সিলেটটুডে ডেস্ক:

১৪ নভেম্বর, ২০২১ ২৩:৪৩

টি-টোয়েন্টির নতুন চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া

নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথমবারের মত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা জিতলো অস্ট্রেলিয়া। ফাইনাল ম্যাচে ওয়ার্নার এবং মার্শের ফিফটির সুবাদে কিউইদের ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়ে 'প্রথম' টি-টোয়েন্টি শিরোপার স্বাদ পেল অস্ট্রেলিয়া।

আইসিসি ইভেন্টে সবচেয়ে সফল দল অস্ট্রেলিয়া। এখন পর্যন্ত মোট ১১টি আইসিসি ফাইনালে ৮টিতে জিতেছে তারা। এর মধ্যে ৫০ ওভারের বিশ্বকাপে রেকর্ড পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে অস্ট্রেলিয়া। এতদিন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ট্রফিটা অধরা থাকলেও এবার সেটিও ঘরে তুললো ক্যাঙ্গারুরা।

১৭৩ রানের লক্ষ্যে ওপেন করতে নামেন অ্যারন ফিঞ্চ ও ডেভিড ওয়ার্নার। তৃতীয় বলে সিঙ্গেল নিয়ে রানের খাতা খোলেন ওয়ার্নার। শুরু থেকেই ধীরে এগোতে থাকে অজি দুই ওপেনার। তৃতীয় ওভারে বোল্টের প্রথম বলেই বাউন্ডারি মেরে পরের বলেই আউট হন ফিঞ্চ। ব্যাটের কানায় লেগে বল ওপরে উঠায় দুর্দান্ত ক্যাচ নেন ড্যারিল মিচেল। ফিঞ্চ ফিরেছেন ৭ বলে ৫ রান করে।

ফিঞ্চ ফিরলেও মিচেল মার্শ ও ডেভিড ওয়ার্নারের ব্যাটে রানের চাকা সচল রাখে অস্ট্রেলিয়া। পাওয়ারপ্লের ৬ ওভারে অজিদের রান ৪৩। নিউজিল্যান্ডের রান এ সময়ে ছিল ১ উইকেটে ৩২।

পাওয়ারপ্লের পর আগ্রাসী হয়ে উঠে ওয়ার্নার। চার-ছক্কার ফুলঝুড়িতে ৩৪ বলে অর্ধশতক হাঁকান অজি এই ওপেনার। মাত্র ৫৯ বলে ৯২ রানের জুটি গড়ে নিউজিল্যান্ডকে ভুগিয়েছেন ডেভিড ওয়ার্নার ও মিচেল মার্শ। সেঞ্চুরির পথে আগানো এ জুটি ভেঙে কিউইদের ম্যাচে ফেরান ট্রেন্ট বোল্ট। বাঁহাতি পেসারের বল স্লগ করতে গিয়ে বোল্ড হন ওয়ার্নার। ৪ চার ও ৩ ছক্কার সাহায্যে ৩৮ বলে ৫৩ রান করে ক্রিজ ছাড়েন ওয়ার্নার।

এরপর তৃতীয় উইকেট জুটিতে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে সঙ্গে নিয়ে অপ্রতিরোধ্য ৬৫ রানের জুটি গড়ে দলকে জয় এনে দেন মিচেল মার্শ। অর্ধশতক পূর্ণ করার পর মাত্র ৫০ বলে ৭৭ রানে অপরাজিত থাকেন। এদিকে ২৮ রান করে মাঠ ছাড়েন ম্যাক্সওয়েল।

এর আগে ফাইনালের মঞ্চে টস হারে নিউজিল্যান্ড। প্রত্যাশিতভাবেই টস জিতে কিউইদের ব্যাটিংয়ে পাঠান অজি দলপতি অ্যারন ফিঞ্চ। টস হেরে নিউজিল্যান্ডের হয়ে ওপেন করতে নামেন ড্যারিল মিচেল ও মার্টিন গাপটিল। দ্বিতীয় বলে চার মেরে রানের খাতা খুলেন গাপটিল। প্রথম ওভার থেকে আসে ৯ রান। তৃতীয় ওভারে ক্যাচ মিস করে গাপটিলকে জীবন দেন ওয়েড। তবে পরের ওভারেই ওয়েডের ক্যাচে পতন হয় নিউজিল্যান্ডের প্রথম উইকেটের। হ্যাজলউডের বলে উইকেটের পেছনে এবার আর ক্যাচ নিতে ভুল করলেন না তিনি। ৮ বলে ১ ছক্কায় ১১ রান করে ফেরেন মিচেল। ২৮ রানে ভাঙল নিউজিল্যান্ডের উদ্বোধনী জুটি।

ফাইনালের মঞ্চে পাওয়ারপ্লেতে বিবর্ণ ছিল নিউজিল্যান্ড। প্রথম তিন ওভারে ২৩ রান করা কিউইরা মাত্র ৯ রান করে পরের ৩ ওভারে। পাওয়ারপ্লে'র ৬ ওভার শেষে নিউজিল্যান্ডের রান ১ উইকেটে ৩২। এবারের বিশ্বকাপে পাওয়ার প্লে'তে এটাই নিউজিল্যান্ডের সর্বনিম্ন রান। শুরুতে অজিদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে বেশ মন্থর গতিতে ঘুরেছে নিউজিল্যান্ডের রান। প্রথম ১০ ওভারে কিউইদের সংগ্রহে ওঠে মাত্র ৫৭ রান।

উদ্বোধনী জুটি ভাঙার পর ইতিবাচক ব্যাটিং করতে থাকেন উইলিয়ামসন-গাপটিল। এ সময় দুজন মিলে তুলেন ৪৮ রানের জুটি। দলীয় ৭৬ রানে গাপটিলকে সাজঘরে পাঠান জাম্পা। ​তাকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে স্টয়নিসের তালুবন্দী হন গাপটিল। ৩৫ বলে ৩ চারে ২৮ রান করেন কিউই ওপেনার।
এদিকে ব্যাট হাতে দুর্দান্ত খেলতে থাকা দলীয় অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন তুলে নেন ব্যক্তিগত অর্ধশতক। শেষদিকে ঝড়ো ব্যাটিংয়ে দলীয় স্কোর বাড়ানোর পাশাপাশি নিজের স্ট্রাইকটাও বাড়িয়ে নেন তিনি। ম্যাক্সওয়েলকে টানা দুই ছক্কা মেরে মাত্র ৩২ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে একটি রেকর্ডও তৈরি করে নিয়েছেন উইলিয়ামসন। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে দ্রুততম অর্ধশতক এটি।

এগারোতম ওভারে স্টার্কের ওভারে জীবন পেয়ে ১৯ রান নিয়েছিলেন উইলিয়ামসন। ষোলতম ওভারে স্টার্ক ফিরতেই তার ওপর চড়াও হন কিউই অধিনায়ক। বাঁহাতি পেসার খরচ করলেন ২২ রান। পরের ওভারে হ্যাজলউডের বলে ম্যাক্সওয়েলের হাতে ধরা পড়েন গ্লেন ফিলিপস। ১ চার ও ১ ছক্কার সাহায্যে ১৭ বলে ১৮ রান করে সাজঘরে ফেরেন ফিলিপস।

দলীয় ১৪৯ রানে শতরান হাতছাড়া করে সাজঘরে ফেরেন উইলিয়ামসন। হ্যাজলউডকে এগিয়ে এসে লং অফে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ব্যাটে-বলে ঠিকমতো হলো না তার, ধরা পড়লেন স্টিভ স্মিথের হাতে। ১০ চার ও ৩ ছক্কার সাহায্যে ৪৮ বলে ৮৫ রান করে ক্রিজ ছাড়েন কিউই দলনায়ক। হ্যাজলউড ক্যাচ ছাড়ার সময় ২১ রানে ছিলেন উইলিয়ামসন।

নিউজিল্যান্ড নির্ধারিত ২০ ওভারে ৪ উইকেটের বিনিময়ে ১৭২ রান তুলেছে। শেষ পর্যন্ত ৭ বলে ১৩ রান করে অপরাজিত থাকেন জিমি নিশাম। ৬ বলে ৮ রান করেছেন টিম সাইফার্ট। মিচেল স্টার্ক ৪ ওভারে ৬০ রান খরচ করেও কোনও উইকেট তুলতে পারেননি। জয়ের জন্য অস্ট্রেলিয়ার দরকার ১৭৩ রান।

ফাইনালের মঞ্চে অপরিবর্তিত একাদশ নিয়ে মাঠে নামে অস্ট্রেলিয়া। অন্যদিকে নিউজিল্যান্ড দল নামে এক পরিবর্তন নিয়ে। চোটে পড়ায় ডেভন কনওয়ের জায়গায় দলে ঢুকেন টিম সাইফার্ট।

নিউজিল্যান্ড একাদশ:
মার্টিন গাপটিল, ড্যারিল মিচেল, কেইন উইলিয়ামসন, গ্লেন ফিলিপস, টিম সাইফার্ট, জিমি নিশাম, মিচেল স্যান্টনার, অ্যাডাম মিলনে, টিম সাউদি, ইশ সোধি ও ট্রেন্ট বোল্ট।

অস্ট্রেলিয়া একাদশ:
ডেভিড ওয়ার্নার, অ্যারন ফিঞ্চ, মিচেল মার্শ, স্টিভ স্মিথ, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, মার্কাস স্টয়নিস, ম্যাথু ওয়েড, প্যাট কামিন্স, মিচেল স্টার্ক, অ্যাডাম জাম্পা ও জশ হ্যাজলউড।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত