২৩ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০৫:০৩
কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে হঠাত করে পরিচিতি পাওয়া নুরুল হক নূর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি নির্বাচিত হন। কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে ডাকসুর ভিপি হয়ে যাওয়া নূর এ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে সাত বার হামলা শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে পাঁচ বার হামলার শিকার হয়েছেন ডাকসুর ভিপি নির্বাচিত হওয়ার পর। এসব হামলায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জড়িত ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।
৩০ জুন, ২০১৮ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতৃত্ব দানকালে প্রথম হামলার শিকার হন নুরুল হক নূর। ওইদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে কোটা আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণার জন্য সংবাদ সম্মেলন করতে গেলে নুরুল হক নূরসহ তার সংগঠন ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ। সে হামলার পর দুই সপ্তাহের জন্যে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি।
১১ মার্চ, ২০১৯ রোকেয়া হলে হামলা
এ বছরের ১১ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের নির্বাচনের দিন দ্বিতীয় বার হামলার শিকার হন নুরুল হক নুর। ডাকসু নির্বাচনে ভোট কারচুপির অভিযোগ এনে প্রতিবাদ করতে গিয়ে রোকেয়া হলে ছাত্রলীগের হামলার শিকার হন তিনি। পরে তাকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে বেড শুয়ে তিনি ডাকসুর ভিপি পদে জয়ী হওয়ার সংবাদ পান।
১২ মার্চ, ২০১৯ টিএসসিতে হামলা
ডাকসু নির্বাচনের পর দিন ১২ মার্চ ভিপি পদে নির্বাচিত হয়ে হাসপাতাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে আসেন নুরুল হক নূর। সেখানে আবারও ছাত্রলীগের হামলার শিকার হন তিনি।
২৬ মে, ২০১৯ বগুড়ায় হামলা
ঢাকার বাইরে প্রথম হামলার শিকার হন চলতি বছরের ২৬ মে বগুড়া শহরে। ছাত্র অধিকার পরিষদের ইফতার মাহফিলে যোগ দিতে গিয়ে ছাত্রলীগের হামলার শিকার হন ভিপি নুরুল হক নূর। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তিতাসের নেতৃত্বে তার ওপর হামলা করা হয়েছিল বল অভিযোগ ওঠে। এদিন ভিপি নূরসহ তার সংগঠনের পাঁচজন আহত হন। পরে তাদের অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় পাঠানো হয়।
১৪ আগস্ট, ২০১৯ পটুয়াখালীতে হামলা
পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার নিজ এলাকায় ঈদ উদযাপন করতে গিয়ে এবছরের ১৪ আগস্ট স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হামলার শিকার হন নুরুল হক নূর। সেদিন গলাচিপা থানা পুলিশের সহায়তায় পটুয়াখালী ত্যাগ করেন নুরুল হক।
১৭ ডিসেম্বর, ২০১৯ রাজু ভাস্কর্যে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের হামলা
ভারতের বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনের পাসের প্রতিবাদে গত ১৭ ডিসেম্বর ডাকা সমাবেশে নুরুল হক নূরসহ ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামের একটি সংগঠন। এ হামলার নেতৃত্ব দেন সংগঠনটির সভাপতি ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে অব্যাহতি পাওয়া আমিনুল ইসলাম বুলবুল। হামলায় ভিপি নুরুল হক নূরের বাম হাতের একটি আঙুল ভেঙে যায় বলে অভিযোগ ওঠে। এরপর দিন আবার ভিপি নূরকে মারধর করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে লাঠি হাতে মহড়া দেয় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। তবে প্রক্টরিয়াল বডির হস্তক্ষেপে সেদিন হামলা চালাতে পারেনি মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।
২২ ডিসেম্বর, ২০১৯ ডাকসু ভবনে হামলা
সর্বশেষ রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ভবনে ছাত্রলীগ ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের হামলার শিকার হন নুরুল হক নূর। গুরুতর আহত ভিপি নূরসহ ২৪ জন ঢাকা মেডিকাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। পরে নূরসহ চারজনকে ভর্তি করা হয় ঢামেকে। এদের মধ্যে একজনকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। রোববার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের নতুন প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ভিপি নূরকে দেখতে যান। তাদের সঙ্গে ছিলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। এই হামলাকে বর্বর ও পৈশাচিক বলেও মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের এই নেতারা।
আপনার মন্তব্য