কমলগঞ্জ প্রতিনিধি

০৬ নভেম্বর, ২০১৯ ০১:২৩

কমলগঞ্জে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব পেতে তৎপর দেড় ডজন নেতা

১৫ বছর পর ৯ নভেম্বর সম্মেলন

সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে দীর্ঘ ১৫ বছর পর আগামি ৯ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন। সম্মেলনকে ঘিরে সকল প্রস্ততি ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। এর আগে একাধিকবার সম্মেলনের প্রস্তুতি নেওয়া হলেও নানান কারণে তা আটকে যায়। এতে দলটির সাংগঠনিক কার্যক্রমে স্থবিরতা দেথা দেয়।

দীর্ঘদিন পর হতে যাওয়া সম্মেলনকে ঘিরে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঝে। কাউন্সিলের মাধ্যমে দলের তরুণ নেতাকর্মীরা নতুন নেতৃত্বের প্রত্যাশা করছেন। তবে নবীন ও প্রবীণের সমন্বয়ে নতুন কমিটি গঠিত হবে এমন আশা করছেন দলের বয়োজ্যেষ্ঠ নেতারা। ইতিমধ্যেই নিজের পছন্দের প্রার্থীদের পক্ষে উপজেলাজুড়ে বিলবোর্ড ও ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে। শহরে ও তৃণমূলের হাটবাজারে সম্মেলনের আসা সম্ভাব্য অতিথিদের পোষ্টার ব্যাপকভাবে সাঁটানো হচ্ছে। অতিথিদের সম্মানে বেশ কয়েকটি তোরণ ও গেইট নির্মাণের কাজ শুরু হচ্ছে। সম্মেলন সফল করতে প্রচারনার কাজ চলছে তোড়জোড়ে।

কারা আসছেন কমলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে-এ প্রশ্নের জবাব মিলবে সম্মেলনে। সমঝোতা না ভোটে নেতা নির্বাচিত করা হবে এ নিয়েও রয়েছে আলোচনা। অনেকে আলোচনার মাধ্যমে কমিটির পক্ষে মত দিলেও কেউ কেউ কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে কমিটি হওয়ার পক্ষে মত দিচ্ছেন। আবার অনেকে সমঝোতার মাধ্যমে নেতৃত্বে আসার জন্যও তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন।

গত ৩১ সেপ্টেস্বর ও ২৯ অক্টোবর সম্মেলনের সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হলেও রহস্যজনকভাবে দফায় দফায় সম্মেলনের তারিখ পরিবর্তন হচ্ছে। সর্বশেষ আগামি ৯ নভেস্বর সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করে প্রচারপত্র ছাপা হয়েছে। দু’দফা সম্মেলনের তারিখ পরিবর্তন হলেও থেমে নেই নেতাকর্মীরা। সম্মেলনকে সামনে রেখে কমলগঞ্জ উপজেলায় দ্বিধা বিভক্ত নেতাকর্মীরা পদ পদবী পেতে লবিং, দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। গত ২৮ আগস্ট কড়া পুলিশি নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যদিয়ে কমলগঞ্জ উপজেলাস্থ জেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে বর্ধিত সভায় সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠনের মধ্যদিয়ে চাঙ্গা হয়ে উঠছে আওয়ামী রাজনীতি।

সর্বশেষ বিগত ২০০৪ সালে কমলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি মো. বেলায়েত আলীকে সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. রফিকুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করে ৬৭ সদস্য বিশিষ্ট উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এর পর দলীয় সভাপতি মো. বেলায়েত আলীর মৃত্যুর পর দলের একটি বিশেষ সভায় সিনিয়র সভাপতি মোসাদ্দেক আহমেদ মানিককে সভাপতির দায়িত্ব পান। ৬৭ সদস্যের কমিটি থাকলেও বিগত ১৫ বছরে ১৪ জন নেতা মৃত্যুবরণ করায় বর্তমানে উপজেলা আওয়ামীলীগে ৫৩ জন নেতা জীবিত আছেন। এর মধ্যে অনেকেই বার্ধক্যজনিক ও অসুস্থতার কারণে দলের কর্মকান্ড থেকে নিষ্ক্রিয় রয়েছেন বলে দলের ঘনিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

কমলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ ঘোষনার পরপরই দেড় ডজন পদ প্রত্যাশীরা শীর্ষনেতাদের আর্শীবাদ পেতে জোর লবিং করে যাচ্ছেন। পাশাপাশি তৃণমূল ও কাউন্সিলরদের সমর্থন আদায়ের প্রাণপণ চেষ্ঠা করছেন।

এরই মধ্যে কমলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে প্রত্যাশী হিসেবে লোকমুখে আলোচনায় আছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি মোসাদ্দেক আহমেদ মানিক, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক, কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ সদস্য কমলগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. রফিকুর রহমান, উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সাবেক চেয়ারম্যান আছলম ইকবাল মিলন, অধ্যক্ষ মো. নুরুল ইসলাম, সহ সভাপতি ও আলীনগর ইউপি চেয়ারম্যান ফজলুল হক বাদশা, উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, জেলা আওয়ামীলীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক, উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মো. সিদ্দেক আলী ও উপজেলা আওয়ামীলীগ সদস্য, সাবেক উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল মুনিম তরফদার, উপজেলা আওয়ামীলীগ সদস্য সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. আব্দুল মছব্বির।

সাধারণ সম্পাদক পদে প্রত্যাশী হিসেবে যাদের নাম শোনা হচ্ছে তারা হলেন-জেলা আওয়ামীলীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ও উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এএসএম আজাদুর রহমান, মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের সদস্য অধ্যক্ষ মো. হেলাল উদ্দিন, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রহিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান ইফতেখার আহমদ বদরুল, অধ্যাপক হারুনুর রশীদ ভূঁইয়া, কমলগঞ্জ সদর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি কমলগঞ্জ পৌর মেয়র মো. জুয়েল আহমেদ, উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি পৌর কাউন্সিলর মো. আনোয়ার হোসেন, শমশেরনগর ইউপি চেয়ারম্যান জুয়েল আহমদ, পতনঊষার ইউপি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী তওফিক আহমদ বাবু, উপজেলা বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের সভাপতি সাবেক আদমপুর ইউপি চেয়ারম্যান সাব্বির আহমদ ভূঁইয়া, উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক আব্দুল মালিক বাবুল প্রমুখ।

ইতিমধ্যে সম্মেলনকে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলীনগর ইউপি চেয়ারম্যান ফজলুল হক বাদশাকে আহ্বায়ক এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মো. সিদ্দেক আলীকে সদস্য সচিব করে সম্মেলন প্রস্তুতিমূলক আহ্বয়ক কমিটি গঠন করা হয়। দ্বিধাবিভক্ত উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলনকে সামনে রেখে কারা হচ্ছেন প্রার্থী এ নিয়ে জল্পনা-কল্পনা চলছে।

সভাপতি প্রার্থী কমলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি অধ্যক্ষ মো. নুরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে কাজ করে যাচ্ছে। আওয়ামীলীগের কার্যক্রম আরো বেগবান করতে আমি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রার্থী হয়েছি। সকলকে সাথে নিয়ে আওয়ামী লীগকে এগিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা আমার থাকবে। আমি আশা করি দায়িত্বশীলরা মাঠের কর্মী হিসেবে আমাকে মূল্যায়ন করবেন।

সাবেক চিফ হুইপ, জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি, উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ অনুসারী এবং অপরপক্ষে আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় সদস্য উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যাপক রফিকুর রহমান অনুসারী আ’লীগের দু’পক্ষের ডজন খানেক নেতৃবৃন্দের মধ্যে লবিং, দৌড়ঝাঁপ ও দু’পক্ষের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধও চলছে পদ পদবী অনুকুলে নিতে।

সভাপতি পদে অপর প্রার্থী কমলগঞ্জ উপজেলা আ’লীগ সদস্য ও শমশেরনগর ইউনিয়নের সাবে চেয়ারম্যান মো. আব্দুল মছব্বির বলেন, আমি ছাত্রজীবন থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত থেকে এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের একজন নিবেদিত প্রবীন কর্মী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছি। কোনদিন দল ও সরকার থেকে কোন সুবিধা নেইনি। দলের নাম ভাঙ্গিয়ে কোন কাজও করিনি কখনও। দলের সম্মেলনে সুবিধাভোগী নয়, ত্যাগী নেতৃবৃন্দরা স্থান পাবেন এমনটাই আশা ব্যক্ত করেন তিনি।

কমলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক ও সভাপতি প্রার্থী ফজলুল হক বাদশা বলেন, সম্মেলনে কাউন্সিলরদের মতামতের উপর ভিত্তি করে সরাসরি সভাপতি ও সম্পাদক নির্বাচন হতে পারে। অথবা গোপন ভোটে নির্বাচন হতে পারে। তবে প্রকৃত ও ত্যাগী নেতৃবৃন্দদের নির্বাচিত করা হবে তিনি মন্তব্য করেন।

সভাপতি পদে আরেক প্রত্যাশী উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মো. সিদ্দেক আলী বলেন, ছাত্রজীবন থেকেই তিনি আজকের আওয়ামী লীগ এসেছেন বলে তার দাবি। দলের দু:সময়েও তিনি তৃণমূলের কর্মীদের সাথে কাজ করেছেন।

সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ইফতেখার আহমদ বদরুল বলেন, ২০০৪ সনে ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের মাধ্যমে দলের নেতৃত্ব সৃষ্টি হয়। দীর্ঘ ১৫ বছর বিরোধী দলে থাকাকালীন সময় থেকে শুরু করে দৃঢ়তার সহিত আমরা দলের দায়িত্ব পালন করি। তবে নানা কারণে দলের সম্মেলন সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। কাজের মূল্যায়নে সফল দাবি করে তিনি বলেন, বর্তমানে কমলগঞ্জ উপজেলার পৌর চেয়ারম্যান জুয়েল আহমদসহ নয়টি ইউনিয়নের মধ্যে ছয়টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দলীয়ভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তাছাড়া টানা ছয় বারের মতো দলীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে কাজ করবেন এবং দলের একজন নিবেদিতপ্রাণ কান্ডারী হিসাবে দায়িত্ব পালন করারও আশা ব্যক্ত করে সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হিসাবে নিজের নাম ঘোষণা করেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত