রামপাল-ওরিয়ন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ শতাধিক বাণিজ্যিক বনগ্রাসী, ভূমিগ্রাসী প্রকল্প ঘিরে ফেলেছে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনকে।

“দেশ-বিদেশের সচেতন মানুষ, ইউনেস্কোর উদ্বেগ-বিরোধিতা অগ্রাহ্য করে মহাজোট সরকার ভারতের এনটিপিসিসহ দেশি-বিদেশি লুটেরাদের স্বার্থে রামপাল প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এক হাতে পরিবেশ পদক, অন্য হাতে মৃত্যু পরোয়ানা ধারণ করছেন।”

কয়েকটি জরিপের বরাত দিয়ে তিনি দাবি করেন, দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ রামপালে এই বিদ‌্যুৎ প্রকল্পের বিপক্ষে।

সর্বপ্রাণ শক্তির পক্ষে বাকি বিল্লাহর সঞ্চালনায় কর্মসূচিতে শিল্পী কফিল আহমেদের নেতৃত্বে সংগীত পরিবেশন করা হয়।

একই দাবিতে বাংলাদেশ সময় ভোরে মেলবোর্নে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়। অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসীরা মেলবোর্নের প্রাণকেন্দ্র ফেডারেশন স্কয়ারে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। বক্তারা বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের বিরোধিতা করেন। জাতীয় কমিটির যুক্তরাজ্য শাখা পূর্ব লন্ডনের শহীদ আলতাব আলী পার্কে স্থানীয় সময় বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত সংহতি সমাবেশ করে। এতে বিভিন্ন পরিবেশবাদী ও মানবতাবাদী সংগঠন ও প্রবাসী বাংলাদেশিরা বিশেষ করে ছাত্ররা অংশ নেন।

আন্তর্জাতিক সংস্থা এশিয়ান পিপলস মুভমেন্ট অন ডেবট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছে রামপাল প্রকল্প বাতিলের আহ্বান জানিয়ে খোলা চিঠি দেওয়া হয়েছে। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো চিঠিতে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন রক্ষায় রামপাল প্রকল্প বাতিলের জন্য রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত