স্পোর্টস ডেস্ক

২৮ অক্টোবর, ২০২৩ ১৯:৪৫

৭৭১ রানের ম্যাচ, ৫ রানে হার নিউ জিল্যান্ডের

টার্গেট ৩৮৯; বিশ্বকাপে আগে এত রান তাড়া করে জেতেনি কেউ। জিতলে গড়তে হতো ইতিহাস। নিউ জিল্যান্ড সেই ইতিহাসের কাছাকাছি পৌঁছেও গিয়েছিল। তবে শেষটা হয়নি। ৫ রানে ম্যাচ জিতেছে অস্ট্রেলিয়া।

শেষ ওভারে রান লাগবে ১৯। স্ট্রাইকিং প্রান্তে ট্রেন্ট বোল্ট। অপর প্রান্তে জিমি নিশাম। বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রানের ম্যাচে শেষ ওভারে জমল এবারের বিশ্বকাপের এখন পর্যন্ত সবচেয়ে রোমাঞ্চকর ম্যাচ। বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে প্রায় জিতেই গিয়েছিল নিউ জিল্যান্ড। ৩৮৯ রান তাড়া করে খুব কাছে গিয়েও মাত্র ৫ রানে হেরে গেছে গত বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলা দলটা।

এই বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার ৩৪৪ রান তাড়া করে জিতে রেকর্ড গড়েছিল পাকিস্তান। সেই রেকর্ডটা আজ রেকর্ডটা আজ নিউ জিল্যান্ডের কাছে হারাতে বসেছিল পাকিস্তান। অস্ট্রেলিয়ার ৩৮৯ রানের লক্ষ্য তাড়া করে শেষ ওভারের রোমাঞ্চ শেষে ৯ উইকেটে ৩৮৩ করে থেমেছে নিউ জিল্যান্ড।

হারলেও এই ম্যাচে বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রানের ম্যাচ দেখেছে ক্রিকেট বিশ্ব। এই আসরেই এক ম্যাচে ৭৫৪ রান করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা-শ্রীলঙ্কা। সেই রান ছাড়িয়ে ধর্মশালায় রান হয়েছে ৭৭১। দুই ইনিংস মিলিয়ে ছক্কা হয়েছে ৩২টি। শেষ দুই বলে ৭ রান করতে পারলে বিশ্বকাপে অন্য উচ্চতায় চলে যেত নিউ জিল্যান্ড।

বিশ্বকাপে কখনো ৩০০ কিংবা এর চেয়ে বেশি রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড নেই নিউ জিল্যান্ডের। সেই দলটাই আজ ট্রান্স-তাসমান লড়াইয়ে কাঁপিয়ে দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়াকে। দুই দলের লড়াইয়ে রোমাঞ্চের আভাস মিলছিল, এবং হলোও তাই।

কাঁধের ওপর ৩৮৯ রানের বিশাল চাপ, যেমনটা খেলা দরকার ছিল সেভাবেই খেলল গত বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলা দলটা। রান এল নিউ জিল্যান্ডের ওভার প্রতি ৬ করে, আবারও উইকেটও হারিয়েছে সমানতালে।

ধর্মশালার আউটফিল্ড নিয়ে সমালোচনা থাকলেও উইকেট ব্যাটারদের জন্য সুপ্রসন্ন। অস্ট্রেলিয়ার উদ্বোধনী জুটি এই উইকেটে ১১৫ বলে রান তুলেছে ১৭৫। নিউ জিল্যান্ডের দুই ওপেনারও ৪৪ বলে রান করলেন ৬১। সেই জুটি ভাঙলেন জশ হ্যাজেলউড, ১৭ বলে ২৮ করে মিচেল স্টার্ককে ক্যাচ দিলেন ডেভন কনওয়ে। হ্যাজেলউড-স্টার্ক মিলে ফেরালেন আরেক ওপেনার উইল ইয়ংকেও, ৩৭ বলে ৩২ করেন তিনি। ৭২ রানে কিউইদের দুই ওপেনারের বিদায়।

৭২ থেকে ১৬৮ রান পর্যন্ত নিউ জিল্যান্ড এল রাচিন রবীন্দ্র ও ড্যারিল মিচেলের ৯৬ রানের জুটিতে। ৫১ বলে ৫৪ বলে করে মিচেল ফিরলেন অ্যাডাম জাম্পার বলে ক্যাচ দিয়ে। এই ক্যাচও পড়েছে স্টার্কের হাতেই। সঙ্গী হারিয়ে লড়াইটা একাই চালিয়ে গেলেন রাচিন রবীন্দ্র।

মিচেল ফেরার পর টম লাথাম, গ্লেন ফিলিপস ও জিমি নিশামকে নিয়ে যতটুকু লড়ার লড়ে গেলেন রাচিন। লাথামকে (২১) নিয়ে ৫৪, ফিলিপসকে নিয়ে ৪৩ রানের জুটিতে নিউ জিল্যান্ডকে ম্যাচেই রেখেছিলেন রাচিন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বিশ্বকাপে তুলে নেন নিজের দ্বিতীয় সেঞ্চুরিও। ৪৯ বলে ফিফটি, সেখান থেকে পরের ২৮ বলে সেঞ্চুরির দেখা পান রাচিন। ৫ ছক্কা ও ৯ চারে সাজানো ১১৬ রানের ইনিংস খেলা রাচিন যতক্ষণ ছিলেন গলার কাঁটা হয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার। প্যাট কামিন্সকে লং অফ দিয়ে ছক্কা মারতে গিয়ে মারনাস লাবুশেনের ক্যাচ হয়ে ৮৯ বলে থামেন কিউইদের ভরসা।

রাচিন ফেরার পর ম্যাচটা হেলে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার দিকে। সেখান থেকেই ম্যাচটা জমিয়ে তুললেন জিমি নিশাম। মিচেল স্যান্টনারকে (১৭) নিয়ে ২৭ ও ম্যাট হেনরিকে (৯) নিয়ে ২৬ রানের জুটিতে কিউদের লড়াইয়ে রাখেন নিশাম। শেষ দুই ওভারে নিউ জিল্যান্ডের জিততে রানের দরকার ছিল ৩২।

ট্রেন্ট বোল্টকে নিয়ে ৪৯তম ওভারে ১৩ রান তুলেছিলেন নিশাম। শেষ ওভারে দরকার ছিল ১৯। প্রথম বলে সিঙ্গেল নিলেন বোল্ট। স্ট্রাইকিং প্রান্তে নিশামকে দেখে পরের বলে ওয়াইডসহ ৫ রান দিলেন মিচেল স্টার্ক। তাতে সমীকরণ দাঁড়াল ৫ বলে ১৩। পরের তিন ৬ রান নিলেন নিশাম। এক ফাঁকে ফিফটিও তুলে ফেললেন কিন্তু উদ্‌যাপন করলেন না। ওভারের পঞ্চম বলে দুই রান নিতে রান আউট হলেন ৩৯ বলে ৫৮ রান করা নিশাম। শেষ বলে নিউ জিল্যান্ডের সমীকরণ দাঁড়াল ১ বলে ৬। চোট নিয়ে ব্যাট করতে নামা লোকি ফার্গুসন কোনো রান করতে না পারায় ৩৮৮ করে অস্ট্রেলিয়া জয় পেল মাত্র ৫ রানের!

টস জিতে ফিল্ডিংয়ে নেমে ট্রাভিস হেড ও ডেভিড ওয়ার্নারের তাণ্ডবে পড়েছিল নিউ জিল্যান্ড। টি-টোয়েন্টির গতিতে দুই অজি ওপেনার ১৯ ওভারে রান তোলেন ১৭৫। চোট কাটিয়ে বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেই ৬৭ বলে ১০৯ রানের ইনিংস খেলেছেন হেড, ১০ চারের সঙ্গে ৭ ছক্কা এসেছে তাঁর ব্যাট থেকে। ৬৫ বলে ৮১ রানের ইনিংস খেলেছেন ছন্দে থাকা ওয়ার্নার।

মাঝে রানের গতি কমে এলেও শেষ ১০ ওভারে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের ২৪ বলে ৪১, জশ ইংলিসের ২৮ বলে ৩৮ ও অধিনায়ক প্যাট কামিন্সের ১৪ বলে ৩৭ রানে রানের পাহাড় গড়ে অস্ট্রেলিয়া। ওয়ানডেতে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে এটি অজিদের সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। এই ম্যাচে ২০ ছক্কার মার এসেছে অজিদের ব্যাট থেকে। বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে কেবল বেশি ছক্কা আছে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের ইনিংসে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত