নিজস্ব প্রতিবেদক

০৬ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:৪৬

শেষ ‘খলিফা’রও বিদায়!

সিলেটের রাজনীতিতে কামরান যুগের কি অবসান হতে যাচ্ছে?

সিলেটে আওয়ামী লীগের রাজনীতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠেছিলেন বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। টানা প্রায় ১৭ বছর সিলেটে শহর ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। এরআগে তিন দফায় ছিলেন শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। সবমিলিয়ে প্রায় তিন দশক সিলেটে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। নানা বিতর্ক সত্ত্বেও সিলেটের রাজনীতিরই মহীরুহ হয়ে ওঠেছিলেন কামরান।

প্রায় তিনদশক পর আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব থেকে বাদ পড়লেন কামরান। বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সভাপতি-সম্পাদক পদে ঠাঁই হয়নি বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের।

এরআগে টানা দুইবার সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে মেয়র পদে হেরে বেকায়দায় ছিলেন কামরান। এবার দলীয় পদও হারাতে হলো। ফলে প্রশ্ন ওঠেছে, সিলেটের রাজনীতিতে কামরান যুগের কি অবসান হতে চলেছে?

তবে কামরানের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত মহানগর যুবলীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক মেহেদী কাবুল মনে করেন, কেন্দ্রীয় কমিটিতে কামরানকে মূল্যায়ন করবেন শেখ হাসিনা। কেন্দ্রের দায়িত্ব দেওয়ার জন্যই তাকে সিলেটের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

সিলেটের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক বর্ণিল চরিত্র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। সিলেটের ভোটের রাজনীতিতেও প্রিয় নাম ছিলেন। তার অনুসারীরা স্লোগান দিতেন- 'এই শহরের প্রিয় নাম বদরউদ্দিন কামরান'। টানা দুইবার সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। কারাগারে থেকেও বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। তবে ২০১৩ সালে এসে প্রথম ধাক্কা খান কামরান। দল ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও হেরে যান নির্বাচনে। ২০১৮ সালে আবার হেরে যান নির্বাচনে। এরপর থেকেই রাজনীতি ব্যাকফুটে চলে যান কামরান।

বৃহস্পতিবার সম্মেলনের পর তো সিলেটের রাজনীতি থেকে অনেকটা বিদায় ঘণ্টাই বেজে গেলো বর্ষীয়ান এই নেতার। যদিও অনুসারীরা মনে করছেন, কেন্দ্রীয় কমিটিতে ভালো পদ দেওয়া হবে কামরানকে।

এক সময় সিলেট আওয়ামী লীগে ছিলেন 'চার খলিফা'। দলের পদ হারানোর পর প্রয়াত হয়েছেন এই চার খলিফার দু'জন আ.ন.ম শফিকুল হক ও ইফতেখার হোসেন শামীম। আরেক খলিফা মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ চলে গেছেন কেন্দ্রীয় কমিটিতে। শেষ পর্যন্ত টিকে ছিলেন বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। বৃহস্পতিবার শেষ খলিফা কামরানের বিদায় ঘণ্টা বেজে গেলো।

১৯৬৮ সালে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত কামরানের নির্বাচনী পদযাত্রা শুরু ১৯৭৩ সালে ওয়ার্ড কমিশনার নির্বাচিত হয়ে। ১৯৮৯ সালে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের উত্তাল সময়ে শহর আওয়ামী লীগের দায়িত্ব দেওয়া হয় কামরানকে। হন সিলেট শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। ১৯৯২ সালে এবং ১৯৯৭ সালে পুনরায় সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০০২ সালে প্রথমবারের মত সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন কামরান। ২০০৫ এ সম্মেলনের মাধ্যমে এবং ২০১১ সালে গঠিত কমিটিতে মহানগর আওয়ামী লীগের পুনরায় সভাপতির হন সদাহাস্য এই নেতা। প্রায় তিন দশক পর এবারই সিলেটে কামরানবিহীন কমিটি করলো আওয়ামী লীগ।

এ প্রসঙ্গে বদরউদ্দিন আহমদ কামরান বলেন, ‘আমি সারাজীবন মানুষের জন্য রাজনীতি করে এসেছি। মানুষের অফুরন্ত ভালোবাসা পেয়েছি। এটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন। পদ-পদবির জন্য কখনো রাজনীতি করিনি। নেত্রী আমাকে যে জায়গায় রাখবেন আমি সেই জায়গা থেকেই দলের জন্য কাজ করবো।’

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত সম্মেলনে মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটিতে কামরানের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন অধ্যাপক জাকির হোসেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত