সিলেটটুডে ডেস্ক

২৩ নভেম্বর, ২০১৯ ০১:০৪

যুবলীগের সপ্তম সম্মেলন আজ, আলোচনায় শেখ মণির বড় ছেলে

আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন আওয়ামী যুবলীগের সপ্তম জাতীয় সম্মেলন আজ শনিবার। সকালে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এ সম্মেলন উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর বিকালে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে সংগঠনটির ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে।

সম্প্রতি যুবলীগের বেশ কয়েক নেতার বিরুদ্ধে ক্যাসিনো ব্যবসা, চাঁদাবাজি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠলে ইমেজ সংকটে পড়ে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনটি। এ অবস্থায় সংগঠনের চেয়ারম্যান পদ থেকে অব্যাহতি পান ওমর ফারুক চৌধুরী, বহিষ্কৃত হন গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটগুলোর অন্তত এক ডজন নেতা। এমন পরিস্থিতিতে এ সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করে হারানো ইমেজ পুনরুদ্ধার করতে চাইছে সংগঠনটি।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, যুবলীগের চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শেখ ফজলুল হক মণির বড় সন্তান শেখ ফজলে শামস পরশ। তবে সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা।

চেয়ারম্যান পদে আলোচনায় থাকা শেখ ফজলে শামস পরশ রাজধানীর বেসরকারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর শেষে যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে ইংরেজিতে ফের স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা বলেন, চেয়ারম্যান পদে শেখ ফজলুল হক মণির বড় ছেলে শেখ ফজলে শামস পরশ, ছোট ছেলে শেখ ফজলে নূর তাপস এবং জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরীর (লিটন চৌধুরী) বিষয়ে প্রাথমিকভাবে চিন্তা ছিল দলের হাইকমান্ডের। তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথাও বলা হয়েছিল। কিন্তু সে সময় তাদের কেউই এ পদে আসতে আগ্রহ প্রকাশ করেননি। ঢাকা-১২ আসনের সংসদ সদস্য তাপস আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সদস্য সচিব। অন্যদিকে লিটন চৌধুরী আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সাধারণ সম্পাদক। প্রথম দিকে পরশ আগ্রহ প্রকাশ না করলেও পরে আগ্রহী হন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, যুবলীগের নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন কাউন্সিলররা। তাদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা হবে। তাদের সম্মতিতে পরবর্তী নেতৃত্ব আসবে। এখানে অবশ্যই আমাদের অভিভাবক ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার মূল্যবান পরামর্শ আমরা নেব। এখানে কে নেতা হবেন এ মুহূর্তে তা বলতে পারছি না।

জানা গেছে, যোগ্য-ত্যাগী নেতা বের করার জন্য এবার সিলেকশন পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে। শেখ হাসিনার নির্দেশে সিলেকশন পদ্ধতিতে এরই মধ্যে কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা নির্বাচন করা হয়েছে। যুবলীগেও একই প্রক্রিয়ায় চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হতে পারেন। সেক্ষেত্রে পরশ যুবলীগের চেয়ারম্যান হচ্ছেন সেটা প্রায় চূড়ান্ত। সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় রয়েছেন চয়ন ইসলাম, আতাউর রহমান আতা, বেলাল হোসেন, মোতাহের হোসেন সাজু, আসাদুল হক আসাদ, মহিউদ্দিন আহমেদ মহি, সুব্রত পাল, মঞ্জুর আলম শাহীন, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাইনুদ্দিন হাসান চৌধুরী, যুবলীগের প্রচার সম্পাদক ইকবাল মাহমুদ বাবলু, সাবেক উপদপ্তর সম্পাদক কাজী নাছিম আল মোমিন রূপক।

আওয়ামী লীগের একটি সূত্র বলছে, সাধারণ সম্পাদক পদে বেলাল হোসেন ও মঞ্জুর আলম শাহীন এগিয়ে রয়েছেন। এই দুজনের যেকোনো একজন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হবেন।

যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন মহি বলেন, সুন্দর ও সফল কংগ্রেসের মাধ্যমে ত্যাগী, পরীক্ষিত, শিক্ষিত এবং বিগত দিনে যারা সংগঠনের জন্য অবদান রেখেছেন তাদের মধ্য থেকে নেতৃত্ব নির্বাচিত হবে বলে একজন কর্মী হিসেবে আমি প্রত্যাশা করি।

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুর আলম শাহীন বলেন, একটি স্বচ্ছ, সৎ ও সাংগঠনিক দক্ষতাসম্পন্ন নেতৃত্ব আসবে। কোনো মাদক গ্রহণকারী, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ এ সংগঠনে স্থান পাবে না। যারা জননেত্রী শেখ হাসিনার আগামীর ভিশন ও মিশন বাস্তবায়নে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেবেন।

নেতা নির্বাচনের বিষয়ে জানতে চাইলে যুবলীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ও সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির সদস্য সচিব হারুনুর রশীদ বলেন, যুবলীগের ইতিহাসে কোনো জাতীয় সম্মেলনেই ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচিত হয়নি। সাংগঠনিক নেত্রী শেখ হাসিনাই নতুন নেতৃত্ব চূড়ান্ত করবেন।

স্বাধীনতা-উত্তরকালে যুবকদের রাজনৈতিক শিক্ষায় সচেতন করার লক্ষ্যে স্বাধীনতা আন্দোলন ও সশস্ত্র সংগ্রামের অন্যতম সংগঠক শেখ ফজলুল হক মনি যুবলীগ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭৪ সালে প্রথম যখন জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় তখন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন ৩৩ বছর বয়সী শেখ ফজলুল হক মনি। সংগঠনটির গঠনতন্ত্রে নেতৃত্বের বয়সসীমা ৪০ বছর থাকলেও ১৯৭৮ সালের দ্বিতীয় কংগ্রেসের পর বিধানটি বিলুপ্ত করা হয়। দীর্ঘদিন যুবলীগ নেতৃত্বের বয়স নিয়ে সমালোচনার মুখে সপ্তম সম্মেলনে ৫৫ বছর বয়সসীমা নির্ধারণ করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত