বোরিয়া মজুমদার, বিবিসি অবলম্বনে

০৯ মার্চ, ২০১৬ ১৪:৪৩

যেসব বোলার ম্যাচ জিতিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০১৬

টোয়েন্টি ২০ ক্রিকেট এত জনপ্রিয় হয়েছে, তার কারণ মানুষ সম্ভবত ব্যাটিংটা দেখতে ভালবাসেন।

১৫০ থেকে ২০০ রান বা ১৮০-২২০ হবে, ব্যাটসম্যানরা একের পর এক চার, ছয় মারবেন, দর্শকরা প্ল্যাকার্ড নিয়ে উদ্দাম নাচ করবেন, এঞ্জয় করবেন – এটাই তো ফরম্যাট।

কিন্তু তা সত্ত্বেও কয়েকজন বোলার আছেন, যাঁরা যেকোনও মুহূর্তে খেলার রঙ পাল্টে দিতে পারেন।

আমি ডেল স্টেনের কথা বলব। তাঁর চার ওভারে দশ রান – তিন উইকেট: এটা যেকোনও প্রতিপক্ষ টিমের মেরুদন্ড ভেঙে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট।

তাঁর হাতে সব ধরনের অস্ত্র আছে - ইয়র্কার আছে, সুইং আছে! সব মিলিয়ে তিনি একজন পারফর্মার।

ভারতের দিকে যদি তাকাই আমি রভিচন্দ্রন অশ্বীনের কথা বলব বিশেষ করে।

এক তো তিনি ঘরের মাঠে খেলবেন। তাঁর হাতে সব ধরনের বৈচিত্র্য আছে – ক্যারম বল, অফ স্পিন, দুসরা, লুপ, সোজা হয়ে যাওয়া ডেলিভারি – সব। আর এখন উনি যে পর্যায়ে রয়েছেন – ওঁনার আত্মবিশ্বাস চূড়ান্ত।

তাই ভারতের হয়ে অশ্বীন নি:সন্দেহে দারুণ ইম্প্যাক্ট প্লেয়ার।

ইংল্যান্ডের স্টুয়ার্ট ব্রডের কথা বলব। চার ওভারের মধ্যে যে কোনও খেলার মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন তিনি।

অস্ট্রেলিয়ার ক্ষেত্রে হয়তো বোলিংটা একটু দুর্বল জায়গা।

এখানেই যদি মিচেল স্টার্ট থাকতেন তাহলে আমি চোখ বুজে বলে দিতাম যে এই টুর্নামেন্টের সেরা বোলার মিচেল স্টার্ট। সেজন্যই বোধহয় অস্ট্রেলিয়া একটু হলেও পিছিয়ে।

তবে এঁরা ছাড়াও আরও বেশ কিছু ভাল বোলার খেলবেন এই টুর্নামেন্টে।

ভারতের মাটিতে খেলা হবে – তাই স্পিন-ই আসল খেলাটা খেলবে।

স্পিন নি:সন্দেহে এই ওয়ার্ল্ড টি২০-তে এক বিরাট ভূমিকা পালন করবে।

টীম নির্বাচন দেখলেই বোঝা যাবে যে স্পিন কতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।

প্রত্যেকটা টিমে দুই, তিন বা চারজন করে স্পিনার নেওয়ার চেষ্টা হয়েছে।

ভারতের দিকে যদি তাকাই, রভীন্দ্র জাডেজা, হরভজন সিং, রভিচন্দ্রন অশ্বীন রয়েছেন। নিউজিল্যান্ড নেথান ম্যাককালাম সহ তিনজন স্পিনার ইতিমধ্যেই নিয়েছে।

ইংল্যান্ডের মঈন আলি, অস্ট্রেলিয়ার ক্যামেরন বয়েস এঁরা প্রথম টিমে থাকবেনই।

শ্রীলঙ্কার বোলিংয়ে সাচিত্রা সেনানায়কা তো আছেনই, এর ওপরে লাসিত মালিঙ্গা যদি ফিট হয়ে যান এরমধ্যে, তাহলে তিনিও থাকবেন ওদের বোলিং আক্রমণে।

লাসিত মালিঙ্গা তো অনেক ধরণের বল করতে পারেন। মালিঙ্গা থাকা স্বত্ত্বেও – শ্রীলঙ্কা দলে স্পিনারদের একটা আধিক্য দেখব আমরা।

বাংলাদেশের সাকিব আল হাসানও কিন্তু বোলিংয়ে ভাল প্রভাব ফেলার ক্ষমতা রাখেন।

বাংলাদেশ টিমের সবচেয়ে প্রতিভাবান বোলারদের মধ্যে অন্যতম অবশ্যই মুস্তাফিজুর রহমান। তিনি স্লোয়ার বল খেলেন, ইয়র্কার করেন এবং হাতের তালুটা পেছন দিকে রেখে বলটা ছোঁড়েন।

২০১৫ সালে ভারত তাঁর কাছে নাস্তানাবুদ হয়েছিল। তবে টি-২০-তে তিনি কীধরনের প্রভাব রাখবেন সেটা অনেকেই এখনও আঁচ করে উঠতে পারছে না।

মোটের ওপরে এই পরিবেশে স্পিনারদের একটা বড় ভূমিকা থাকবে।

পেসারদের ভূমিকাও থাকবে, তবে স্পিনারদের দায়িত্ব কিছুটা হলেও বেশি হবে।

তাই প্রায় সব দলেই অন্তত দুজন করে স্পিনার অতি অবশ্যই খেলবেন।

ইয়র্কারের অস্ত্র বা স্লো বলের বৈচিত্র্য থাকলেই কী খেলা জমিয়ে দিতে পারবেন বোলাররা?

ইয়র্কার থাকতেই হবে। সবথেকে ভাল সাম্প্রতিক উদাহরণ হল ভারতের অস্ট্রেলিয়া সফর।

ওয়ান ডে সিরিজটা চার-একে ভারত হারল।

প্রত্যেকটা খেলায় ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা প্রায় তিনশো করা স্বত্ত্বেও অস্ট্রেলিয়া খুব সহজে সেই রান তুলে ফেলছিল, কারণ, উমেশ যাদব, ঈশান্ত শর্মার মতো ভারতীয় বোলাররা ইয়র্কার দিতে পারছিলেন না।

ছবিটা সম্পূর্ণ পাল্টে গেল যখন নতুন জসপ্রীত বুমরা দলে এলেন।

বুমরা স্লগ ওভারে জায়গায় ইয়র্কারটা রাখতে পারছিলেন।

ডেল স্টেন আজ এই জায়গায় এসেছেন কারণ উনিও ইয়র্কার জায়গায় রাখেন।

মিচেল স্টার্ককে অস্ট্রেলিয়া মিস করবে – কারণ ওঁনার ইয়র্কারগুলো বিধ্বংসী।

আবার যদি জেমস ফকনারকে দেখি, এক্সপ্রেস পেসে বল করেন না, তবু এত গুরুত্বপূর্ণ একজন বোলার হয়ে উঠতে পেরেছেন কারণ ব্যাক অফ দা হ্যান্ড থেকে স্লোয়ার দিতে পারেন।

আশিষ নেহেরাও ব্যাক অফ দা হ্যান্ড থেকে স্লোয়ার দিতে পারেন।

প্রত্যেকটা টিমে অন্তত একজন দুজন করে বোলার আছেন, যাঁরা ইয়র্কারটা ঠিক জায়গায় রাখতে পারেন।

এই যে বলের বৈচিত্র্য এটা টোয়েন্টি-২০ ক্রিকেটে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

টেস্ট বা ৫০ ওভারের ক্রিকেটের থেকেও এই বৈচিত্র্যের প্রয়োজনীয়তা টি২০ তে অনেক বেশি।

পেস আর স্পিন দুদিকেই ভারসাম্য রয়েছে, এরকম বোলিং আক্রমণ চালাতে পারে যে টীম- একটু ঝুঁকি নিয়েই বলব - সেটা সম্ভবত ভারত।

ভারতই সব থেকে ভারসাম্য বজায় রেখে বোলিং আক্রমণ চালাতে পারবে নিজের দেশের মাটিতে।

যদিও ভারতের ফাস্ট বোলিং নিয়ে একটু সন্দেহ রয়েছে, কারণ মুহম্মদ শামির চোট রয়েছে।

তবে যদি উনি ফিট হয়ে যান, তাহলে মুহম্মদ শামি, আশিষ নেহেরা, জসপ্রীত বুমরা – এঁদের বোলিংয়ে পেস আছে, অভিজ্ঞতা আছে আর এঁরা ইয়র্কার দিতে পারেন।

স্পিনে তো প্রচুর বৈচিত্র্য রয়েছে – রভিচন্দ্রন অশ্বীন, হরভজন সিং আর রভীন্দ্র জাডেজা।

দক্ষিণ আফ্রিকাতে ডেল স্টেন, মর্ণে মর্কেলের সঙ্গে ইমরান তাহিরের বলে স্পিনের বৈচিত্র আছে। তাই তাদের বোলিং স্কোয়াডও ভাল।

সেদিক থেকে দেখতে গেলে অস্ট্রেলিয়ার স্পিনটা একটু দুর্বল।

আমার মতে এই কয়েকটা টিমের প্রত্যেকটা দলের ভারসাম্যই ভাল।

কিন্তু আমি ভারতকে এগিয়ে রাখলাম কারণ তারা দেশের মাটিতে খেলবে।

এখানকার মাঠ আর পরিবেশ তাদের চেনা, স্থানীয় দর্শকদের সামনে খেলবে তারা। এইসব মিলিয়েই তাদের কম্বিনেশনটা অন্যদের থেকে একটু এগিয়ে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত