সিলেটটুডে ডেস্ক

০৩ ফেব্রুয়ারি , ২০১৮ ২৩:৪৫

খালেদার ৬ শর্ত

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে ছয়টি শর্তের কথা বলেছেন বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। শনিবার দুপুরে রাজধানীর লা মেরিডিয়ান হোটেলের গ্র্যান্ড বলরুমে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সভায় উদ্বোধনী বক্তব্যে এ শর্তগুলো তুলে ধরেন তিনি।

সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার জন্য সরকারের প্রতি খালেদার দেওয়া শর্তগুলো হলো:

  • জনগণ যাতে ভোট কেন্দ্রে আসতে পারে সেরকম পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
  • নির্বাচনে সকল দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
  • নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দিতে হবে; এই সংসদ রেখে নির্বাচন হবে না।
  • ভোটে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে।
  • নির্বাচন কমিশনকে কাজ করতে হবে নিরপেক্ষতার সঙ্গে।
  • কোনো ‘ইভিএম-টিভিএম’ চলবে না।

এসময় বক্তব্যে দেশের জনগণ, প্রশাসন, পুলিশ ও সশস্ত্র বাহিনী বিএনপির সাথে আছে বলে মন্তব্য করেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।

খালেদা জিয়া বলেন, বিএনপির সাথে এ দেশের জনগণ, প্রশাসন, পুলিশ, সশস্ত্র বাহিনী ও এ দেশের যারা বাইরে আছে তারাও আছেন। তাই বিএনপির কোনও ভয় নেই। ভয় আওয়ামী লীগের। সে কারণে বিএনপিকে কিভাবে নির্বাচনের বাইরে রাখা যায়, সেটা তাদের (সরকার) বড় মাথা ব্যথা।

৮ ফেব্রুয়ারি রায়ের প্রসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপার্সন বলেন, বিচার হবে কি করে। যেখানে অপরাধ নেই, সেখানে বিচার হবে কি করে। কিন্তু তারা গায়ের জোরে কথা বলতে চায় ও গায়ের জোরে বিচার করতে চায়।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকবে। বহু ষড়যন্ত্র ও নানা রকমভাবে হয়রানি করা হবে, কিন্তু আমরা ভয়ে ভীতু নই। আমি আপনাদের সাথে আছি।

সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ত্যাগীদের মূল্যায়ন করা হবে জানিয়ে খালেদা বলেন, বেঈমানি করলে, তাদের কোন মূল্যায়ন হবে না। ১/১১'র সরকার আমাকে ভয় দেখিয়েছে। আমাকে বলেছে, আপনি না গেলে আপনার দুই ছেলে নিয়ে যাব। নিয়েও গেছে। কি অত্যাচার করেছে, আপনারা দেখেছেন।

তিনি বলেন, আদালতে যে পিপি (জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী) আছে; তাকে আমরা মঈন-ফখরুদ্দিনের সময়ও কোর্টে দেখেছি। তখনও কোর্টে ছিলেন। আর এখনও আছেন। তিনি আইনজীবী, তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তিনি করছেন। দোষ আমি তাকে দেবো না। কারণ তাকেও বাধ্য করা হয়।

বিএনপি চেয়ারপার্সন বলেন, মানুষ আজকে এই দুরবস্থা, গুম, খুন, হত্যা, নির্যাতন, জেল, জুলুম এবং অত্যাচারের হাত থেকে মুক্তি চায়। এজন্য মানুষ একটা পরিবর্তন চায়। মানুষ আজকে দেশে পরিবর্তন চায়। আর এই পরিবর্তন গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটের মাধ্যমে আসতে হবে। সেজন্য আমরা বলছি ভোট। ভোট হতে হবে। কিন্তু তারা তো বিএনপিকে বাইয়ে রাখতে চায়। যাতে তারা আবার ক্ষমতায় আসতে পারে।

তিনি বলেন, সরকার মনে করে, প্রশাসন তাদের নির্বাচনী বৈতরণী পাড় হতে সহযোগিতা করবে। কিন্তু প্রশাসন যদি একটু সহযোগিতা পায়, নিরপেক্ষ নির্বাচন করার জন্য, তখন প্রশাসনের কেউ তাদের কথা শুনবেন না।

বিএনপিকে কেনো এত ভয় সরকারের প্রতি প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, কারণ তারা জানেন, বিএনপি দুর্বল ও জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারলেই তাদের সেই আশা পূরণ হবে। আমরা ভয়ে ভীতু নই।

খালেদা জিয়া বলেন, নির্বাচনের কথা তারা (আওয়ামী লীগ) বলছে, বলেও বেড়াচ্ছে, ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে। ডিসেম্বরে নির্বাচন হলে এত আগে তো প্রচারণার দরকার পড়ে না! নৌকা এমনি ডুবা ডুবছে যে, এখন থেকে প্রচারণা করে মানুষকে জাগাতে হবে।

ডিজিটাল আইনের নামে দেশে নতুন কালা কানুন করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

খালেদা জিয়া বলেন, গণমাধ্যম সত্য কথা তুলে ধরে। আর একথা যখন মানুষ শুনে, সেটা তাদের (সরকার) সহ্য হয় না। সেই কারণে জনগণের অধিকার হেয় করার জন্য আইন-কানুন করা হচ্ছে।

নির্বাহী কমিটির সভায় প্রশাসনের বাধা দেওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশে গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকার নেই। এসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর ছাত্রলীগের নির্যাতনের ঘটনাও তুলে ধরেন বেগম জিয়া।

তিনি বলেন, বিএনপিকে হামলা করে মামলা দিয়ে দমিয়ে রাখা যাবে না। আমাদের সম্পর্ক মাটি ও মানুষের সঙ্গে।

সভায় মঞ্চে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, ড. মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায়। এ মামলায় খালেদা জিয়া প্রধান আসামি। এ রায়কে সামনে রেখে নেতা-কর্মীদের আটক ও গ্রেফতার আতঙ্কের মধ্যেই নির্বাহী কমিটির সভা করছে বিএনপি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত