সিলেটটুডে ডেস্ক

০৩ ফেব্রুয়ারি , ২০১৬ ০২:৫৯

‘ছন্দালাপ ছড়াসাহিত্য পদক’ পেলেন লুৎফর রহমান রিটন

ব্যতিক্রম ধারার ছড়া সংগঠন ছড়ানিকেতন সিলেট এর পরিচালনা পরিষদ ছড়াসাহিত্য পদক প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছে। ছড়ানিকেতন সিলেট এর প্রকাশনা ছড়াসাহিত্যের ছোটকাগজ ছন্দালাপ’র নামানুসারে পদকের নামকরণ করা হয়েছে ‘ছন্দালাপ ছড়াসাহিত্য পদক’।

পরিচালনা পরিষদের সর্বসম্মতিতে প্রথম ছন্দালাপ ছড়াসাহিত্য পদক প্রদানের সিদ্ধান্ত হয় দেশবরেণ্য ছড়াসাহিত্যিক ছড়ার কারিগর লুৎফর রহমান রিটনকে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৩০ জানুয়ারি একুশে বাংলা ফাউন্ডেশন আয়োজিত সিলেট কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম ‘ছন্দালাপ ছড়াসাহিত্য পদক ২০১৬’ তাঁর হাতে তুলে দেয়া হয়।

ছড়ানিকেতন সিলেট এর নির্বাহী পরিচালক ও ছন্দালাপ সম্পাদক বশির আহমদ জুয়েল পদকটি লুৎফর রহমান রিটনের হাতে তুলে দেয়ার সময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দেশবরেণ্য শিশুসাহিত্যিক তুষার কর, বাউল আবদুর রহমান, লেখক ও গবেষক আহমাদ মাযহার, একুশে বাংলা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মোসলেহ উদ্দিন বাবুল, ছড়ালোক সম্পাদক  শাহাদত বখত শাহেদ।

ছড়াসাহিত্যিক লুৎফর রহমান রিটন ১৯৬১ সালের ১ এপ্রিল ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর গ্রন্থের সংখ্যা শতাধিক হলেও ছড়াসাহিত্যিক হিসেবে তিনি বিশেষভাবে পরিচিতি লাভ করে খ্যাতি অর্জন করেন।

তিনি নবাবপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক করেছেন। কর্মজীবনে তিনি বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকায় বিভাগীয় ও নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন।

জাপানস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি প্রেস হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৯৯-২০০০ বাংলা একাডেমির নির্বাচিত কাউন্সিল সদস্যের দায়িত্ব পালন করেছেন। বিশ্ব সাহিত্যকেন্দ্র থেকে প্রকাশিত কিশোর তরুণদের উৎকর্ষধর্মী মাসিক আসন্ন ও মাসিক পত্রিকা ‘ছোটদের কাগজ’ সম্পাদনা করেছেন।

১৯৯৭ সালে ইউনিসেফ ক্যাম্পেইনের অংশ হিসেবে শিশুদের বিশেষ করে মেয়ে শিশুদের অধিকার এবং শিক্ষা বিষয়ক মীনা উন্নয়ন প্রকল্পের অন্যতম পরিকল্পনাকারী ও লেখক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ২০০০ সালে ইউনিসেফ কর্তৃক প্রকাশিত হয় অডিও সিডি, ক্যাসেট এবং বই ‘আমরা সবাই মীনার মতো’ যার রচনা ও পরিচালনা করেন লুৎফর রহমান রিটন।

রোকনুজ্জামান খান দাদাভাইয়ের স্নেহধন্য লুৎফর রহমান রিটন কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলার সাথে জড়িত ছিলেন। টেলিভিশনের একজন সফল উপস্থাপক এবং নাট্যকার হিসেবেও খ্যাতিমান। অনেক জনপ্রিয় গানের গীতিকার এবং অনেক জনপ্রিয় বিজ্ঞাপনের স্ক্রিপ্ট রাইটার। বর্তমানে তিনি সপরিবারে কানাডায় বসবাস করছেন।

তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ধুত্তুরি, ঢাকা আমার ঢাকা, উপস্থিত সুধীবৃন্দ, রাজাকারের ছড়া, আহসান হাবীবের ছেলেবেলা, নিখোঁজ সংবাদ, হিজিবিজি, ছড়া ও ছবিতে মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশের অগ্নিকিশোর, ঝন্টুপন্টুদের গোয়েন্দাগিরি, শেয়ালের পাঠশালা, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস, হামটি ডামটি, ১০০ রিটন, হ্যালো হুলো, বাঘের বাচ্চা, হ্যান করেংগা ত্যান করেংগা, ধিতাং ধিতাং, বাচ্চা হাতির কাণ্ডকারখানা, অনেকগুলো মামা, ইতিহাস স্যার, টোকাই আমিন টোকাই বেড়াল, জাগরণের ছড়া, লিলিপুটের ছোটভাই, টুকরো স্মৃতির মার্বেলগুলো, স্মৃতির জোনাকিরা, আমাদের ছোট নদী প্রভৃতি।

তিনি বাংলাদেশের নির্বাচিত ছড়া, কিশোর অনিন্দ্য, ছোটদের মুক্তিযুদ্ধের ছড়া কবিতা, সুফিয়া কামাল স্মারকগ্রন্থ, জাহানারা ইমাম স্মারকগ্রন্থ, রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মারকগ্রন্থসহ বেশকিছু গ্রন্থ সম্পাদনা করেছেন।

সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, সিকান্দার আবু জাফর সাহিত্য পুরস্কার, অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পুরস্কার, টেলিভিশনে ছোটদের নাটক রচনার জন্য টেনাশিনাস পদক, দাদাভাই শিশুসাহিত্য পুরস্কার, সিটি-আনন্দ আলো সাহিত্য পুরস্কার, অন্নদাশংকর পুরস্কার, মোহাম্মদ নাসির আলী স্বর্ণপদক ইত্যাদি।

লুৎফর রহমান রিটন বাংলা একাডেমির ফেলো এবং মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের উদ্যোক্তা সদস্য।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত