সিলেটটুডে ডেস্ক

১২ ডিসেম্বর, ২০১৯ ১৯:০১

রূপপুর প্রকল্পে দুর্নীতি: গণপূর্তের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলীসহ ১৩ জন গ্রেপ্তার

পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের বালিশ ও আসবাবপত্র কেনাকাটায় দুর্নীতির অভিযোগে গণপূর্ত বিভাগের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদুল আলমসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে চারটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এরই মধ্যে ১৩ জনকেই গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।

গ্রেপ্তারকৃত অন্যরা হলেন, পাবনা গণপূর্ত উপ-বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. জাহিদুল কবির, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. মোস্তফা কামাল, উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আহমেদ সাজ্জাদ খান, এস্টিমেটর ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী সুমন কুমার নন্দী, সহকারী প্রকৌশলী মো. তারেক, সহকারী প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম, মজিদ সন্স কন্সট্রাকশন লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী আসিফ হোসেন, উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. আবু সাঈদ,  সাজিন কন্সট্রাকশন লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী মো. শাহাদাত হোসেন, উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. রওশন আলী ও উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. তাহাজ্জুদ হোসেন।

ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে দুর্নীতির কারণে সরকারের ৩১ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে। অনুসন্ধান চলছে। সেটি শেষ হলে সঠিক টাকার পরিমাণ বলা যাবে।’

আসামিদের গ্রেপ্তারির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, তদন্ত কর্মকর্তারা আমাদের কাছে মামলার অনুমতি চেয়েছিলেন। আমরা মামলার অনুমোদন দিয়েছি। গ্রেপ্তার করা না করার বিষয়টি সম্পূর্ণ তাদের এখতিয়ারভুক্ত।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, রূপপুর প্রকল্পের ৮৫০ বর্গফুটের ছয় ইউনিট বিশিষ্ট ২০তলা ভবনের (১ নং ভবন) সিভিল ওয়ার্ক ও ই/এম ওয়ার্কের ৭০ ধরনের উপকরণ সংগ্রহের জন্য সরকারের ৭ কোটি ৭৯ লাখ ৪২ হাজার ৪৩৮ টাকা ক্ষতি করা হয়েছে। এই মামলায় গ্রফতারকৃত ১৩ জনের মধ্যে ৯ জনকে আসামি করা হয়েছে।

ওই ভবনের ১২৫০ বর্গফুটের জন্য ৯০ ধরনের উপকরণ সংগ্রহ করতে ৮ কোটি ১২ লাখ ৭৯ হাজার ৯৫০ টাকা ক্ষতি করা হয়েছে। এই মামলায় ৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। ৮৫০ বর্গফুটের দুই নং ভবনের জন্য ৭৫টি আইটেম সংগ্রহে সরকারি অর্থ নষ্ট করা হয়েছে, ৭ কোটি ৪৮ লাখ ১৬ হাজার ৬৮ টাকা। এই মামলায় আসামি করা হয়েছে ৯ জনকে। ৩- ৬.৩ নম্বর ভবন নির্মাণের জন্য ৬৩টি আইটেম সংগ্রহের জন্য সরকারি ক্ষতির হিসাব পাওয়া গেছে ৭ কোটি ৮৪ লাখ ৮ হাজার ৭১৬ টাকা। এই মামলায় আসামি করা হয়েছে ৮ জনকে।

রূপপুর প্রকল্পের কর্মকর্তাদের জন্য ৯৬৬টি ফ্ল্যাটের বালিশ, তোষকসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি ক্রয়ে ব্যাপক দুর্নীতির চিত্র উঠে আসে গণমাধ্যমে। খবরে বলা হয়, ভবনের জন্য কেনা প্রতিটি বালিশের দাম ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৯৫৭ টাকা এবং বালিশ ফ্ল্যাটে তোলার জন্য ধরা হয় ৭৬০ টাকা। এছাড়াও বৈদ্যুতিক চুলা ৭ হাজার ৭৪৭ টাকায় কিনে নীচতলা হতে উপরে তোলার জন্য ৬ হাজার ৬৫০ টাকা ব্যয় হয়।

ঘটনা জানাজানি হলে আবাসন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় দু’টি তদন্ত কমিটি গঠন করে। ইতিমধ্যেই তদন্ত কমিটি অনিয়মের অভিযোগে ওই আবাসন প্রকল্পের গণপূর্তের পাবনার প্রকৌশলী মাসুদুল আলমসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে। ২২ মে প্রকৌশলী মাসুদুলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। সর্বশেষ তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ১৬ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ও ১৪ জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
সূত্র: বণিক বার্তা

আপনার মন্তব্য

আলোচিত