নিজস্ব প্রতিবেদক

২৯ আগস্ট, ২০২০ ০২:২০

সিলেটে স্থবির ছাত্রলীগ, হতাশ নেতারা

কমিটি কমিটি নেই দীর্ঘদিন

দীর্ঘদিন ধরে সিলেটে কমিটিহীন ছাত্রলীগ। সিলেট জেলা ও মহানগর কোনো ইউনিটেরই কমিটি নেই। ফলে সিলেটে ক্ষমতাসীন দলটির ছাত্র সংগঠনের কার্যক্রমে দেখা দিয়েোছে স্থবিরতা। নেই তেমন কোনো সাংগঠনিক কর্মসূচী। দীর্ঘদিন ধরে কমিটি না হওয়ায় পদপ্রত্যাশী নেতাদেরও বয়স পেরিয়ে যাচ্ছে। ফলে তারাও ভূগছেন হতাশায়।
 
সর্বশেষ ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে সিলেট জেলা ছাত্রলীগের কমিটি ও ২০১৫ সালের জুলাই মাসে সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি গঠন করা হয়। এরপর ২০১৭ সালের অক্টোবরে জেলা ছাত্রলীগের কমিটি এবং ২০১৯ সালের অক্টোবরে মহানগহর ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। এরপর থেকে সিলেট কমিটিহীন ছাত্রলীগ। ফলে সিলেটে ছাত্রলীগের কার্যক্রমে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা।

সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের সর্বশেষ কমিটির সভাপতি আব্দুল বাছিত রুম্মান সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোরকে বলেন, ‘সংগঠনকে শক্তিশালী করতে সিলেটে অতিদ্রুত কমিটি গঠন করা দরকার। তাছাড়া আমরাও কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে আলাপ করেছি নতুন কমিটির ব্যাপারে। তারও আমাদের আশ্বস্ত করেছেন সিলেটের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কমিটি দেবেন বলে।’

বর্তমানে করোনাভাইরাসের প্রভাবের কারণে সাংগঠনিক সকল কার্যক্রম বন্ধ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সারাদেশেই সাংগঠনিক সকল কার্যক্রম করোনার কারণে বন্ধ রয়েছে, তাই সিলেটেও ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের ব্যাপারটা কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে।’ তবে করোনার প্রকোপ কমার পরপরই সিলেটে ছাত্রলীগের কমিটির ব্যাপারটা কেন্দ্রীয় নেতারা গুরুত্বের সাথে দেখবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। না হলে ভবিষ্যতে সিলেটের ছাত্রলীগ নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়বে বলেও আশঙ্কা তার।

জানা যায়, সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সর্বশেষ কমিটি গঠন করা হয় ২০১৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর। শাহরিয়ার আলম সামাদকে সভাপতি ও এম. রায়হান চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক করে এই কমিটি গঠনের পর থেকে নানা বিতর্কে জড়িয়ে পরে জেলা ছাত্রলীগ। ফলে ২২০১৬ সালের ২৫ মার্চ সিলেট জেলা ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত করে কেন্দ্রীয় সংসদ। এরপর ১ ডিসেম্বর কমিটির ওপর থেকে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। এরপর ২০১৭ সালের অক্টোবরে এই কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা হয়।

বিজ্ঞাপন



এদিকে ২০১৫ সালের ২০ জুলাই আব্দুল বাছিত রুম্মানকে সভাপতি ও আব্দুল আলীম তুষারকে সাধারণ সম্পাদক করে মহানগর ছাত্রলীগের ৪ সদস্যবিশিষ্ট আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। প্রায় সাড়ে ৩ বছরেও কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে না পারা এবং নানা অভিযোগে ২০১৯ সালের ২১ অক্টোবর বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয় এ কমিটি।

কমিটি স্থগিতের পরপরই নতুন কমিটি গঠনের জন্য গতবছরের ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে জীববৃত্তান্ত আহবান করেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এতে বিপুল উৎসাহে সিভি প্রদান করেন পদপ্রত্যাশী নেতারা। তবে সিভি নিয়েও কমিটি করতে পারেনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।

জানা যায়, নানা অভিযোগে গত বছরের সেপ্টেম্বরে ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী পদত্যাগ করেন। এরপরই থেমে যায় সিলেটে ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের কার্যক্রম। এরপর ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বে আসেন আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্য। তবে তারা এখনো কোনো বিভাগীয় শহরের কমিটি গঠনেরই উদ্যোগ নেননি।

সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচনে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরোধের কারণে নতুন কমিটি গঠন হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে, দীর্ঘদিন ধরে কমিটি না হওয়ায় ছাত্রলীগের পদ পাওয়ার নির্ধারিত ২৯ বছর পেরিয়ে গেছে অনেক পদপ্রত্যাশী নেতার। ফলে তাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে হতাশার। এছাড়া কমিটি না থাকায় ছাত্রলীগের কর্মকান্ডেও দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। মুজিববর্ষ কিংবা শোকদিবসেও সিলেটে ছাত্রলীগের কোনো কর্মসূছী ছিলো না। আওয়ামী লীগের কোনো কর্মসূচীতেও ছাত্রলীগের উপস্থিতি দেখা যায়নি। নেতৃত্ব না থাকায় বাড়ছে অভ্যন্তরীন কোন্দলও। সৃষ্টি হচ্ছে নানা গ্রুপ-উপগ্রুপের। সিলেট ছাত্রলীগের অন্তর্কোন্দল এবং গ্রুপিংয়ের কারণে ২০১০ সাল থেকে সর্বশেষ ২০২০ সাল পর্যন্ত এই ১০ বছরে সিলেটে খুন হয়েছেন অন্তত ১১ জন ছাত্রলীগ কর্মী।

এ ব্যাপারে সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শাহরিয়ার আলম সামাদ বলেন, ছাত্রলীগের কমিটি না থাকার ফলে সাংগঠনিক কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। এর ফলে স্বাধীনতাবিরোধি ও দেশবিরোধী অনেক শক্তি মাথাছাড়া দিয়ে উঠছে। তাই দ্রুততার সাথে সিলেটে ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করা প্রয়োজন।

তিনি বলেন, করোনা সংকট ও শোকাবহ আগস্ট মাসের কারণে কমিটি গঠনে কিছুটা দেরি হয়েছে। তবে আশা করছি আগামী মাসেই সিলেটে ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হবে।

দীর্ঘদিন কমিটি না থাকার কারণে অনেক মেধাবী ছাত্রনেতাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত