০১ ডিসেম্বর, ২০২৩ ১৮:৫৪
‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’ স্লোগানে মুখরিত সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের গ্যালারি। মাঠের ভেতরে খেলোয়াড়দের মনে বয়ে বেড়াচ্ছে আনন্দের সুবাতাস। তাইজুল ইসলাম বল করতে এলেই যেন নড়েচড়ে বসছেন নিউজিল্যান্ডের ব্যাটাররা। অবশ্য লাভ হয়নি। কেবল ড্যারিল মিচেল বাদে অন্যরা মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর আগেই হাঁটা ধরছেন প্যাভিলিয়নে।
তাইজুলের একেকটা টার্নিং বল যেন ব্যাটে ছুঁলেই বিপদ। ব্যাটে না লাগলেও স্বস্তির ছিল না কোনও ডেলিভারি। তার সঙ্গে নাঈম হাসান, মেহেদী হাসান মিরাজও বাহবা পাওয়ার মতো বল করেছেন অন্য প্রান্ত থেকে। নিউজিল্যান্ড ব্যাটিংয়ে নামার পর থেকে উজ্জীবিত নাজমুল হোসেন শান্তরা। ফিল্ডিংয়ে উপভোগ্য দেড় সেশন কাটালো বাংলাদেশ। শেষ দিন কত তাড়াতাড়ি ঐতিহাসিক জয়ের উৎসবে নামা যায়, সেই পরিকল্পনা করবে তারা আজ রাতে।
দিনের শুরুটা হয়েছিল হতাশা দিয়ে। টেস্টে অভিষেকেই প্রথম অধিনায়ক হিসেবে সেঞ্চুরি করা শান্ত এক রানের বেশি যোগ করতে পারেননি। ১০৫ রান করে টম ব্লান্ডেলের হাতে ক্যাচ দেন। টিম সাউদির গতির কাছে বাংলাদেশি অধিনায়ক হার মানার পর স্পিনারদের আধিপত্যের শুরু।
মুশফিকুর রহিম হাফ সেঞ্চুরি করে বেশিক্ষণ উইকেট বাঁচাতে পারেননি। লাঞ্চের আগে ব্যাটারদের আসা যাওয়ার মিছিলে যোগ দেন তিনি ৬৭ রান করে। অবশ্য মেহেদী হাসান মিরাজের সৌজন্যে প্রথম সেশনেই লিড তিনশ ছাড়িয়ে।
চা বিরতির পর বাংলাদেশ শেষ তিন উইকেট হারায় মাত্র ২৭ রানে। মিরাজ ৫০ করে অপরাজিত ছিলেন। বাংলাদেশ ৩৩৮ রানে গুটিয়ে গিয়ে যেন খানিকটা অস্বস্তিতে ছিল। সিলেটের উইকেটে কত রান নিরাপদ হতে পারে সেটা তাদের জানা ছিল না।
৩৩২ রানের লক্ষ্য পায় নিউজিল্যান্ড। শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপ নিয়ে হয়তো আশাবাদী ছিল তারা। কিন্তু স্পিনারদের রাজত্বের দিনে প্রথম আঘাত হানেন শরিফুল ইসলাম। ইনিংসের ষষ্ঠ বলে টম ল্যাথামের দুর্দান্ত ক্যাচ নেন নুরুল হাসান সোহান। রানের খাতা তখনও খোলেনি নিউজিল্যান্ড।
আগের ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান কেন উইলিয়ামসন (১১) কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাইজুলের কাছে এলবিডব্লিউ। হেনরি নিকলসকে ২ রানে নাঈমের ক্যাচ বানান মিরাজ। শর্ট লেগে ডেভন কনওয়ের দুর্দান্ত ক্যাচ নেন শাহাদাত হোসেন দীপু। ম্যাচে দ্বিতীয়বারের মতো তাকে ক্যাচ দেন এই কিউই ব্যাটার। উইকটে নেন তাইজুল। পঞ্চাশের আগেই নেই চার উইকেট।
তাইজুল আরেকবার আঘাত হানেন। টম ব্লান্ডেল (৬) ক্যাচ দেন সোহানকে। ৬০ রানে ৫ উইকেট নেই নিউজিল্যান্ডের।
মিচেলের সঙ্গে সর্বোচ্চ ২১ রানের জুটি গড়ে মাঠ ছাড়েন গ্লেন ফিলিপস। নাঈমের শিকার তিনি ১২ রান করে। দলীয় স্কোর একশ পার হওয়ার পর সাত নম্বর উইকেটের পতন ঘটে। কাইল জেমিসনকে নিজের চতুর্থ শিকার বানান তাইজুল।
ইশ সোধি এলবিডব্লিউর রিভিউ না নিলে অষ্টম উইকেটের স্বাদ নিয়ে দিন শেষ করতে পারতো বাংলাদেশ। ৭ উইকেটে ১১৩ রান নিউজিল্যান্ডের।
একপ্রান্ত আগলে রাখা মিচেল জেনেই গেছেন, হার সময়ের ব্যাপার মাত্র। তবুও হাফ সেঞ্চুরির লক্ষ্য তাকে উজ্জীবিত রাখছে। এজন্য করতে হবে আর ৬ রান। জয়ের অপেক্ষায় থাকা তাইজুলও ব্যক্তিগত অর্জনের অপেক্ষায়, একটি উইকেট নিলেই ১২ বার এক ইনিংসে পাঁচ উইকেটের কীর্তি গড়বেন বাংলাদেশি স্পিনার।
এই ম্যাচ জিতলে ইতিহাস গড়বে বাংলাদেশ। প্রথমবার দেশের মাটিতে নিউজিল্যান্ডকে টেস্টে হারানোর স্বাদ পাবে তারা। এখন অপেক্ষা রাত পোহানোর।
আপনার মন্তব্য