নিজস্ব প্রতিবেদক

০৩ নভেম্বর, ২০১৯ ০১:৪৩

টালমাটাল সিলেট বিএনপি

দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার বাইরে বিএনপি। তার উপর মামলায় বিপর্যস্ত নেতারা। সাংগঠনিক তেমন তৎপরতাও নেই। দলের এই দুরবস্থায়ও থেমে নেই অভ্যন্তরীণ বিবাদ। বরং কমিটি নিয়ে চরম আকার ধারণ করেছে। এই বিরোধকে কেন্দ্র করে রীতিমত পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন সিলেট সিটি মেয়রসহ বিএনপির প্রথম সারির ৫ নেতা। ফলে সিলেটে বিএনপি এখন অনেকটাই টালমাটাল অবস্থায়।

সিলেট বিএনপিতে এক সময় বিরোধ ছিলো এম. সাইফুর রহমান ও ইলিয়াস আলীর মধ্যে। এই দুই নেতার অনুসারীরা নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাতে জড়াত নিয়মিতই। সাইফুর রহমান প্রয়াত হয়েছেন। ইলিয়াস আলী নিখোঁজ অনেকদিন ধরে। তবে দলের মধ্যে বিরোধ রয়ে গেছে আগের মতোই। দলের এই দুরবস্থায়ও নেতারা জড়িয়ে পড়ছেন কোন্দলে। যে কোনো কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে তা চরম আকার ধারণ করে।

গত ২ অক্টোবর গঠন করা হয় সিলেট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি। এ নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে পদবঞ্চিত নেতাদের মধ্যে। কমিটিতে 'ত্যাগীদের' ঠাঁই দেওয়া হয়নি বলে দাবি তাদের। এরমধ্যে ১ নভেম্বর কেন্দ্র থেকে ঘোষণা করা সিলেট জেলা ও মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক কমিটি। কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি সিদ্দিকুর রহমান পাপলুকে আহবায়ক এবং জেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক মকসুদ আহমদ করে জেলা কমিটি এবং সাবেক ছাত্রনেতা নজিবুর রহমান নজিবকে আহবায়ক ও শাহনেওয়াজ বক্ত তারেককে সদস্য সচিব করে মহানগর যুবদলের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি নিয়ে ক্ষোভ চরম আকার ধারণ করে।

যুবদলের পদবঞ্চিতদের পাশাপাশি বিএনপির অনেক শীর্ষ নেতাও যুবদলের কমিটিতে অসন্তুষ্ট। এই অসন্তোষের বহিঃপ্রকাশ ঘটে শুক্রবার রাতে অনুষ্ঠিত এক সভায়। সভায় বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-ক্ষুদ্র ঋণবিষয়ক সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক, কেন্দ্রীয় সদস্য ও সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী এবং ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট সামসুজ্জামান জামান এবং সিলেট জেলা বিএনপির সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আলী আহমদ দলীয় পদ থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন।

জানা যায়, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি নিয়েই ক্ষুব্ধ ছিলেন এই নেতারা। কমিটিতে নিজেদের অনুসারীদের ঠাঁই না হওয়ায় তারা জেলার আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছেন। এমন ক্ষোভের মধ্যে জেলা ও মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এই দুই কমিটিতেও ঠাঁই হয়নি নিজেদের অনুসারীদের। ফলে ক্ষোভ চরমে ওঠে তাদের। এই ক্ষোভ থেকেই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন পাঁচ নেতা।

এই নেতাদের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় কমিটিতে থাকা সিলেটের একজন নেতার ইচ্ছায়ই এসব কমিটি হচ্ছে। কেন্দ্রের শীর্ষ নেতাদের তিনি ভুল বুঝিয়ে নিজের অনুসারীদের নিয়ে একের এক কমিটি অনুমোদন করাচ্ছেন।

তবে সিলেট বিএনপির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়া নেতারা শেষপর্যন্ত পদত্যাগ নাও করতে পারেন। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উপর চাপ প্রয়োগ করে পরবর্তী কমিটিগুলোতে নিজেদের অবস্থান পাকাপোক্ত করতেই এমন ঘোষণা দিয়েছেন তারা।

যদিও বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-ক্ষুদ্র ঋণবিষয়ক সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, পদত্যাগের ব্যাপারে আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি। রোববার সশরীরে ঢাকায় গিয়ে আমরা কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেবো। এরপর আপনাদের সবকিছু জানাবো। আমরা মনে করি, দল যে এখন ভুলভাবে চলছে তার প্রতিবাদ করা উচিত।

তিনি বলেন, আমরা যাদের নিয়ে রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম করি। মামলা-হামলার শিকার হই, তারা যদি কমিটিতে ঠাঁই না পায়, তাহলে এদের কাছে আমরা কী জবাব দেবো?

এ ব্যাপারে সিলেট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদার বলেন, কমিটি কেন্দ্র থেকে দেওয়া হয়েছে। তাই এ ব্যাপারে আমাদের কিছু বলার নেই।

তিনি বলেন, বিএনপি একটি বড় দল। এতে পদপ্রত্যাশীও অনেকে। তাই যে কোনো কমিটি গঠনের পর ক্ষোভ হতাশা থাকতে পারে। তবে আশা করছি কেউ দলের ক্ষতি হয় এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত