সিলেটটুডে ডেস্ক

৩০ জুন, ২০১৯ ১৪:১৫

পাস হল ৫ লাখ ২৩ হাজার কোটি টাকার বাজেট

জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট পাস করা হয়েছে। রোববার (৩০ জুন) জাতীয় সংসদে ‘২০২০ সালের ৩০ জুন সমাপ্য অর্থবছরের কার্যাদি নির্বাহের জন্য সংযুক্ত তহবিল হতে অর্থ প্রদান ও নির্দিষ্টকরণ বিল’ পাসের মাধ্যমে এই বাজেট গৃহীত হয়। যা কার্যকর হবে আগামী সোমবার (১ জুলাই) থেকে।

রোববার স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সকাল ১০টায় অধিবেশন শুরু হলে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনার এবং বিরোধী দলীয় উপনেতা নেতা রওশন এরশাদের উপস্থিতিতে জাতীয় বাজেট কণ্ঠভোটে পাস হয়। এর আগে গত ১৩ জুন অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল সংসদে এই বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন।

প্রথমবারের মতো অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়া মুস্তফা কামাল ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা ব্যয়ের ফর্দ ধরে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন, যা বাংলাদেশের মোট জিডিপির ১৮ দশমিক ১ শতাংশের সমান।

এতে উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ১১ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা, যা বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত উন্নয়ন বাজেটের প্রায় ২২ শতাংশ বেশি।

এবার পরিচালন ব্যয় ধরা হয়েছে তিন লাখ ১০ হাজার ২৬২ কোটি টাকা, যা বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত অনুন্নয়ন বাজেটের চেয়ে ১৬ শতাংশের বেশি।

এর মধ্যে ৬০ হাজার ১০৯ কোটি টাকা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধেই যাবে, যা মোট অনুন্নয়ন ব্যয়ের ১৯ শতাংশের বেশি।

নতুন অর্থবছরের সম্ভাব্য ব্যয়ের ৭২ শতাংশ  রাজস্ব খাত থেকে পাওয়ার আশা করছে সরকার। বাজেটে রাজস্ব খাতে আয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। এই অঙ্ক বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের ১৯ শতাংশের বেশি।

এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে কর হিসেবে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা আদায় করা যাবে বলে সরকারের তরফ থেকে আশা করা হচ্ছে। ফলে এনবিআরের কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে ১৬ দশমিক ২৮ শতাংশ।

গতবারের মতো এবারও সবচেয়ে বেশি কর আদায়ের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট থেকে: এক লাখ ২৩ হাজার ৬৭ কোটি টাকা। এই অঙ্ক বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১৭ দশমিক ২১ শতাংশের মত।

বিদায়ী অর্থবছরের বাজেটে ভ্যাট থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা ছিল ১ লাখ ১০ হাজার ৫৫৪ কোটি টাকা। লক্ষ্য পূরণ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ১ লাখ ৪ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।

আয়কর ও মুনাফার উপর কর থেকে ১ লাখ ১৩ হাজার ৯১২ কোটি টাকা রাজস্ব পাওয়ার আশা করা হয়েছে এবারের বাজেটে। বিদায়ী সংশোধিত বাজেটে এর পরিমাণ ছিল ৯৫ হাজার ১৬৭ কোটি টাকা।

এছাড়া নতুন বাজেটে আমদানি শুল্ক থেকে ৩৬ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা, সম্পূরক শুল্ক থেকে ৪৮ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা, রপ্তানি শুল্ক থেকে ৫৪ কোটি টাকা, আবগারি শুল্ক থেকে ২ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা এবং অন্যান্য কর ও শুল্ক থেকে ১ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা আদায়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে।

এছাড়া বৈদেশিক অনুদান থেকে ৪ হাজার ১৬৮ কোটি টাকা পাওয়া যাবে বলে বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেছেন।

অর্থমন্ত্রী বলছেন, রাজস্ব আদায় বাড়াতে তিনি এবার নতুন কোনো কর আরোপ করছেন না। বরং করের আওতা বাড়িয়ে তিনি রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে চান।

অর্থমন্ত্রী সংসদের সামনে যে বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরেন, তাতে আয় ও ব্যয়ের হিসাবে সামগ্রিক ঘাটতি থাকছে প্রায় এক লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫ শতাংশের সমান।

এই ঘাটতি পূরণে অর্থমন্ত্রীর সহায় অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক ঋণ। তিনি আশা করছেন, বিদেশ থেকে ৬৩ হাজার ৮৪৮ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ খাত থেকে ৭৭ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা ঋণ করে ওই ঘাটতি মেটানো যাবে।

এই বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারলে মূল্যস্ফীতি ৫.৫ শতাংশের মধ্যে আটকে রেখেই ৮.২০ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি পাওয়া সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী।

অর্থমন্ত্রীর বাজেট পেশ করার পর সেই বাজেটের ওপর ২৫৫ জন সংসদ সদস্য মোট  ৫১ ঘণ্টা  ৫২ মিনিট আলোচনা করেছেন। যা শনিবার শেষ হয়। এছাড়া ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের সম্পূরক বাজেটের ওপর ১৪ জন সংসদ সদস্য ৩ ঘণ্টা ৪৪ মিনিট আলোচনা করেন।

স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনের শুরুতেই মঞ্জুরি দাবিতে আলোচনা করার কথা জানান। বিরোধী দল ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা এসব দাবিতে আলোচনা করেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত