নিজস্ব প্রতিবেদক

০১ আগস্ট, ২০১৭ ১৯:৪১

শৃঙ্খলা ভঙ্গ, নাকি সমালোচনা: কী কারণে বহিষ্কার ৫ ছাত্রনেতা?

সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ এনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সংগঠনের বিভিন্ন ইউনিটের পাঁচ ছাত্রনেতাকে বহিষ্কার করেছে। বহিষ্কৃতদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক কমিটির একজন সদস্যও।

তবে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ বহিষ্কারের কারণ হিসেবে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের কথা বললেও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সমালোচনা করে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ায় তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে বলে জানান সংগঠনটির একাধিক নেতা। তাদের কেউই শৃঙ্খলা ভঙ্গজনিত কোপে পড়বেন আশঙ্কায় সংবাদমাধ্যমে উদ্ধৃত হতে চান নি।

বহিষ্কৃতদের মধ্যে আছেন- ছাত্রলীগের উপ-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়ক সম্পাদক শামীম হোসেন শুভ, ঢাকা কলেজ শাখা কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক মেহেদী হাসান রবিন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক প্রচার সম্পাদক সুশোভন অর্ক, ছাত্রলীগের সদস্য আশিকুর রহমান অনু ও শামসুল আরেফিন পলাশ।

ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের এক জরুরি সিদ্ধান্ত মোতাবেক দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে এদের ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।”

জামায়াত নেতার মেয়ে রিজিয়া নদভীর পক্ষে কথা বলায় ফেসবুক পোস্ট ও সমালোচনামূলক বিভিন্ন স্ট্যাটাসে লাইক দেওয়ার কারণে মূলত তাদেরকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংগঠনের একাধিক সদস্য।

সম্প্রতি, চট্টগ্রামের সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দীন নদভীর স্ত্রী রিজিয়া রেজা চৌধুরীকে (রিজিয়া নদভী) সম্প্রতি মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য করে কমিটির অনুমোদন দেন ওবায়দুল কাদের। জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও দলটি থেকে একাধিকবার চট্টগ্রামের বাঁশখালী থেকে সংসদ সদস্য প্রার্থী মুমিনুল হক চৌধুরীর মেয়ে রিজিয়াকে সহযোগী সংগঠনে পদ দেওয়া নিয়ে আওয়ামী লীগের ভেতর থেকে সমালোচনার মধ্যে ৩০ জুলাই রিজিয়ার পক্ষেই কথা বলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।

ওই সময় ওবায়দুল কাদের রিজিয়া নদভীর পদপ্রাপ্তিতে কোনো ধরনের সমালোচনা হচ্ছে না বলেও দাবি করেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, রিজিয়া স্বামীর সংসার করে, বাবার সঙ্গে তার সম্পর্ক নেই। প্রশ্ন যারা তুলেছেন, তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “যিনি আওয়ামী লীগের এমপি, যিনি চার বছর ধরে এমপির দায়িত্বে, এ চার বছর কিন্তু তাকে নিয়ে কথা হয়নি। তার ওয়াইফ যদি জামায়াতের নেতার সন্তান হয়, তাহলে চার বছর ধরে এই সন্তানের হাজব্যান্ড হচ্ছে এমপি, এই এমপিকে নিয়ে, তার মনোনয়ন নিয়ে কেউ কোনো কথা বলেননি কেন?”

ওবায়দুল কাদেরের ওই বক্তব্যে সমালোচনার ঝড় ওঠে ফেসবুকে। আওয়ামী লীগ সমর্থক বলে পরিচিত ফেসবুকারগণও সমালোচনা করেন দলের সাধারণ সম্পাদকের এমন অবস্থানকে। তবে বহিষ্কৃত পাঁচজন সংগঠনের শৃংখলা বিরোধি কোন কিছু করেছেন বলে প্রমাণ তাদের টাইমলাইনে পাওয়া যায় নি। তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায় নি।

ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন ফেসবুকে লিখেন, “যারা সম্মানিত ব্যক্তিদের সম্মান দিতে জানে না, সম্মানিত ব্যক্তিদের নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করে, বাংলাদেশ ছাত্রলীগে তাদের কোনো স্থান নেই।”

সাধারণ সম্পাদকের এমন অবস্থানের বিরোধিতা করে তাঁর পোস্টে চট্টগ্রাম কোতোয়ালি থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক পরিচয়ে হাসান মনসুর লিখেছেন, জামাতকে যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের দলে ভিড়াতে চায়- তারা সম্মানিত লোক হতে পারেনা। এই জামাতের নেতারা ১৯৭১ এ আমাদের মা বোনের ইজ্জত নষ্ট করেছিল- মানুষ হত্যা করেছিল- সেই জামাতের নেতাদের সন্তানেরা যদি আজ আওয়ামী লীগে ঠাই পায়- তবে আমাদের শ্রম, চিন্তাধারা, আবেগ সব ভুল ছিল। পদ পদবীর স্বার্থে এই কথা মেনে নিতে পারবো না।

তিনি আরও বলেন, ৩০ লক্ষ শহীদের অতৃপ্ত আত্মাকে অপমানের সাহস তথাকথিত সম্মানিত লোকদের থাকতে পারে- আমদের মতো নগণ্য মুজিব ভক্ত কর্মীর নাই। আর যার আদর্শে খাদ আছে- "বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী" বইয়ে লেখা কথাগুলোর সাথে যার কাজের মিল নাই- তাকে আমি তার দলের নেতা মানতে বাধ্য নই। দল যেহেতু করি দলের শৃঙ্খলার স্বার্থে মানতে পারি- তবে সম্মান করতে বাধ্য নই।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত