নিজস্ব প্রতিবেদক

২৫ মার্চ, ২০১৬ ১৮:৩৯

হেফাজতের ‘রাষ্ট্রধর্ম’ কর্মসূচিতে সক্রিয় জামায়াত-শিবির

‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম রক্ষার’ দাবিতে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচিতে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত  জামায়াত-শিবির অংশ নিচ্ছে। এবং সেখানে তারা নিজস্ব দলীয় স্লোগান ব্যবহার করে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে।

বাংলাদেশে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দলটি শীর্ষ নেতারা দণ্ডিত হওয়ার পর তারা এসব রায়কে কেন্দ্র করে নাশকতা চালানোর প্রেক্ষিতে  দেশব্যাপী নিন্দিত এবং প্রশাসনের শ্যেনদৃষ্টি থাকায় কোনভাবেই মাঠে নামতে না পারলেও হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে মাঠে নামার চেষ্টা করছে।

শুক্রবার (২৫ মার্চ) পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ি চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা শাহি জামে মসজিদের উত্তর গেট এবং ঢাকার বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে আয়োজিত সমাবেশ ও মিছিলে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করে।

চট্টগ্রামে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে মিছিল করে হেফাজতে ইসলাম এবং সেখানে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা। যদিও কোতোয়ালী থানার ওসি জসিম উদ্দিন বলেন, ‘সমাবেশের পর ছোট পরিসরে মিছিলের অনুমতি নিয়েছিলো হেফাজত নেতারা, কিন্তু তারা পুলিশের বেষ্টনী ভেঙ্গে মিছিলের চেষ্টা করেছেন।’

২০১৩ সালের  ৫ মের অবরোধ-বিক্ষোভের পর শুক্রবারই প্রথম মাঠে নামল কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। বরাবরের মতো এদিনের কর্মসূচিতেও সক্রিয় ছিলেন জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা।

হেফাজতের কর্মসূচিতে জামায়াত-শিবিরের অংশগ্রহণের বিষয়টি অস্বীকার না করলেও তাদের পক্ষ থেকে কাউকে আমন্ত্রণ জানানো হয় নি এমনটাই বলেছেন হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতা ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সহ-সভাপতি মাওলানা আবদুর রব ইউসূফী। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা কোনও সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলকে হেফাজতের কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার আহ্বান করিনি. দাওয়াতও দেইনি। তিনি বলেন, এটা ইসলাম ধর্মের ব্যাপার। এখানে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত, জাপা সবাই আসতে পারে। এটা নির্দলীয়। এমনকি বামধারা কেউ আসতে পারে, যে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম চায়।

ঢাকায় হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচিতে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার বিভাগের সহকারী সেক্রেটারি জামাল উদ্দিন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ্যে না আসলেও এ কর্মসূচির মাধ্যমে মাঠে নামে। এ মিছিলে শিবিরের নেতাকর্মীরা তাদের নিজস্ব স্লোগান, ‘আল কোরআনের আলো, ঘরে ঘরে জ্বালো’, ‘নাস্তিকদের আস্তানা, জ্বালিয়ে দাও, পুড়িয়ে দাও’-এও সরব হয়েছিলেন।

সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিলের রিটের প্রতিবাদে এ কর্মসূচি পালন করে হেফাজত। বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে আয়োজিত মিছিলপূর্ব সমাবেশে সংগঠনের ঢাকা মহানগরের নেতারা বক্তব্য দেন। এ সময় তারা রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রাখার দাবি জানিয়ে বলেন, ইসলাম ধর্ম সংবিধান থেকে বাদ দেওয়া হলে পরিণতি ভয়াবহ হবে। কর্মসূচিতে ঢাকার বারিধারা জামিয়া মাদানিয়া, জামিয়া রাহমানিয়া, মালিবাগ মাদ্রাসা, চৌধুরীপাড়া মাদ্রাসাসহ ঢাকার হেফাজত অনুসারী উল্লেখযোগ্য মাদ্রাসার অন্তত সাড়ে তিন হাজার শিক্ষক-শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। পাশাপাশি শতাধিক জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীকেও দেখা গেছে তাদের সঙ্গে।

চট্টগ্রামের সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী ও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ’র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মাইনুদ্দীন রুহী।

সমাবেশে বক্তারা  বলেন, ‘জনগণের মনের ভাষা বোঝার চেষ্টা করুন। সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিলের ষড়যন্ত্র দেশবাসী বরদাস্ত করবে না। ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম থাকবে কি থাকবে না, এ নিয়ে আদালতে মামলা ও শুনানি চলতে পারে না।’

‘রাষ্ট্রধর্ম নিয়ে দেশবাসীর আক্বিদা-বিশ্বাসের বিরুদ্ধে যদি কোন রায় আসে, তাহলে দেশের কোটি কোটি মুসলিম তৌহিদী জনতা মাঠে নেমে এর প্রতিবাদ জানাবে। এদেশের সাড়ে চার লক্ষ মসজিদ থেকে কোটি কোটি মুসলমানের প্রতিবাদের দাবানল জ্বলে ওঠবে, দেশ অচল করে দেয়া হবে।’

বিক্ষোভে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের দেখা গেছে তাদের নিজস্ব স্লোগান ‘আল কোরআনের আলো, ঘরে ঘরে জ্বালো’, ‘নাস্তিকদের আস্তানা, জ্বালিয়ে দাও, পুড়িয়ে দাও’ এবং হেফাজতে ইসলাম ‘বীর মুজাহিদ জাগরে জাগ, আহমদ শফী দিচ্ছে ডাক’, ‘রক্ত দিয়ে লিখব নাম, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম,’ ‘রাজপথে হেফাজত, কায়েম হবে শরীয়ত’ শীর্ষক স্লোগান দিয়েছে।

উল্লেখ্য, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম থাকার বৈধতা নিয়ে রিটের রায় আগামী ২৭ মার্চ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের দেওয়ার কথা রয়েছে। রাষ্ট্রধর্ম বাতিলের রায় আসলে দেশ অচল করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে রেখেছে হেফাজতে ইসলাম।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত