স্পোর্টস ডেস্ক

২৬ অক্টোবর, ২০২৩ ১৮:৩৮

মাত্র ১৫৬ রানেই অলআউট ইংল্যান্ড

ওয়ানডে ক্রিকেটের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড এবারের বিশ্বকাপে দাঁড়াতেই পারছে না। উদ্বোধনী ম্যাচে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে হারের পর বাংলাদেশের বিপক্ষে জয় ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছিল, কিন্তু সেটা আর হচ্ছে কই? সেই হারের বৃত্ত। এরপর আফগানিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা-এই দুই দলের বিপক্ষেই হেরেছে ইংলিশরা।

পয়েন্ট তালিকায় নেদারল্যান্ডস আর বাংলাদেশের উপরে অবস্থান তাদের। সেমিফাইনালের রেসে টিকে থাকতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয়ের বিকল্প নেই। কিন্তু লড়াইয়ের মাঝপথে এসে মনে হচ্ছে সে অনেক কঠিন।

আজ বেঙ্গালুরুর চিন্নস্বামী স্টেডিয়ামে টিকে থাকার লড়াইয়ে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ইংলিশরা অলআউট হয়েছে ১৫৬ রানে।

টস জিতে আজ প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক জস বাটলার। দুই ইংলিশ ওপেনার জনি বেয়ারস্টো ও ডেভিড মালান আক্রমণাত্মক শুরু করেছিলেন। ৬.২ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৪৫ রান করে ফেলে ইংলিশরা। মালানকে ফিরিয়ে বিধ্বংসী জুটি ভেঙেছেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথ্যুস। সপ্তম ওভারের তৃতীয় বলে মালানের বিপক্ষে কট বিহাইন্ডের আবেদন করে শ্রীলঙ্কা। সঙ্গে সঙ্গে রিভিউ নিয়ে নেন একই সঙ্গে লঙ্কান অধিনায়ক ও উইকেটরক্ষক কুশল মেন্ডিস। পরে দেখা যায় হালকা এজ হয়েছে। ২৫ বলে ৬ চারে ২৮ রান করেছেন মালান। চার মাস পর ওয়ানডেতে ফিরে নিজের প্রথম ওভারেই উইকেট পেলেন ম্যাথ্যুস।

মালানের বিদায়ের পর উইকেটে আসেন জো রুট। দশম ওভারের চতুর্থ বলে মাহিশ তিকশানা অফসাইডে ঠেলে সিঙ্গেল নিতে যান রুট। তবে অপরপ্রান্তে বেয়ারস্টো সাড়া দেননি। যতক্ষণে রুট ফিরে গেছেন, তার আগেই ম্যাথ্যুস-মেন্ডিস মিলে রানআউট করেছেন। ১০ বলে ৩ রান করেছেন রুট। প্রথম ১০ ওভার শেষে ইংল্যান্ডের স্কোর দাঁড়ায় ২ উইকেটে ৫৯ রান।

প্রথম পাওয়ারপ্লে শেষে ইংল্যান্ডের রানের চাকা কিছুটা থেমে যায়। ১৩ ওভার শেষে ইংলিশদের স্কোর দাঁড়ায় ২ উইকেটে ৬৮ রান। এরপর থেকেই নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারানো শুরু করে ইংলিশরা। ১৪ তম ওভারের দ্বিতীয় বলে কাসুন রাজিথাকে তুলে মারতে যান বেয়ারস্টো। মিড অনে দুর্দান্ত ক্যাচ ধরেছেন ধনঞ্জয়া ডি সিলভা। ৩১ বলে ৩ চারে ৩০ রান করেন বেয়ারস্টো। এরপর বাটলার এসেও উইকেটে টিকতে পারেননি বেশিক্ষণ। ১৫ তম ওভারের পঞ্চম বলে কুমারাকে কাট করতে যান ইংলিশ অধিনায়ক। আউটসাইড এজ হওয়া বল ডাইভ দিয়ে দুর্দান্তভাবে ধরেছেন মেন্ডিস।

বাটলারকে ফেরানোর পরই অল্প সময়ের মধ্যে আরও এক উইকেট নিয়েছেন কুমারা। ১৭ তম ওভারের শেষ বলে কুমারার বলে এলবিডব্লু হয়েছেন লিয়াম লিভিংস্টোন। বেয়ারস্টো, বাটলার, লিভিংস্টোন-এই তিন ব্যাটারের দ্রুত বিদায়ে ইংল্যান্ডের স্কোর দাঁড়ায় ১৭ ওভারে ৫ উইকেটে ৮৫ রান। চার নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামা বেন স্টোকস অসহায়ের মতো দেখেছেন সতীর্থদের বিদায়। স্টোকসও দুইবার আউট হতে হতে বেঁচেছেন। ১৯ তম ওভারের চতুর্থ বলে কুমারাকে লেগ সাইডে ঘোরাতে চেয়েছেন স্টোকস। এজ হয়ে যাওয়া বল উড়ে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ধরার চেষ্টা করেও ধরতে পারেনি সাদিরা সামারাবিক্রমা। এরপর ২০ তম ওভারের পঞ্চম বলে মাহিশ তিকসানাকে রিভার্স সুইপ করতে গেলে আম্পায়ার স্টোকসকে এলবিডব্লু আউট দিয়েছেন। তবে স্টোকস তৎক্ষণাৎ রিভিউ করলে দেখা যায় ব্যাটে বল লেগেছে।

দুইবার বেঁচে যাওয়া স্টোকস এরপর প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেছেন মঈন আলীকে নিয়ে। স্টোকস, মঈন মিলে পাল্টা আক্রমণ করেছেন লঙ্কান বোলারদের। ষষ্ঠ উইকেটে ৩৬ বলে ৪৭ রানের জুটি গড়েছেন এই দুই ব্যাটার। মঈনকে ফিরিয়ে এই জুটি ভেঙেছেন ম্যাথ্যুস। ২৫ তম ওভারের চতুর্থ বলে কাট করতে গিয়ে পয়েন্টে কুশল পেরেরার তালুবন্দী হয়েছেন মঈন। ১৫ বলে ১ চারে ১৫ রান করেন ইংলিশ এই অলরাউন্ডার। পরের ওভারে রানের খাতা খোলার আগেই বিদায় নিয়েছেন ক্রিস ওকস। ২৬ তম ওভারের পঞ্চম বলে রাজিথাকে কাট করতে যান ওকস। পয়েন্টে ডাইভ দিয়ে সাদিরা দুর্দান্ত ক্যাচ ধরেন। প্রথমে আউট না দেওয়া হলেও তৃতীয় আম্পায়ার দেখে আউট দিয়েছেন। তাতে ইংল্যান্ডের স্কোর দাঁড়ায় ২৫.৫ ওভারে ৭ উইকেটে ১২৩ রান।

স্টোকস এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকলেও বেশিক্ষণ উইকেটে টিকতে পারেননি। ইনিংসের ৩১ তম ওভারেই আউট হয়েছেন ইংল্যান্ডের বাঁহাতি ব্যাটার। এই ওভারের প্রথম বলে কুমারাকে পুল করতে যান স্টোকস। ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ ধরেছেন বদলি ফিল্ডার দুশান হেমন্ত। ৭৩ বলে ৬ চারে ৪৩ রান করেছেন স্টোকস। তাতে ইংল্যান্ডের স্কোর দাঁড়ায় ৩০.১ ওভারে ৮ উইকেটে ১৩৭ রান।

বোলিংয়ের পাশাপাশি ফিল্ডিংয়েও আজ লঙ্কানরা কতটা দুর্দান্ত ছিল, তা ইংল্যান্ডের ইনিংস দেখলেই স্পষ্ট। ৩২ তম ওভারের শেষ বল তিকশানা করেন ওয়াইড। ওয়াইড হওয়া মোকাবেলা করে বাড়তি রান নেওয়ার চেষ্টা করেননি ডেভিড উইলি। অন্যদিকে নন স্ট্রাইক প্রান্ত থেকে আদিল রশিদ অনেকটা দৌড়ে আবার ফেরার চেষ্টা করেন। লঙ্কান উইকেটরক্ষক মেন্ডিস ডিরেক্ট থ্রোতে নন স্ট্রাইক প্রান্তের স্টাম্প ভেঙে দেন। ভরসা হিসেবে থাকা একমাত্র ব্যাটার উইলি অপরাজিত থাকলেও ইংল্যান্ড অলআউট হয়ে যায় ৩৩.২ ওভারে ১৫৬ রানে। যেখানে মার্ক উডকে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন তিকশানা। ইংল্যান্ডের ইনিংসের সর্বোচ্চ ৪৩ রান এসেছে স্টোকসের ব্যাট থেকে। লঙ্কান বোলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নিয়েছেন কুমারা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত