সিলেটটুডে ডেস্ক

১৬ মে, ২০১৬ ২৩:০৫

সিলেটে বইপড়া উৎসবের পুরস্কার বিতরনী বুধবার

সিলেটে একদশক পূর্ণ করলো বইপড়া উৎসব। আগামী ১৮ মে বুধবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে এ বছরের অনুষ্ঠানের পুরস্কার বিতরণী ও সমাপনী অনুষ্ঠান।

তরুণ প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরার প্রত্যয় নিয়ে ২০০৬ সালে এ উৎসব যাত্রা শুরু করে। যুগান্তর স্বজন সমাবেশ সিলেট ও জীবনমান উন্নয়ন প্রয়াসে সংস্থা ‘ইনোভেটর’র আয়োজনে প্রথমবার এ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। শিক্ষার্থীদের কাছে ব্যতিক্রমী এ আয়োজন শুরুর পর থেকেই ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার সঞ্চার করে।

জানা যায়, একাদশ থেকে স্নাতক শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা এ উৎসবে অংশ নেন। সাধারণত প্রতিবছরের ডিসেম্বর মাসে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বইপড়া উৎসবে অংশ নেয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন করে। পরবর্তীতে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের হাতে মুক্তিযুদ্ধের একটি গ্রন্থ তুলে দেয়া হয়।

এরপর ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিতে নির্ধারিত গ্রন্থের উপর অনুষ্ঠিত হয় প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা। মার্চে স্বাধীনতার মাসে দেয়া হয় পুরস্কার। শ্রেষ্ঠ পাঠক এবং সেরা পাঠক শিরোনামে এই পুরস্কারগুলো প্রদান করা হয়। এছাড়া পরীক্ষায় অংশ নেয়া প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে দেয়া হয় সনদপত্র। বইপড়া উৎসব শুরু থেকেই জনপ্রিয় হয়ে উঠায় এক সময় সিলেটের বাইরে থেকেও শিক্ষার্থীরা এ উৎসবে অংশ নিতে থাকে।

বইপড়া উৎসবের উদ্যোক্তা, যুগান্তর স্বজন সমাবেশের সমন্বয়ক প্রণবকান্তি দেব জানান, এ পর্যন্ত ৮টি আসরে প্রায় ৫ সহস্রাধিক শিক্ষার্থী বইপড়া উৎসবে অংশ নিয়েছে। তিনি বলেন, যে প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি, তারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানার জন্য স্বতস্ফুর্তভাবে এগিয়ে এসে এ উৎসবে অংশ নেয়। এটা আমাদের জন্য আশাব্যঞ্জক। তিনি আরো জানান, বইপড়া উৎসবে অংশ নেয়া কোন শিক্ষার্থী দেশবিরোধী কোন কাজে জড়িত হবে না বলে আমাদের বিশ্বাস।

বইপড়া উৎসবের আরেক উদ্যোক্তা যুগান্তর সিলেট ব্যুরো প্রধান রেজওয়ান আহমদ জানান, ‘জ্ঞানের আলোয় অবাক সূর্যোদয়!/ এসো পাঠ করি/ বিকৃতির তমসা থেকে/ আবিস্কার করি স্বাধীনতার ইতিহাস’ স্লোগানকে সামনে রেখে গত এক দশক যাবত এই অনুষ্ঠান আয়োজিত হচ্ছে। তিনি বলেন, বইয়ের প্রতি, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের প্রতি তরুণ প্রজন্মের ভালোবাসার জন্যই এ উৎসব চলে আসছে। রেজওয়ান আহমদ বলেন, বইপড়া উৎসবের মূল লক্ষ্য হচ্ছে আজকের শিক্ষার্থীদের বাঙালীর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে জাগ্রত করা।

উল্লেখ্য, ২০০৬ সালে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের অমর গ্রন্থ ‘একাত্তরের দিনগুলি’ পাঠের মধ্য দিয়ে এ উৎসবের সূচনা হয়। পরবর্তীতে সেলিনা হোসেনের ‘হাঙর নদীর গ্রেনেড’, শাহীন আখতারের ‘তালাশ’, হাসান আজিজুল হকের ‘নামহীন গোত্রহীন’, মেজর অব. কামরুল হাসানের ‘জনযুদ্ধের গণযোদ্ধা’, মাহমুদুল হকের ‘খেলাঘর’, আনোয়ার পাশার ‘রাইফেল রুটি আওরাত’ এবং এ বছর শওকত ওসমানের ‘দুই সৈনিক’ গ্রন্থটি শিক্ষার্থীদের পাঠের উদ্দেশ্যে তুলে দেয়া হয়। বইপড়া উৎসবের উদ্বোধনী এবং সমাপনী অনুষ্ঠানে সরকারের অর্থমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ দেশ বরেণ্য শিল্প সাহিত্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

সেই ধারাবাহিকতায় আগামী ১৮ মে বুধবার বেলা ৩টায় সিলেট জেলা পরিষদ মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। এছাড়াও সিলেটসহ দেশের খ্যাতিমান শিল্প, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব উপস্থিত থাকবেন।

অনুষ্ঠানে অষ্টম বইপড়া উৎসবের শ্রেষ্ঠ পাঠক ও সেরা পাঠকদের হাতে পুরস্কার তুলে দেয়া হবে। তিন পর্বের সমাপনী অনুষ্ঠানে রয়েছে আলোচনা সভা, পুরস্কার বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এদিকে, সমাপনী অনুষ্ঠানকে সফলের লক্ষ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। স্বজন সমাবেশের নেতৃবৃন্দের প্রস্তুতি সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের রিহার্সেলসহ নান আয়োজনে ব্যস্ত এখন আয়োজকরা।

সোমবার এক প্রস্তুতি সভা জিন্দাবাজারস্থ যুগান্তর সিলেট ব্যুরো কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। এতে অনুষ্ঠানের সার্বিক বিষয়ে স্বজনদের নির্দেশনা দেন বইপড়া উৎসবের প্রধান উদ্যোক্তা, যুগান্তর স্বজন সমাবেশের বিভাগীয় সমন্বয়কারী প্রণবকান্তি দেব। এসময় জেলা স্বজনের সভাপতি মবরুর আহমদ সাজু, সাধারণ সম্পাদক সুবিনয় আচার্য্য, স্বজন শাহ শরিফ উদ্দিন, এনামুল ইসলাম, শাওন আহমদসহ বিভিন্ন শাখার স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত