ক্রীড়া প্রতিবেদক

১৯ মার্চ, ২০১৬ ২৩:২৯

এমসিজি থেকে চেন্নাই, ক্রিকেটে ফের ১৯ মার্চের ছোবল!

২০১৫ ও ২০১৬। কাকতালীয়ভাবে টানা দুই বছরের একটি নির্দিষ্ট দিন বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে হতাশার দিন হয়ে গেল।

না, নিজেদের ব্যর্থতার জন্য নয়। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ চলাকালীন বাংলাদেশের বিপক্ষে যাওয়া বিতর্কিত ঘটনায় আলোচিত হয়ে থাকল এই ১৯ মার্চ দিনটি। বিতর্কে ভরা এই দিনটিকে এখন থেকে ক্রিকেটের 'কালো দিন' বা 'ব্লাক ডে অব টাইগার ক্রিকেট" নামে আখ্যা দিলেও হয়ত ভুল কিছু হবেনা।  

১৯ মার্চ, ২০১৫, বৃহস্পতিবার। এমসিজি, অস্ট্রেলিয়া। বিশ্বকাপ ক্রিকেটের কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি বাংলাদেশ- ভারত।

টস জিতে ভারত ব্যাট করতে নেমে রোহিত শর্মার সেঞ্চুরিতে করে ৩০২ রান। একটা ম্যাচে তিন শতাধিক রান হবে, হতেই পারে। কিন্তু এ রানের সঙ্গে যদি যোগ হয় বাজে আম্পায়ারিং, অথবা সোজা কথায় আম্পায়ারের বদান্যতা তখন সেটা উল্লেখের দাবি রাখে।


সে ম্যাচে রোহিত শর্মা খেলেছিলেন ১৩৭ রানের এক ইনিংস। অথচ ৯০ রানে থাকার সময়ে ম্যাচের ৪০তম ওভারে রুবেল হোসেনের হাঁটু সমান উচ্চতার ফুলটস এক বল পেয়ে রোহিত শর্মা হাঁকিয়েছিলেন, এবং বল গিয়ে জমা পড়ে ফিল্ডারের হাতে; ক্যাচ আউট। কিন্তু না! এ বলকে "নো-বল" ডেকে বসেন আম্পায়ার আলিম দার। পরে টেলিভিশন আম্পায়ার স্টিভ ডেভিস সবাইকে অবাক করে নো বলে বহাল রাখেন।  ফলে বেঁচে যান রোহিত শর্মা। এরপর স্কোরবোর্ডে যোগ করেন আরও ৪৭ রান।



আম্পায়ার আলিম দার ও ইয়ান গোল্ডের এমন বাজে আম্পায়িং দেখে ধারাভাষ্যবক্সে থাকা শ্যেণ ওয়ার্ণ প্রশ্ন করে বলেন এই বল কীভাবে নো-বল হয়, এটা কোনক্রমেই কোমরের ওপরে ছিল না। আলিমদারের মতো একজন আম্পায়ারের কাছ থেকে এমন সিদ্ধান্ত আসা হতাশাজনক। বলটা তখন নিচু হয়ে নামছিল।

ভারতীয় সাবেক ব্যাটসম্যান ভিভিএস লক্ষণ টুইটারে লিখেন, 'খারাপ সিদ্ধান্ত। বলটি অবশ্যই কোমরের ওপরে ওঠেনি। রোহিতের ভাগ্যপ্রসূত সুযোগ। বাড়তি ২০ রান পাওয়ার জন্য এটা ব্যাবধান গড়ে দিতে পারে।'

এর বাইরে ধারাভাষ্যে থাকা অন্যান্যরাও বাজে আম্পায়ারিংয়ের একইভাবে সমালোচনা করেন।

একই ম্যাচে রেশ রায়নার প্যাডে বল লাগা মাত্র মাশরাফি আবেদন করেন, আম্পায়ার ইয়ান গৌল্ড আউট না দিলে বাংলাদেশ রিভিউয়ে যায়। রিভিউয়ে দেখা যায় বল লেগস্ট্যাম্প বরাবর ছিল, উইকেটেই আঘাত হানত কিন্তু সে রিভিউয়েও সাড়া দেননি আম্পায়ার। আর বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের সময়ে বিশ্বকাপের পর পর দুই ম্যাচে দুই সেঞ্চুরি করে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের আউট নিয়েও বাজে সিদ্ধান্ত দেন আম্পায়ারেরা। রিয়াদকে বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ ধরেন শিখর ধাওয়ান, অথচ দেখা যায় ক্যাচ ধরার সময়ে বল ছুঁয়েছিল বাউন্ডারি লাইন। নিয়ম অনুযায়ি যখন এটা ছক্কা হওয়ার কথা, অথচ দেখা গেল রিয়াদকে আউট দেওয়া হয়েছে।
 
বিষয়টি কেবল থেকে থাকে নি মাঠ ও মাঠের বাইরেও গড়ায়। প্রতিবাদ করেন আইসিসির তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আহম মুস্তাফা কামাল। সমালোচনার এক পর্যায়ে আইসিসিকে 'ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল' নামেও অভিহিত করেন। মুস্তাফা কামালের অভিযোগের তীর ছিল তৎকালীন আইসিসির চেয়ারম্যান শ্রীনিবাসনের দিকে। এর জের ধরে বিশ্বকাপের ফাইনালে নিয়ম-নীতি ভঙ্গ করে বিজয়ী দলের হাতে পুরষ্কার তুলে দেন শ্রীনি। যদিও এটা প্রেসিডেন্টেরই দেওয়ার কথা ছিল।

এমসিজির কোয়ার্টার ফাইনালের সে ম্যাচে বাংলাদেশ হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিয়েছিল। সে ম্যাচের আম্পায়ারিং ও মাঠের বাইরের অন্যান্য বিষয়গুলোর কারণে ১৯ মার্চ দিনটি অনেকেই বাংলাদেশ ক্রিকেটের 'কালো এক দিন' বলে অভিহিত করে থাকেন। তবে এটাকে স্রেফ এক ম্যাচ বলে অনেকেই কালো দিন মানতে না চাইলেও ২০১৬-এর ১৯মার্চ আবারও দুঃসংবাদ নিয়ে এসেছে বাংলাদেশের ক্রিকেটে।

১৯ মার্চ, ২০১৬, শনিবার। আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। এবার এক দুঃসংবাদ নিয়ে এসেছে। এবার বিশ্বকাপের মাঝপথে বাংলাদেশের পেস বোলার তাসকিন আহমেদ ও আরাফাত সানিকে সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে আইসিসি। ভারতের চেন্নাইয়ের এক ল্যাবে সন্দেহজনক বোলিং পরীক্ষার ফলাফলে এই দুই বোলারকে সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করে বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়েন।

আইসিসি তাদের প্রতিবেদনে ব্যাখ্যা দিয়ে বলে, "আরাফাত সানির বেশিরভাগ বলে তাঁর হাত ১৫ ডিগ্রির বেশি বাঁকে"

তাসকিন সম্পর্কে বলা হয়, "তাসকিনের সব বল বৈধ নয়"।

অথচ বোলিং অ্যাকশন সম্পর্কিত আইসিসির আইনের ২.২.৬ ধারায় বলা আছে, "ল্যাব পরীক্ষায় বোলাররা নির্দিষ্ট সেসব ডেলিভারিই করে দেখাবেন যে ডেলিভারির জন্য আম্পায়াররা তাকে সন্দেহ করেছেন।"

কিন্তু মাঠের দুই আম্পায়ার তাসকিনকে নির্দিষ্ট কোন ডেলিভারির জন্য অভিযুক্ত করেননি। পরীক্ষায় তাসকিনের স্টক ডেলিভারি ও ইয়র্কারে কোন সমস্যা পাওয়া যায়নি। তাঁর ৯ টি বাউন্সারের মধ্যে ৩টিতে সমস্যা পাওয়া যায় বলে জানানো হয়েছে। অথচ নেদারল্যান্ডের সাথে ম্যাচে তাসকিন কোন বাউন্সারই করেন নি।

আইসিসির ২.২.৬ ধারাতেই  বলা আছে, "যে ম্যাচে সন্দেহে পড়বেন সেই ম্যাচের করা ডেলিভারির বাইরে অন্য কোন ডেলিভারি এই পরীক্ষায় অন্তর্ভুক্ত নয়"।

তারপরও  তাসকিনের বাউন্সারে যদি সমস্যা থেকেও থাকে, আইসিসির নিয়ম অনুযায়ীই এসব ক্ষেত্রে বলা আছে স্টক ডেলিভারির বাইরে অন্য ডেলিভারির জন্য বোলারকে সতর্ক করে দেয়াই সর্বোচ্চ ব্যবস্থা। সতর্ক করে দেয়ার পর যদি বোলার পরে আর কোন ম্যাচে এমন ভুল করেন তবেই ব্যবস্থা নেয়া যাবে।

তাসকিনের বোলিং অ্যাকশন নিয়ে মাঠের দুই আম্পায়ারের সন্দেহ থেকে শুরু করে ল্যাব পরীক্ষার পর নেয়া কোন সিদ্ধান্তেই ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা নিজেদের নিয়ম নিজেরাই অনুসরণ করেনি।

এখানে উল্লেখ্য যে, নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচের দিন তাসকিন কোন বাউন্সার করেন নি, অথচ ভারতের চেন্নাইয়ের সে ল্যাবে তাসকিনকে ৯টি বাউন্সার করানো হয়। আর অভিযোগ উত্থাপন করা দুই আম্পায়ার হচ্ছেন ভারতের এস রাবি ও অস্ট্রেলিয়ার রড টাকার।

১৯ মার্চ ২০১৫, ১৯ মার্চ ২০১৬- ব্যবধানটা এক বছরের হলেও ক্ষতিগ্রস্ত দলের নাম বাংলাদেশ। আর স্থান, ভবিষ্যৎ প্রতিপক্ষ ও আম্পায়ার  হিসেবে জড়িয়ে আছে ভারত ও অস্ট্রেলিয়া।

২১ মার্চ বেঙ্গালুরুতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাঠে নামবে বাংলাদেশ, আর ২৩ মার্চ নয়া দিল্লিতে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ দলের নাম ভারত।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত