নিউজ ডেস্ক

১৫ আগস্ট, ২০১৫ ০৮:৩৪

ব্লগার হত্যার বিরুদ্ধে জনমত গড়তে ‘মুক্তচিন্তা আন্দোলন’

ব্লগার ও মুক্তমনাদের হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী জনমত গড়ে তুলতে নতুন মঞ্চ ‘মুক্তচিন্তা আন্দোলন’র ঘোষণা এসেছে।

ব্লগার নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নিলয় হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে শুক্রবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক নাগরিক শোকসভা থেকে নতুন এই মঞ্চ গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়।

গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার বলেন, প্রগতিশীল বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তিকে নিয়ে এই মঞ্চ গড়ে তোলা হবে।

তিনি বলেন, নিহত লেখক-ব্লগার অভিজিৎ রায়ের বাবা অধ্যাপক অজয় রায়কে প্রধান করে ১০১ সদস্যের জাতীয় উপদেষ্টা কমিটি হবে এই মঞ্চের। তারা আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ‘মুক্তচিন্তা আন্দোলন’র কর্মপন্থা ঠিক করবেন।

গত শুক্রবার ব্লগার নিলয় খুন হওয়ার পর বিভিন্ন প্রগতিশীল সংগঠনের সঙ্গে মতবিনিময় করে নতুন এই মঞ্চ গঠনের সিদ্ধান্ত হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ২১ সদস্যের স্টিয়ারিং কমিটি এবং ৭১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটি ‘মুক্তচিন্তা আন্দোলন’ পরিচালনা করবে।
আগামী ২৮ অগাস্ট বিকাল ৪টায় শাহবাগে মুক্তচিন্তা আন্দোলনের ব্যানারে সমাবেশ হবে বলে জানান ইমরান।

শোক সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন অধ্যাপক অজয় রায়। শোক সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন অধ্যাপক অজয় রায়। নতুন মঞ্চ গঠনের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে অধ্যাপক অজয় রায় বলেন, “শুধু মঞ্চ গঠন করলে হবে না, রাজপথে থেকে গণআন্দোলন সৃষ্টি করতে হবে। এর সঙ্গে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে।”
তিনি বলেন, “নীলার্দ্রিকে হত্যা প্রমাণ করে হত্যাকারীরা ক্রমশ সাহসী হয়ে উঠছে। আগে তারা রাজপথে-ফুটপাতে হত্যা করত। এবার তারা সংঘবদ্ধভাবে বাসায় ঢুকে, বাসায় নীলার্দ্রির স্ত্রীসহ যারা ছিল তাদের অন্য কক্ষে আটকে রেখে হত্যা করেছে।

“এদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এজন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে মূল ভূমিকা পালন করতে হবে। নিজেদের আদর্শিক দ্বন্দ্বকে পাশ কাটিয়ে এক মঞ্চে এসে তাদের দাঁড়াতেই হবে। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের অভিজ্ঞতাকে ঐক্য হওয়ার জন্য কাজে লাগাতে হবে।
“ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, যাতে আর কোনো নীলার্দ্রি, ওয়াশিকুর, অনন্ত ও অভিজিৎকে হারাতে না হয়।”

 ‘একাত্তরের আল-বদরদের উত্তরসূরিরা নতুনভাবে হত্যার খেলায় মেতেছে’ মন্তব্য করে সভায় ইমরান এইচ সরকার বলেন, “যে অপবাদ দিয়েই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হোক না কেন, এর আড়ালে যে যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার ষড়যন্ত্র রয়েছে তা বোঝার বাকী নেই। উগ্রপন্থিদের মূলোৎপাটনের জন্য জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে।”

তিনি বলেন, “স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপি এখন সীমা লঙ্ঘনের প্রশ্ন তুলছেন। আপনারা একের পর এক জঙ্গিদের পৃষ্ঠপোষকতা করে তাদেরকে সাধারণ মানুষের পেছনে লেলিয়ে দিয়েছেন। বৈষম্যপূর্ণ মাদরাসা শিক্ষা চালু রেখে আজকে সাধারণ মানুষ ও জঙ্গিদের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন; এটা কি সীমালঙ্ঘন নয়?

“আপনাদের এই ভুলের খেসারত হিসেবে নতুন প্রজন্ম, যারা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চায় তাদের চাপাতির নিচে পড়তে হচ্ছে। গত ছয় মাসে চারজনকে হত্যা করা হল, আপনারা তামাশা দেখছেন। আপনারা আমাদেরকে অপেক্ষা করতে বলছেন এবং সীমা লঙ্ঘনের প্রশ্ন তুলছেন। আপনাদের সীমা কোথায়, আমাদের জানতে ইচ্ছে করে।”

নিহত ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দারের বাবা চিকিৎসক নাজিম উদ্দিন বলেন, “নীলার্দ্রিরা নাস্তিক নয়, বিজ্ঞানমনস্ক ও সত্যের সৈনিক ছিল। ব্লগার মানে নাস্তিক বলা হচ্ছে। তার মানে সোনার বাংলা আর বাঁশের কেল্লার সঙ্গে জড়িতরা কী? যারা মুক্তচিন্তার ব্লগার আছেন তাদের হত্যা করার জন্যেই নাস্তিক বলা হচ্ছে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মেসবাহ কামাল বলেন, “ব্লগাররা যদি নাস্তিক হয়, তাহলে যারা সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে ব্লগিং করছে তাদের হত্যা করা হচ্ছে না কেন? ব্লগারদের হত্যাকাণ্ড জায়েজ করার জন্যই অপশক্তিরা নাস্তিক ও ধর্মবিরোধী লেখক হিসাবে তাদের অপবাদ দিচ্ছে।”

সিপিবির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মনজুরুল আহসান খান বলেন, “হত্যাকারীরা শুধু একেকজন ব্লগার বা মুক্তচিন্তার মানুষকে হত্যা করছে এটা ভাবলে ভুল হবে। এর মাধ্যমে তারা মুক্তবুদ্ধি, মুক্তচিন্তা ও মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে হত্যার চেষ্টা করছে। এদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করতে হবে।”

সিপিবির উপদেষ্টামণ্ডলীর আরেক সদস্য হায়দার আকবর খান রনো বলেন, “আমরা অবাক হই, যখন দেখি এতো সময় পার হয়ে গেলেও বিচার হয় না, তদন্ত শেষ হয় না। ওয়াশিকুরকে হত্যা করার পর গ্রেপ্তার দুজন হুজুর পাঠিয়েছে বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছে, কিন্তু এমন ক্লু পাওয়ার পর মূল হোতারা বের হয় না।”

অভিনেতা সৈয়দ হাসান ইমাম বলেন, “আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষের ধর্মের প্রতি অনুরাগ আছে, কিন্তু তারা কোনোভাবে সাম্প্রদায়িক নন। আবার জনগণ ধর্মকে যারা নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতির জন্য ব্যবহার করে তাদের বিষয়ে সচেতন না; এই সুযোগে মৌলবাদী গোষ্ঠী তাদের কাজ চালাতে পারছে।”

সমাবেশে অন্যদের মধ্যে কলামনিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, সংস্কৃতিকর্মী রোকেয়া রফিক বেবী, ডাকসুর সাবেক জিএস ডা. মুশতাক হোসেন, ব্লগার বাকী বিল্লাহ, ভাস্কর রাশা, যুব ইউনিয়নের সভাপতি আবদুল্লাহ আল কাফি রতন, ছাত্র ফ্রন্টের (খালেকুজ্জামান) সভাপতি জনার্দন দত্ত নান্টু, ছাত্র ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক লাকী আক্তার, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী শম্পা বসু, প্রমুখ বক্তব্য দেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত