সিলেটটুডে ডেস্ক

৩০ জুলাই, ২০১৭ ১৫:০৪

রিজিয়া স্বামীর সংসার করে, বাবার সঙ্গে সম্পর্ক নেই: ওবায়দুল কাদের

স্বামী আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দীন নদভী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে রিজিয়া নদভী। ছবি: ফেসবুক

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য, একাধিকবার জামায়াতের মনোনয়নে সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করা মুমিনুল হক চৌধুরীর মেয়ে রিজিয়া নদভী বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পাওয়া প্রসঙ্গে কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি জানিয়েছেন রিজিয়া স্বামীর সংসার করে, বাবার সঙ্গে তার সম্পর্ক।

গত ২২ জুলাই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সহযোগী সংগঠনটির পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি অনুমোদন করেন, যাতে কার্যনির্বাহী সদস্য হিসেবে ৬৮ নম্বর ক্রমিকে রয়েছে রিজিয়ার নাম। রিজিয়া নদভীর নাম মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এনিয়ে অনেকেই দোষারোপ করছেন ওবায়দুল কাদেরকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এমন সমালোচনার পর প্রথমবারের মত কথা বললেন ওবায়দুল কাদের।

রোববার (৩০ জুলাই) ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সম্পাদকমণ্ডলীর এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে চট্টগ্রামের রিজিয়া নদভী মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হওয়া প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘রিজিয়া তার স্বামী ড. আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দীন নদভীর সঙ্গে থাকে, স্বামীর সংসার করে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনি প্রচারণার কাজে সে সম্পৃক্ত। গত চার বছর ধরে সে আওয়ামী লীগের প্রচার-প্রচারণায় কাজ করছে। সে বলেছে, তার সঙ্গে তার বাবার কোনও সম্পর্ক নাই।’

জামায়াত নেতাদের সন্তানরা আওয়ামী লীগ করতে পারবে বলেও মন্তব্য করেন ওবায়দুল কাদের।

রিজিয়া নদভীকে পদ দেওয়ার বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, “বিয়ের পরে সে জামায়াতের কোথাও জড়িত ছিল কি না, সেটা দেখা হয়েছে।”

রিজিয়াকে পদ দেওয়ায় কোথাও কোনো ধরনের ক্ষোভ দেখেননি বলে দাবি করেন ওবায়দুল কাদের। সেই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘সাময়িকভাবে বিতর্ক সৃষ্টি করার’ সুযোগ আছে।

প্রশ্ন যারা তুলেছেন, তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “যিনি আওয়ামী লীগের এমপি, যিনি চার বছর ধরে এমপির দয়িত্বে, এ চার বছর কিন্তু তাকে নিয়ে কথা হয়নি। তার ওয়াইফ যদি জামায়াতের নেতার সন্তান হয়, তাহলে চার বছর ধরে এই সন্তানের হাজব্যান্ড হচ্ছে এমপি, এই এমপিকে নিয়ে, তার মনোনয়ন নিয়ে কেউ কোনো কথা বলেননি কেন?”

“এবং তার বিষয়েও কোনো বিতর্ক সৃষ্টি করেননি এবং ভদ্র মহিলা নিজেই প্রশ্ন করছেন, ‘আমার সন্তানেরা কি তাহলে আওয়ামী লীগ করতে পারবে না?’ তার হাজব্যান্ডের সঙ্গে সে আওয়ামী লীগ করছে, ভদ্র মহিলা বাবার সাথে এবং তার (এমপির) শশুরের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই।”

রিজিয়া তার বাবার দল জামায়াতের পক্ষে কাজ করছে, এমন কোনো প্রমাণ পাননি বলে জানানন তিনি।

নদভী ও রিজিয়ার সঙ্গে নিজের ছবির প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, “যিনি এমপি, তিনি (এমপি) আসছেন আমার সাথে দেখা করতে, তখন কি আমি বলব, এই আপনি ছবিতে সাথে আইসেন না। সে তো এই এমপির ওয়াইফ।

“তিনি (রিজিয়া) কি জামায়াতের কোনো সংগঠনের সদস্য? সে তো জামায়াতের কেউ না, জামাতের কর্মী না, সে তো আওয়ামী লীগের কাজ করছে।”

তাহলে রিজিয়াকে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের কমিটি থেকে আগে কেন বাদ দেওয়া হল- প্রশ্ন করা হলে কাদের বলেন, “এ ধরণের কোনো কথা আমি শুনিনি। আপনি কি এখন জেলা কমিটির সভাপতির সাথে কথা বলবেন? এটা ঠিক না।”

ওবায়দুল কাদের বলেন, “সারা দেশে কোথায় শিবির আওয়ামী লীগের পোস্টে আছে, প্রমাণ দিন। কোথায় আমাদের মেম্বার হয়েছে?

“এ প্রশ্ন গত চার বছর কেউ করল না কেন? একেকবার একেজনকে নিয়ে শুরু হয়েছে, এর আগে শুরু হয়েছে হেফাজত নিয়ে, এখন শুরু হয়েছে এমপির স্ত্রীকে নিয়ে,” প্রশ্নকারীদের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন ওবায়দুল কাদের।

এরআগে, এবছরের ২০ মে গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী হিসেবে ঢুকে জামায়াত-শিবিরের লোকেরা সহজেই নেতা হয়ে যাচ্ছে তৃণমূলের এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, দলীয় নেতা বানানোর আগে ভালো করে তাদের পরিবার সম্পর্কে খোঁজ নিন। কেননা এদের মুখে আওয়ামী লীগ আর ভেতরে জামায়াত-বিএনপি।

রিজিয়া রেজা চৌধুরীর স্বামী ড. আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দীন নদভী জামায়াত নেতা ছিলেন। তিনি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নের চট্টগ্রামের সাতকানিয়া থেকে সংসদ সদস্য হন।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, রিজিয়া ২০০২ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রী সংগঠন ইসলামী ছাত্রী সংস্থার চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। যদিও রিজিয়া সে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি। বলছেন, “নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় বিয়ে হয়। এরপর রাজনীতি করার সময়-সুযোগ ছিল না। বাবার দিকে না গিয়ে আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেছি।”

এরআগে, চট্টগ্রাম জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের পদ পাওয়ার পর এবছরের ফেব্রুয়ারিতে বলেছিলেন, ‘আদর্শ কোনও ব্যাপার না। রাজনীতির মূল কথা হচ্ছে- জনকল্যাণ, মানুষের সেবা করা। আমি তিন বছর ধরে সাতকানিয়া-লোহাগাড়া এলাকার মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা আমাকে মূল্যায়ন করেছেন। আমি তাদের প্রতি অনেক কৃতজ্ঞ। যারা আমার সমালোচনা করছেন তারা প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে এসব করছেন।’

ওই সময় রিজিয়া আরও বলেছিলেন, “আব্বা যেহেতু জামায়াত নেতা, তাই এখন আমাকে কালার করার চেষ্টা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায়। সুনির্দিষ্ট কোনও অভিযোগ থাকলে কি আমাকে পদ দিত?”

তবে সম্প্রতি মহিলা আওয়ামী কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পাওয়ার পর অব্যাহত সমালোচনার মুখে পড়া রিজিয়া নদভী জামায়াতের সঙ্গে তার সম্পর্কের বিষয়টি অস্বীকার করে জানিয়েছেন, নবম শ্রেণিতেই থাকাকালীন সময়ে তার বিয়ে হয় এবং পরবর্তিতে সংসার সামলিয়ে গৃহবধূ থাকা অবস্থায় পড়াশোনা শেষ করেন তিনি। রাজনীতি করার সুযোগ হয়নি বলেও দাবি তার।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত