সংবাদ বিজ্ঞপ্তি

২৯ জুলাই, ২০১৮ ১৫:২০

মৌলভীবাজারে হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের স্মারকলিপি

আসন্ন ঈদুল আজহা ও দুর্গা পূজায় মাসিক বেতনের সমপরিমাণ উৎসব বোনাস প্রদান, ৮ ঘণ্টা কর্মদিবস, নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র, সার্ভিসবুক প্রদানসহ শ্রম আইন বাস্তবায়ন এবং হোটেল সেক্টরে সরকার ঘোষিত নিম্নতম মজুরি কার্যকর করার দাবিতে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।

রোববার (২৯ জুলাই) দুপুর ১২টায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে মৌলভীবাজার জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়ন রেজিঃ নং চট্টঃ২৩০৫ এর পক্ষ থেকে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।

জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. মোস্তফা কামাল ও সাধারণ সম্পাদক মো. শাহিন মিয়া স্বাক্ষরিত স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয় মুসলমানদের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা আসন্ন। এই ধর্মীয় উৎসবে সকল শ্রেণি পেশার জনগণের নিকট আনন্দের বার্তা নিয়ে আসলেও হোটেল শ্রমিকদের সব সময় এই আনন্দ থেকে বঞ্চিত করা হয়। কারণ ঈদ ও পূজায় হোটেল শ্রমিকরা কোন উৎসব বোনাস পান না, এমন কি অধিকাংশ হোটেল শ্রমিকদের ঈদ ও পূজায় কোন ছুটিও প্রদান করা হয় না। আর যে সকল শ্রমিকদের ছুটি দেওয়া হয় তাদের ছুটির দিনের বেতনও দেওয়া হয় না। ২০০৯ সালের ২৪ নভেম্বর সরকার হোটেল শ্রমিকদের জন্য নিম্নতম মজুরির গেজেট প্রকাশ করা হলেও ঘোষিত গেজেট অনুযায়ী প্রত্যেক শ্রমিককে এক মাসের বেতনের সমপরিমাণ বছরে ২টি উৎসব বোনাস প্রদানের আইন করা করা হয়।

এরপর ২০১২ সালের ২৬ এপ্রিল সরকার ঘোষিত গেজেট ও শ্রম আইন বাস্তবায়নের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ রেঁস্তোরা মালিক সমিতি এবং বাংলাদেশ হোটেল রেস্টুরেন্ট সুইটমিট শ্রমিক ফেডারেশনের মধ্যে লিখিত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২ জুলাই’২০১৫ শ্রীমঙ্গলস্থ উপ-শ্রম পরিচালক ও উপ-মহাপরিদর্শকের মধ্যস্থতায় মৌলভীবাজার জেলা হোটেল রেস্টুরেন্ট মালিক সমিতি সাথে মৌলভীবাজার জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়ন রেজিঃ নং চট্টঃ-২৩০৫-এর লিখিত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তিতে সকল হোটেল শ্রমিকদের মাসিক বেতনের সমপরিমাণ বোনাস প্রদান, সরকার ঘোষিত নিম্নতম মজুরির গেজেট ও শ্রম আইন বাস্তবায়ন এবং শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ করার প্রেক্ষিতে লিখিত সিদ্ধান্ত হয়।

কিন্তু চুক্তি করলেও গত ঈদুল ফিতরের সময় কোন মালিকই শ্রমিকদের চুক্তি অনুযায়ী বেতনের সমপরিমাণ বোনাস প্রদান করেননি। ২০০৯ সালের পর সরকার নতুন করে গত ১ মার্চ ২০১৭ তারিখে হোটেল সেক্টরের শ্রমিকদের জন্য নিম্নতম মজুরির গেজেট (এসআরও নং ৩৮-আইন/২০১৭) প্রকাশ করেন, বর্তমান ঊর্ধ্বগতির বাজারদরে সরকার ঘোষিত মজুরিতে পরিবার-পরিজন নিয়ে একজন শ্রমিক ১০দিনও চলতে পারবে না। তারপরও মালিকরা সরকার ঘোষিত নিম্নতম মজুরি কার্যকর না করে বে-আইনীভাবে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন।

শুধু তাই নয় বাংলাদেশ শ্রম আইন-এর ৫ ধারায় নিয়োগপত্র ও পরিচয়পত্র, ৬ ধারায় সার্ভিস বই, ২(১০) ধারায় প্রতিবছর চাকুরীর জন্য ৪৫ দিনের গ্রাচুইটি, ২৬(ক) ধারায় চাকুরীচ্যূতি জনিত ৪ মাসের নোটিশ পে, ১০৩ ধারায় সপ্তাহে দেড়দিন সাপ্তাহিক ছুটি, ১০৮ ধারায় দৈনিক ৮ ঘণ্টা সপ্তাহে ৪৮ ঘণ্টা কাজ, অতিরিক্ত কাজের জন্য দ্বিগুণ মজুরি প্রদান, ১১৫ ধারায় বছরে ১০ দিন নৈমিত্তিক ছুটি, ১১৬ ধারায় ১৪ দিন অসুস্থতার ছুটি, ১১৭ ধারায় প্রতি ১৮ দিন কাজের জন্য ১ দিন অর্জিত ছুটি, ১১৮ ধারায় ১১ দিন উৎসব ছুটি প্রদানের আইন থাকলেও আমাদেরকে এই সকল আইনগত অধিকার হতে বঞ্চিত করা হচ্ছে। অথচ হোটেল মালিকরা সরকারী আইন ও চুক্তি লঙ্ঘন করে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে এই সকল কর্মকাণ্ড চালালেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এব্যাপারে নির্বিকার। শুধু আইনগতভাবে নয় ধর্মীয় মূল্যবোধ ও মানবাধিকারের দিক থেকেও হোটেল শ্রমিকদের উৎসব বোনাস ন্যায্য অধিকার।

শ্রম আইনে স্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ ও বাসস্থানের বিধান থাকলেও আমরা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ করতে ও থাকতে বাধ্য হই। আমরা দৈনিক ১০/১২ ঘণ্টা অমানবিক পরিশ্রম করে অর্ধাহারে-অনাহারে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হই। এমতাবস্থায় হোটেল শ্রমিকদের আসন্ন ঈদুল আযহা ও শারদীয় দুর্গা পূজায় মাসিক বেতনের সমপরিমাণ উৎসব বোনাসসহ মালিক সমিতির সাথে সম্পাদিত চুক্তি বাস্তবায়নের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসকের ভূমিকা একান্ত জরুরী।

উল্লেখ্য স্মারকলিপির অনুলিপি বিভাগীয় কমিশনার, সিলেট, শ্রম পরিচালক, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ঢাকা, মহা-পরিদর্শক, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর, ঢাকা, যুগ্ম-শ্রম পরিচালক, বিভাগীয় শ্রম দপ্তর, চট্টগ্রাম, পুলিশ সুপার, মৌলভীবাজার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, মৌলভীবাজার সদর, মেয়র, মৌলভীবাজার পৌরসভা, উপ-মহাপরিদর্শক, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর, শ্রীমঙ্গল, উপ শ্রম পরিচালক, শ্রীমঙ্গল, সভাপতি, চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি, মৌলভীবাজার; সভাপতি/সম্পাদক, মৌলভীবাজার হোটেল-রেস্টুরেন্ট মালিক সমিতি, মৌলভীবাজার বরাবর প্রদান করা হয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত