সিলেটটুডে ডেস্ক

১৯ জুলাই, ২০১৭ ০১:৪৫

হুমায়ূনহীন ৫ বছর; আজ হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুদিন

যদি মন কাঁদে তুমি চলে এসো চলে এসো এক বরষায়/এসো ঝরঝর বৃষ্টিতে/জলভরা দৃষ্টিতে/এসো কোমল শ্যামল ছায়া... যদিও তখন আকাশ থাকবে বৈরী/কদমগুচ্ছ হাতে নিয়ে আমি তৈরি/ উতলা আকাশ মেঘে মেঘে হবে কালো ঝলকে ঝলকে নাচিবে বিজলি আলো/ তুমি চলে এসো এক বরষায়।' এই গানের কথাগুলোর মতোই চলে এলো আরেক বরষা।

এ শ্রাবণেও বৃষ্টি হচ্ছে, হবে। বর্ষায় মাতোয়ারা হুমায়ূন বৃষ্টিবন্দনায় লিখেছিলেন। তাঁর লেখাগুলো আছে আজও; কিন্তু তিনি নেই!

বাংলাদেশের কিংবদন্তিতুল্য কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী আজ (১৯ জুলাই)।

২০১২ সালের ১৯ মে যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন। বাংলাদেশে নানা অনুষ্ঠানে তার ভক্ত-শুভার্থীরা কামনা করেছিলেন তিনি সুস্থ হয়ে ফিরে আসবেন তেরশ নদীর এই দেশে। কিন্তু মানুষের সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। চলে গেছেন না ফেরার দেশে। মৃত্যুর তিন দিন পর ২৪ জুলাই নিজের গড়া নুহাশ পল্লীর লিচুতলায় দাফন করা হয় তাঁকে।

তাঁকে বলা হয় বাংলা সাহিত্যের সর্বকালের অন্যতম প্রধান জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক। স্বাধীনতা পরবর্তী শ্রেষ্ঠ জনপ্রিয় লেখক হুমায়ুন আহমেদকে বাংলা কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যেরও পথিকৃৎ বলা হয়। নাট্যকার হিসেবে যেমন নন্দিত চলচ্চিত্রকার হিসেবেও তেমনই সমাদৃত। বাংলা কথাসাহিত্যের সংলাপ প্রবণে নতুন শৈলীর জনক হুমায়ুন আহমেদের দুই শতাধিক গ্রন্থের বেশকিছু পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত রয়েছে তার গ্রন্থ। গত ১৯ জুলাই ২০১২ তারিখে এমন একজন গুণী মানুষ হারিয়েছে বাংলাদেশ এবং বাংলা ভাষাভাষী মানুষ।

বাংলা সাহিত্যের এই প্রবাদ পুরুষ বাবার চাকরির সূত্রে তার শৈশব কেটেছে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায়। দেখেছেন বহু মানুষ এবং তাদের জীবনানুভূতি। এর ফলেই হুমায়ুন আহমেদের লেখায় উঠে এসেছে বাঙালি মধ্যবিত্তের নানা সংকট বিচিত্র জীবনযাপন আর হৃদয়ের টানাপড়েন। লেখাপড়া বগুড়া জেলা স্কুল, ঢাকা কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে। অধ্যাপনা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করলেও সবকিছু ছেড়ে লেখালেখি নাটক আর চলচ্চিত্র নির্মাণই হয়ে ওঠে তার নেশা ও পেশা।

হুমায়ূন আহমেদ বলেছিলেন, মৃত্যুর আগেরদিন পর্যন্ত লিখে যেতে চাই। লেখালেখিই আমার বিশ্রাম। লেখালেখি বন্ধ হলে আমার বেঁচে থাকা অর্থহীন হয়ে পড়বে, আমি বাঁচতে পারব না। পাঠকদের উদ্দেশে তার আবেদন ‘দোয়া করবেন, আমি যেন আমৃত্যু লিখে যেতে পারি।’ তার সেই আশা পূরণ হয়েছিল। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত লিখেছেন। নিউইয়র্কে হাসপাতালের বিছানায় শুয়েও তিনি ‘দেয়াল’ উপন্যাস লিখেছেন।

হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাসে নিজের প্রতিভার বিস্তার ঘটলেও তার শুরুটা কবিতা দিয়ে। এরপর নাটক, শিশুসাহিত্য, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, চলচ্চিত্র পরিচালনা থেকে শিল্প-সাহিত্যের বহু ক্ষেত্রে তিনি রেখে গেছেন নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর। হুমায়ূন আহমেদ বাংলা সাহিত্যে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর জনকও বটে। ১৯৭২ সালে প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ প্রকাশের পর পরই তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে।

হুমায়ূন আহমেদ ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুরে জন্মগ্রহণ করেন। ডাক নাম কাজল। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ও মা আয়েশা ফয়েজের প্রথম সন্তান তিনি। ১৯৬৫ সালে বগুড়া জেলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক, ১৯৬৭ সালে ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক, ১৯৭০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়ন শাস্ত্রে স্নাতক ও ১৯৭২ সালে স্নাতকোত্তর পাস করেন। ১৯৮২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ডাকোটা ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।

নব্বই দশকের মাঝামাঝি তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করে লেখালেখিতে পুরোপুরি মনোযোগ দেন। হুমায়ূন আহমেদের লেখা উল্লেখযোগ্য উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে নন্দিত নরকে, লীলাবতী, কবি, শঙ্খনীল কারাগার, গৌরীপুর জংশন, নৃপতি, বহুব্রীহি, এইসব দিনরাত্রি, দারুচিনি দ্বীপ, শুভ্র, নক্ষত্রের রাত, কোথাও কেউ নেই, আগুনের পরশমণি, শ্রাবণ মেঘের দিন, জোছনা, জননীর গল্প প্রভৃতি। পরিচালিত চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে আগুনের পরশমণি, শ্যামল ছায়া, শ্রাবণ মেঘের দিন, দুই দুয়ারী, চন্দ্রকথা ও নয় নম্বর বিপদ সংকেত। সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত তার সর্বশেষ চলচ্চিত্র ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ও জয় করেছে দর্শক ও সমালোচকদের মন।

টিভি নাট্যকার হিসেবেও হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন সমান জনপ্রিয়। আশির দশকের মাঝামাঝি তার প্রথম টিভি নাটক ‘এইসব দিনরাত্রি’ তাকে এনে দিয়েছিল তুমুল জনপ্রিয়তা। তার হাসির নাটক ‘বহুব্রীহি’ এবং ঐতিহাসিক নাটক ‘অয়োময়’ বাংলা টিভি নাটকের ইতিহাসে অনন্য সংযোজন। নাগরিক ধারাবাহিক ‘কোথাও কেউ নেই’ এর চরিত্র 'বাকের ভাই' বাস্তব হয়ে ধরা দিয়েছিল টিভি দর্শকদের কাছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত