সিলেটটুডে ডেস্ক

২৬ জানুয়ারি, ২০১৮ ১১:৫৪

ফুলের টব থেকে নিয়াজুলের অস্ত্র উদ্ধার

নারায়ণগঞ্জে মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী ও তার সমর্থকদের ওপর হামলার ঘটনায় সাংসদ শামীম ওসমানের ক্যাডার হিসেবে পরিচিত নিয়াজুল ইসলামের অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে নিয়াজুল গ্রেপ্তার হননি।

বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে নগরীর চাষাঢ়া সাধু পৌলের গির্জার সামনের ফুলের টবে পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় নিয়াজুলের পিস্তলটি উদ্ধার করে পুলিশ।

জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শরফুদ্দিন জানান, বৃহস্পতিবার রাত ২টার দিকে নগরীর চাষাঢ়ায় সেইন্ট পলস চার্চের সামনে একটি ফুলের টবে পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় অস্ত্রটি পাওয়া যায়।

“পিস্তলের ম্যাগাজিনে ১০ রাউন্ড গুলি ছিল। অস্ত্রটি উদ্ধার হলেও নিয়াজুলকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।”

গত ১৬ জানুয়ারি নগরীর চাষাঢ়ায় ফুটপাতে হকার বসাকে কেন্দ্র করে মেয়র আইভী ও তার সমর্থকদের ওপর হামলা হয়। এতে সাংসদ শামীম ওসমানের সমর্থকেরা জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। মেয়র ও তার সমর্থকদের জমায়েতে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি করে আলোচনায় আসেন নিয়াজুল ইসলাম খান। পরে তাকে গণপিটুনি দেওয়া হয়।

হামলায় মেয়র আইভী ও সাংবাদিকসহ অর্ধশতাধিক আহত হন। ঘটনার পর থেকে নিয়াজুল পলাতক।

ওই রাতেই নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় নিয়াজুলের পক্ষ থেকে একটি জিডি করা হয়েছে, সেখানে ‘হামলা চালিয়ে’ নিয়াজুলের অস্ত্রটি ‘ছিনতাইয়ের জন্য’ মেয়র আইভীর সমর্থক ১৭ জনকে দায়ী করা হয়েছে।

এদিকে ঘটনার পাঁচদিন পর মেয়র আইভীকে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে নিয়াজুলসহ নয় জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত পরিচয় আরও হাজার খানেক আসামির বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দাখিল করেন সিটি করপোরেশনের আইন কর্মকর্তা জি এম এ সাত্তার। পুলিশ তা মামলা হিসেবে না নিয়ে জিডি হিসেবে রের্কড করে।

সেদিন সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের উপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে অজ্ঞাতপরিচয় পাঁচ শতাধিক লোকের বিরুদ্ধে আলাদা একটি মামলা করেছেন সদর থানার পরিদর্শক জয়নাল আবেদীন।

মেয়র আইভীর জমায়েতে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি করা নিয়াজুল ইসলাম খান নারায়ণগঞ্জ শহরের চাঁদমারী এলাকার বাসিন্দা। যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন তিনি। এলাকায় নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের আওয়ামী লীগের সাংসদ এ কে এম শামীম ওসমানের ক্যাডার হিসেবে পরিচিত। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তিনি এলজিইডির ঠিকাদারি ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন।

জানা যায়, ১৯৮৬ সালে এরশাদের সময় নাসিম ওসমান সাংসদ হলে নিয়াজুলের উত্থান হয়। ১৯৮৮ সালে সংঘটিত জোড়া খুনের (কামাল ও কালাম) মামলার আসামি ছিলেন তিনি। ১৯৯৬ সালে শামীম ওসমান সাংসদ নির্বাচিত হলে নিয়াজুল অস্ত্রের লাইসেন্স পান। নিজেকে যুবলীগের নেতা পরিচয় দিয়ে চলতেন।

নগরের চাঁদমারীতে সেনাবাহিনীর জায়গার বস্তি নিয়ন্ত্রণ করতেন নিয়াজুল ইসলাম। এক-এগারোর সময় সেনাবাহিনী ওই বস্তি উচ্ছেদ করে। এ ছাড়া পোশাক কারখানার ঝুট ব্যবসা, ভূমিদস্যুতাসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে আছে নিয়াজুলের নাম।

নিয়াজুল ইসলামের ভাই যুবলীগের ক্যাডার নজরুল ইসলাম ওরফে সুইট বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে র‌্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হন। ওই সরকারের আমলে র‌্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত যুবদলের নেতা মমিন উল্লা ওরফে ডেভিড নিয়াজুল ইসলামের আত্মীয়।

শামীম ওসমানের উত্থানের সময়কার চার প্রধান ক্যাডার ছিলেন লাল, সারোয়ার, মাকসুদ ও নিয়াজুল। এর মধ্য প্রথম দুজন অসুস্থ হয় মারা গেছেন। মাকসুদের লাশ পাওয়া গেছে ঢাকায়। জীবিত আছেন কেবল এই অস্ত্রধারী নিয়াজুল।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত