সিলেটটুডে ডেস্ক

৩০ মার্চ, ২০২৪ ২১:১১

বুয়েটে নিয়মতান্ত্রিক ছাত্ররাজনীতি থাকতে হবে: সাদ্দাম হোসেন

বুয়েটে অবশ্যই নিয়মতান্ত্রিক ছাত্ররাজনীতি থাকতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন।

তিনি বলেছেন, বুয়েট শিক্ষার্থীর হলে আসন বাতিলের সিদ্ধান্তকে আমরা একটি অন্যায্য সিদ্ধান্ত মনে করছি। আমরা মনে করি এটি অসাংবিধানিক, মৌলিক অধিকার পরিপন্থি এবং শিক্ষাবিরোধী কর্মকাণ্ড। বুয়েটের একজন শিক্ষার্থীর যেমন রাজনীতি না করার অধিকার আছে ঠিক তেমনি একজন শিক্ষার্থীর রাজনীতি করারও অধিকার রয়েছে। অন্যায়ভাবে একজন শিক্ষার্থীও যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেক্ষেত্রে আমরা ছাত্রসমাজকে সাথে নিয়ে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ফয়সালা করব।

ছাত্রলীগ সভাপতি অভিযোগ করেন, ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার নামে বুয়েটে নিষিদ্ধ ছাত্ররাজনীতির চর্চা শুরু হয়েছে। হিজবুত তাহরির, ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ বিভিন্ন উগ্র ও মৌলবাদী ছাত্রসংগঠন এখানে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে এবং তাদের রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমেই সাধারণ শিক্ষার্থীদের আবেগ অনুভূতিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এটির মাধ্যমে যে রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে আমরা সেটির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাই।

বুয়েট প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, বুয়েটে নিয়মতান্ত্রিক ছাত্ররাজনীতি প্রতিষ্ঠার জন্য বুয়েট প্রশাসনকে জরুরিভাবে দাবি জানাই। তিনি বলেন, বুয়েটে অবশ্যই ছাত্ররাজনীতি থাকতে হবে। যদিও এই ঘটনাটির সঙ্গে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই। সেদিন আমি শহীদ মিনারে গিয়েছিলাম। সেখানে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তবে ঝুম বৃষ্টির কারণে ক্যাফেটেরিয়ায় গিয়েছি। এটি একটি সাধারণ বিষয়। এটির সঙ্গে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নাই।

ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, রাজনীতি নিষিদ্ধ করার নাম করে বুয়েটে মৌলবাদীদের আষ্ফালন শিক্ষার্থীরা মেনে নেবে না। আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে এই অপতৎপরতা বন্ধ করতে বদ্ধপরিকর। অমানবিক, অগণতান্ত্রিক এবং পক্ষপাতমূলকভাবে রাব্বির সিট বাতিল করা হয়েছে। সংবিধান রক্ষিত রাজনীতি করার অধিকার বুয়েটেও থাকবে এটা আমরা অবশ্যই চাই। এ বিষয়ে আমাদের ভাবনা রয়েছে।

বুয়েটের শিক্ষার্থীর সিট বাতিলের প্রতিবাদ করেন ছাত্রলীগের সভাপতি। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তিনি বলেন, ২৯ মার্চ ২০২৪ তারিখে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) কর্তৃক বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ ব্যাচের পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ হোসেন রাহিমের আবাসিক হলের বরাদ্দকৃত সিট বাতিল ঘোষণা করার সিদ্ধান্তকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-গণতন্ত্রকামী মানুষ ও ছাত্রসমাজ চূড়ান্তভাবে প্রত্যাখ্যান করছে। বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ বুয়েট প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তকে একটি অন্যায্য, অসাংবিধানিক, মৌলিক অধিকার পরিপন্থী ও সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নৈতিক স্খলনজনিত শিক্ষাবিরোধী কর্মকাণ্ড হিসেবে আখ্যায়িত করে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।

বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ও এই রাষ্ট্রে সাধারণের শিক্ষার অধিকার একটি গৌরবোজ্জ্বল সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে, যার নেতৃত্ব দিয়েছে এদেশের ছাত্রসমাজ। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, সাম্প্রতিককালে সংবিধানসম্মত ছাত্র রাজনীতি নিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে এমন কিছু কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে, আশ্রয়-প্রশ্রয় পাচ্ছে যা ৩০ লাখ শহিদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের মহান সংবিধানের চূড়ান্ত লঙ্ঘন। বুয়েট অর্ডিন্যান্স ১৯৬১ অনুযায়ী বুয়েট বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে এবং বাংলাদেশের জনগণের অর্থে পরিচালিত একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বিধায়, সর্বাবস্থায় এই রাষ্ট্রের সংবিধান ও প্রচলিত আইনের দ্বারা এটি পরিচালিত হতে হবে। কিন্তু তা না করে, এই আইনের কোথাও ছাত্র-রাজনীতি নিষিদ্ধ করার ক্ষমতা বুয়েটকে প্রদান করা না হলেও বুয়েট প্রশাসন বেআইনি ও অসাংবিধানিকভাবে তা বাস্তবায়ন করছে। মূলধারার প্রকাশ্য ছাত্র-রাজনীতি নিষিদ্ধের এই প্রচেষ্টার মাধ্যমে বুয়েটকে দেশ ও বিশ্ব মানবতাবিরোধী নিষিদ্ধ, অন্ধকার জগতের বিভিন্ন সংগঠনের কর্মকাণ্ড পরিচালনার তীর্থস্থানে পরিণত করা হয়েছে। টাঙ্গুয়ার হাওড়ে জঙ্গি আস্তানায় গোপন মিটিং, শিক্ষার্থীদের অফিসিয়াল মেইলে জঙ্গিবাদের প্রচারণা, ক্যাম্পাসে কিউআর (QR) কোডের মাধ্যমে রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতা চালানো, বিশ্ববিদ্যালয় পরিমণ্ডল এ শ্রেণিকক্ষে মহান স্বাধীনতাকে কটাক্ষ ইত্যাদি কর্মকাণ্ড বুয়েটকে তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থেকে পশ্চাৎ দিকে ধাবিত করছে।

বুয়েট প্রশাসন ইমতিয়াজ হোসেন রাহিমের বরাদ্দকৃত সিট বাতিলের মাধ্যমে তার সংগঠন করার সাংবিধানিক অধিকার (অনুচ্ছেদ ৩৮) প্রয়োগ করতে বাধা সৃষ্টি করেছে। এটি একইসাথে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৭ (আইনের দৃষ্টিতে সমতা), অনুচ্ছেদ ৩১ (আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার), অনুচ্ছেদ ৩২(জীবন ও ব্যক্তি স্বাধীনতায় অধিকার-রক্ষণ), অনুচ্ছেদ ৩৬(চলাফেরার স্বাধীনতা), অনুচ্ছেদ ৩৭(সমাবেশের স্বাধীনতা) ও অনুচ্ছেদ ৩৯(চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা ও বাক-স্বাধীনতা) এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত