সিলেটটুডে ডেস্ক

০৯ মে, ২০১৮ ২২:৪৯

প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজকে অব্যাহতি

প্রসিকিউটর ড. তুরিন আফরোজকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সব মামলার কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। যুদ্ধাপরাধ মামলার এক আসামির সঙ্গে গোপন বৈঠক ও মামলার স্বার্থবিরোধী ভূমিকার অভিযোগ আনা হয়েছে তার বিরুদ্ধে। তবে তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলছেন, তদন্ত করতে গেলে নানা রকম কৌশল অবলম্বন করতে হয় । সুতরাং আমি তদন্তের স্বার্থে যে কোন প্রয়োজনীয় কৌশল গ্রহণ করতে পারি।

গত সোমবার (৭ মে) চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত চিঠি ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন শাখা থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

জানা গেছে, যুদ্ধাপরাধ মামলার আসামি ওয়াহিদুল হকের সঙ্গে তুরিন আফরোজের গোপন বৈঠক সংক্রান্ত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন থেকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তবে ওয়াহিদুল হকের মামলার টিমের সদস্য হিসেবে অপর প্রসিকিউটর তাপস কান্তি বলকে শুধু এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, 'প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে অভিযোগের চিঠি পেয়েছি। অভিযোগ তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, প্রসিকিউটর তুরিন একজন যুদ্ধাপরাধীর সঙ্গে আঁতাত করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এটা যদি সত্যি হয়, তবে মন্ত্রণালয় অবশ্যই পদক্ষেপ নেবে।

এ ব্যাপারে ড. তুরিন আফরোজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজে অবস্থান ব্যাখ্যা করেন। তিনি লিখেন-

আমাকে নিয়ে একটি অতি উৎসাহী দৈনিক পত্রিকাতে একটি বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশিত করা হলে সোশ্যাল মিডিয়াতে তা ভাইরাল করে আমাকে নিয়ে নানা কুৎসা রটনা করা হচ্ছে। এটাও বলা হচ্ছে যে আমাকে প্রসিকিউটর পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এই বিষয়ে আমার সুস্পষ্ট বক্তব্য :
১। আমি এখনও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর পদে বহাল আছি। আমাকে কেউ বরখাস্ত করেনি।
২। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে ৮(২) ধারা অনুযায়ী ট্রাইব্যুনালের একজন প্রসিকিউটারের একজন তদন্ত কর্মকর্তা হিসেব কাজ করার এখতিয়ার রয়েছে। সুতরাং যে কোন মামলাতে তদন্ত করার এখতিয়ার আমার আছে।আর তদন্ত করতে গেলে নানা রকম কৌশল অবলম্বন করতে হয় । সুতরাং আমি তদন্তের স্বার্থে যে কোন প্রয়োজনীয় কৌশল গ্রহণ করতে পারি।
৩। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আমি এই পর্যন্ত প্রসিকিউটর হিসেবে যা কিছুই করেছি তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অবহিত ছিলেন ।
৪। আমাকে নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে তা সত্য নয়। যেহেতু বিষয়টি এখন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে দেখছেন তাই সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে এই মুহূর্তে বিষয়টি নিয়ে আমি কোন মন্তব্য করতে চাই না। তদন্ত শেষ হলে আমি আমার বক্তব্য সর্ব সম্মুখে প্রকাশ করবো। আশা করি সেই পর্যন্ত আমার শুভাকাঙ্ক্ষী ও সমালোচকগণ ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করবেন।

প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম বলেন, ৭ মে চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজকে সংশ্লিষ্ট ওয়াহিদুল হকের মামলা থেকে অব্যাহতি দেন। পরদিন তাকে প্রসিকিউশনের সব দায়-দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেন। চিফ প্রসিকিউটরের দুটি চিঠি এবং তার (তুরিন আফরোজ) সঙ্গে আসামির কথোপকথনের (গত বছর ১৮ ও ১৯ নভেম্বর) সিডিসহ যাবতীয় নথি (বুধবার) সকালে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

যুদ্ধাপরাধের মামলায় জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) এবং পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক মুহাম্মদ ওয়াহিদুল হককে ২৪ এপ্রিল রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। বৃহস্পতিবার ওয়াহিদুল হককে ট্রাইব্যুনালে হাজিরার দিন ধার্য রয়েছে।

ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ নভেম্বর প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজকে আসামি ওয়াহিদুল হকের বিরুদ্ধে করা মামলা পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর তুরিন আফরোজ ফোনে আসামির সঙ্গে যোগাযোগ করে বোরকা পরে একটি হোটেলে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আদেশ রয়েছে বলে তাকে জানান। পরে বিষয়টি ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার নজরে এলে প্রসিকিউটর তুরিনকে এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেন চিফ প্রসিকিউটর। পাশাপাশি এ ঘটনার তদন্ত শুরু হয়।

পেশাগত অসদাচরণ, শৃঙ্খলা ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে এর আগে ২০১৪ সালের আগস্টে প্রসিকিউটর একেএম সাইফুল ইসলামকে অপসারণ করা হয়। এ ছাড়া প্রসিকিউটর মোহাম্মদ আলীকেও মামলা পরিচালনার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত